Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
পিজি কাণ্ড

ধৃতদের হাজিরা নিয়ে বিধি ভেঙে বিপাকে পুলিশ

এসএসকেএম হাসপাতালের মাদক কাণ্ডে ধৃত দুই যুবকের জেল-হাজত হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে পুলিশ-প্রশাসন। সমস্যা দু’দিক থেকে। প্রথমত, ধৃতেরা জেল-হাজতে চলে যাওয়ায় পুলিশ তাদের জেরা করার সুযোগ পাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, ধৃতদের আদালতে তুলতে গিয়ে থানা তথা তদন্তকারী অফিসার কেন মাদক মামলার নিয়মবিধি ভাঙলেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৮:৪১
Share: Save:

এসএসকেএম হাসপাতালের মাদক কাণ্ডে ধৃত দুই যুবকের জেল-হাজত হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে পুলিশ-প্রশাসন। সমস্যা দু’দিক থেকে। প্রথমত, ধৃতেরা জেল-হাজতে চলে যাওয়ায় পুলিশ তাদের জেরা করার সুযোগ পাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, ধৃতদের আদালতে তুলতে গিয়ে থানা তথা তদন্তকারী অফিসার কেন মাদক মামলার নিয়মবিধি ভাঙলেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আজ, সোমবার আদালতে আর্জি জানাতে চলেছে পুলিশ। দ্বিতীয়ত, ধৃতদের আদালতে পেশের ক্ষেত্রে নিয়মবিধি ভাঙার জন্য কোন স্তরের কোন কোন পুলিশকর্মী দায়ী, তাঁদের চিহ্নিত করে জবাবদিহি চাওয়ার উদ্যোগ চলছে। আদালতে ধৃতদের তোলার সময় নিয়মবিধি অনুযায়ী কাগজপত্র পেশ না-করায় শনিবারেই অবশ্য এক প্রস্ত তিরস্কৃত হয়েছেন এই মামলার তদন্তকারী অফিসার।

কোন নিয়মবিধি ভাঙা হয়েছে?

পুলিশি সূত্রের খবর, মাদক আইনে কাউকে গ্রেফতার করার পরে আদালতে তুলতে হলে সংশ্লিষ্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার বা এসি-র একটি ‘ফরওয়ার্ডিং লেটার’ বা প্রেরণ-পত্র প্রয়োজন। কিন্তু এসএসকেএমের মাদক কাণ্ডে ধৃত অভীক চৌধুরী এবং মহম্মদ ইশাককে শনিবার অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের ওই চিঠি ছাড়াই আলিপুর আদালতে তোলা হয়। এবং এই কারণেই বিচারক ধৃতদের ৩ মার্চ অর্থাৎ আজ, সোমবার পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

অথচ মাদক চক্রের হালহকিকত জানার জন্যই ধৃতদের আরও জেরা করা দরকার বলে মনে করছে পুলিশ। কারণ, মহানগরী এবং উপকণ্ঠে দীর্ঘদিন ধরে হেরোইন, চরস-সহ হরেক কিসিমের মাদকের রমরমা কারবার চললেও হস্টেলে মাদকের প্রভাবে হবু ডাক্তারের মৃত্যুর মতো ঘটনা সাম্প্রতিক কালে ঘটেনি। রাজ্যের একমাত্র সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের হস্টেলে মাদকসেবনে মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘটনার ছ’দিনের মাথায় ওই ঘটনায় দু’জনকে ধরতে পারলেও পুলিশ তাদের বেশি দিন নিজেদের হেফাজতে রাখতে পারেনি। পুলিশের ধারণা, ওই দু’জনকে জেরা বিশদ ভাবে জেরা করতে পারলে কলকাতা ও শহরতলিতে মাদক কারবারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে। কিন্তু ধৃতেরা জেল-হাজতে চলে যাওয়ায় শনি ও রবিবার পুলিশ তাদের জেরা করার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। বিপাকে পড়ে গিয়েছে তারা।

এমন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় ধৃতদের কী ভাবে জেল-হাজতে ঠাঁই হল, তা জানতে আসরে নামেন কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারাও। খোঁজ নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, শনিবার দু’জনকে আদালতে তোলার সময় অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের ফরওয়ার্ডিং লেটার ছিল না। কেন ওই চিঠি ছাড়াই ধৃতদের আদালতে পেশ করা হল, তদন্তকারী অফিসারের কাছে তার ব্যাখ্যা চাইছেন তাঁরা। এই তদন্তে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি এবং এসি-র তরফে কোনও গাফিলতি রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।

পিজি-র হস্টেলে অতিরিক্ত মাদক সেবনের জেরে গত ২২ ফেব্রুয়ারি সপ্তর্ষি দাস নামে এক জুনিয়র ডাক্তারের মৃত্যু হয়। অসুস্থ হয়ে পড়েন মহম্মদ শাহবাজ সিদ্দিকী নামে তাঁর এক সহপাঠী। ওই দুই ইন্টার্ন-সহ জুনিয়র ডাক্তারদের মাদক সরবরাহের অভিযোগে শুক্রবার রাতে অভীক ও ইশাককে গ্রেফতার করে ভবানীপুর থানার পুলিশ। শনিবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হলেও এসি-র ‘ফরওয়ার্ডিং লেটার’ না-দেওয়ায় তিরস্কার করা হয় তদন্তকারী অফিসারকে। ওই দিনই পুলিশের তরফে আদালতে জানানো হয়, সোমবার এসি এবং ডিসি-র চিঠি বিচারকের কাছে পেশ করা হবে।

এক পুলিশকর্তা রবিবার বলেন, “কেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের ‘ফরওয়ার্ডিং লেটার’ ছিল না, তদন্তকারী অফিসারের কাছে আমরা তা জানতে চাইব। ব্যাখ্যা চাওয়া হবে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি-র কাছেও। যদি দেখা যায় কারও গাফিলতি রয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, অভীক শুধু সপ্তর্ষিকে নয়, পিজি-র আরও অনেক জুনিয়র ডাক্তারকে নিয়মিত মাদক জোগাত। জুনিয়র ডাক্তারেরা ফোনেই মাদকের বরাত দিতেন বলে জেরায় জানিয়েছে ওই যুবক। তদন্তকারীরা জানান, অভীকের মোবাইলের সূত্রে অনেক গ্রাহকের নাম জানা গিয়েছে। অনেক গ্রাহকের নাম ও পরিচয় দেখে তাঁরা হতবাক। তাঁরা জানান, সমাজের সব স্তরের মানুষকেই মাদকের জোগান দিত অভীক। তার গ্রাহক-তালিকায় ডাক্তার ছাড়াও শহর ও শহরতলির বিভিন্ন মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়া ও আবাসিকদের নম্বর আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sskm drug junior doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE