Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

পিসি-ভাইঝির লড়াইয়ে জমজমাট ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড

পুরোপুরি রাজনৈতিক পরিবার। কিন্তু কোনওদিনই রাজনীতি নিয়ে দু’জনের কথা হয়নি। কিন্তু এখন বাড়ির বাইরে বেরোলেই পিসির সঙ্গে ভাইঝির লড়াই রাজনীতিতেই! কলকাতা পুরসভার ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে এ বার লড়াই পিসি-ভাইঝির! তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলর এবং ৫ নম্বর বরোর চেয়ারপার্সন পিসি অপরাজিতা দাশগুপ্তর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন কংগ্রেসের প্রার্থী ভাইঝি মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অপরাজিতা দাশগুপ্ত।—নিজস্ব চিত্র।

মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অপরাজিতা দাশগুপ্ত।—নিজস্ব চিত্র।

দেবারতি সিংহ চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৫ ০২:৩০
Share: Save:

পুরোপুরি রাজনৈতিক পরিবার। কিন্তু কোনওদিনই রাজনীতি নিয়ে দু’জনের কথা হয়নি। কিন্তু এখন বাড়ির বাইরে বেরোলেই পিসির সঙ্গে ভাইঝির লড়াই রাজনীতিতেই!

কলকাতা পুরসভার ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে এ বার লড়াই পিসি-ভাইঝির! তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলর এবং ৫ নম্বর বরোর চেয়ারপার্সন পিসি অপরাজিতা দাশগুপ্তর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন কংগ্রেসের প্রার্থী ভাইঝি মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায়।

একরত্তি মোনালিসা ছোটপিসি অপরাজিতার কোলেপিঠেই বড় হয়েছেন। কিন্তু সময়ের স্রোতে সেই পিসির বিরুদ্ধেই লড়াইয়ে নেমেও ব্যক্তি-আক্রমণে যেতে নারাজ মোনালিসা। আদরের সানির (মোনাসিলার ডাক নাম) বিরুদ্ধেও ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন না পিসিও। ভাইঝির কথায়, “লড়াইটা পিসির বিরুদ্ধে নয়। আমার লড়াই তৃণমূলের বিরুদ্ধে।” পিসির ওয়ার্ডে এখনও পানীয় জল, জঞ্জাল, রাস্তা মেরামতি, নিরাপত্তায় কিছুটা হলেও খামতি রয়েছে বলে ভাইঝির অভিযোগ। যদিও পিসির মতে, “এলাকায় কী কাজ করেছি, মানুষই বিচার করবেন। এ বারও উন্নয়নই আমার হাতিয়ার।”

গত দু’বারের কাউন্সিলর পিসির বিরুদ্ধে লড়াইটা যে সহজ নয়, জানেন ছবি তৈরিতে ডিপ্লোমা পাওয়া মোনালিসা। তাইতো শনিবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে বৈঠকখানা বাজারে নিজের দলীয় কার্যালয়ে বসে উত্তর কলকাতার যুব কংগ্রেস-নেত্রী মোনালিসা বলছিলেনও, “জানি জেতাটা সহজ হবে না। তবুও এই ওয়ার্ডটাকে নিয়মিত যত্নে সুন্দর রাখতে মালির কাজটা করতে চাই। সে কাজটা করতে আমাকে লড়াইয়ে জিততে হবে।”

গত সপ্তাহে কংগ্রেসের তরফে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পরেই পিসির বাড়িতে গিয়ে প্রণাম করেছেন মোনালিসা। ‘ভাল করে কাজ কর’ পিসির আশীর্বাদ নিয়ে এলাকা চষে বাড়ি বাড়ি ঘুরে মানুষের কাছে পৌঁছনোর কাজও শুরু করে দিয়েছেন এ দিন থেকেই। আশীর্বাদ-শুভেচ্ছা থাকলেও পিসির কাছে ভাইঝি কিন্তু মূল প্রতিদ্বন্দ্বী নন। অপরাজিতার টক্কর সিপিএমের গৌতম প্রামাণিকের সঙ্গে। অপরাজিতার কথায়, “গৌতমের সঙ্গে এলাকার মানুষের যোগ অনেক বেশি।”

রাজনীতির ময়দানে লড়াইয়ে নামলেও পরিবার-বৃত্তে দু’জনেরই সম্পর্কের বাঁধন অটুট। পিসি তাই বললেন, “আদর্শগত ভিন্নতা নিয়ে অন্য দল থেকে ও লড়তেই পারে আমার বিরুদ্ধে। এর জন্য কোনও অস্বস্তি নেই আমাদের। লড়াইয়ের বাইরে ও আমার মেয়ে, আমি ওর পিসিই থাকব।” ভাইঝিও অবলীলায় বললেন, “পিসি জিতলে ওঁর কাছে গিয়ে অভিনন্দন জানাব।”

প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক-কাউন্সিলর বিনয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দশম সন্তান অপরাজিতা গত বারই লড়েছিলেন ভাইঝির বাবা অর্থাৎ তাঁর দাদা বাসুদেব(ভণ্ডুল) বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। জিতেছিলেন অপরাজিতাই। এ বার সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইঝি। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে বড় হওয়া মোনালিসা প্রতি পদক্ষেপে এখন পরামর্শ নিচ্ছেন বাবা-ঠাকুর্দার নেতা সোমেন মিত্রর। “এলাকার রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে উনিই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। দু’একটা সভাও আমার ওয়ার্ডে করবেন বলে মনে হয়”, বলছিলেন ত্রিশোর্ধ্ব মোনালিসা। ফেসবুক, হোয়াটস্ অ্যাপের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি বাপ-ঠাকুর্দার এই পরিচিতি পরম্পরা নিয়ে প্রচারে নামবেন তিনি।

শিয়ালদহ উড়ালপুল লাগোয়া পাঁচশো মিটার ব্যবধানে পিসি-ভাইঝির বাড়ির মাঝখানে বৈঠকখানা বাজার। পাঁচ বছর আগে ওই পাড়া ভাই-বোনের লড়াই দেখেছে। এ বার পিসি-ভাইঝির লড়াইয়ে অপরাজিতাই অপরাজিত থাকেন কি না, তার সাক্ষী থাকতে তৈরি ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

49 word kolkata corporation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE