Advertisement
E-Paper

ফের বিয়ের তাগিদে স্ত্রীকে কুপিয়ে মরণঝাঁপ

ঝামেলা মূলত দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে। এবং গোলমালটা আরও একটা বিয়ের উদ্যোগকে ঘিরে। এরই পরিণামে দ্বিতীয় স্ত্রী, শাশুড়ি এবং এক প্রতিবেশীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠল বছর চল্লিশের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। শুধু রক্তারক্তি নয়, দাম্পত্য সংঘাতের সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ল ঘরেও। শেষ পর্যন্ত পড়শিদের তাড়া খেয়ে তেতলা থেকে ঝাঁপ দেওয়ার পরে মারা গেলেন অভিযুক্ত। আক্রান্ত তিন জনেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৫৬
বাঘা যতীন পল্লির সেই বাড়ির সামনে ভিড়।  —নিজস্ব চিত্র।

বাঘা যতীন পল্লির সেই বাড়ির সামনে ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

ঝামেলা মূলত দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে। এবং গোলমালটা আরও একটা বিয়ের উদ্যোগকে ঘিরে।

এরই পরিণামে দ্বিতীয় স্ত্রী, শাশুড়ি এবং এক প্রতিবেশীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠল বছর চল্লিশের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। শুধু রক্তারক্তি নয়, দাম্পত্য সংঘাতের সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ল ঘরেও। শেষ পর্যন্ত পড়শিদের তাড়া খেয়ে তেতলা থেকে ঝাঁপ দেওয়ার পরে মারা গেলেন অভিযুক্ত। আক্রান্ত তিন জনেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে যাদবপুর থানা এলাকার বাঘা যতীন পল্লিতে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম মহম্মদ আব্দুল মতিন। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে অনেক আগেই বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে সেনাবাহিনীর প্রাক্তন জওয়ান মতিনের। দ্বিতীয় স্ত্রী সাহিন আখতার চৌধুরী (২৫)-র সঙ্গেও গোলমাল চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। এ দিন সেটা চরমে ওঠে। বঁটি এবং দা-জাতীয় অন্য একটি ধারালো অস্ত্র নিয়ে মতিন প্রথমে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাহিনের উপরে। মেয়েকে বাঁচাতে ছুটে যান সাহিনের মা রোমি চৌধুরী (৪৯)। গোলমাল শুনে দোতলার বাসিন্দা সুনীলকুমার দাস (৭০)-ও মা-মেয়েকে বাঁচাতে ছুটে আসেন। মতিন তিন জনকেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকেন বলে প্রতিবেশীদের অভিযোগ।

চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে এলাকার বাসিন্দারা চলে আসেন। মতিন প্রথমে অস্ত্র হাতে তাঁদের দিকেও তেড়ে যান। কিন্তু প্রতিবেশীরা দল বেঁধে তাঁকে আটকাতে এগিয়ে আসছেন দেখে মতিন নিজেদের রান্নাঘর থেকে একটি গ্যাস সিলিন্ডার সিঁড়িতে গড়িয়ে দেন। ঢেলে দেন কেরোসিনও। অন্য একটি সিলিন্ডারের মুখ খুলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যান ফ্ল্যাটের পিছনের বারান্দায়। গ্যাস-কেরোসিনের ইন্ধনে লেলিহান হয়ে ওঠে আগুন। চলে আসে পুলিশ ও দমকল। বেগতিক দেখে তেতলার বারান্দা থেকে নীচে ঝাঁপিয়ে পড়েন মতিন। পড়শিরা তাঁকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

আহত মতিনকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে বাঙুর হাসপাতালে পাঠানো হয় তাঁকে। পথেই মারা যান তিনি। তাঁর স্ত্রী সাহিন ও শাশুড়ি রোমিকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ এবং প্রতিবেশী সুনীলবাবুকে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নিজেদের বাড়ির মধ্যে এই রক্তারক্তি এবং আগুনে-কাণ্ড কেন?

পড়শিরা বলছেন, মতিনের তৃতীয় বিয়ের তাড়নাই সব গোলমালের মূলে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে ম্যানেজমেন্টের ছাত্রী সাহিনকে বিয়ে করেন মতিন। বাঘা যতীনের বাড়িতে তাঁরা এসেছেন মাস সাতেক আগে। সাহিনের বাবা ইউসুফ আনম চৌধুরী ছ’মাস আগে ফ্ল্যাটটি কিনে স্ত্রী, মেয়ে-জামাইকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু সাহিনের সঙ্গে খটাখটি লেগেই ছিল। তাই ফের বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন মতিন।

পুলিশ জানায়, এ দিন বিকেলে সাহিন কলেজ থেকে ফেরার পরেই মতিন মারমুখী হয়ে ওঠেন। পড়শিদের বক্তব্য, প্রাক্তন সেনাকর্মী মতিনের ফের বিয়ের উদ্যোগকে ঘিরেই সাহিনের সঙ্গে ঝামেলা বেধেছিল। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই ছিল। দিন পাঁচেক আগেও তাঁদের ফ্ল্যাট থেকে প্রবল চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে পড়শিরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ মতিন ও সাহিনের সঙ্গে কথা বলে তখনকার মতো মিটমাট করে দেয়।

কিন্তু দম্পতির মনের আগুন যে নেভেনি, মঙ্গল-বিকেলের ঘটনা তারই প্রমাণ। পুলিশি সূত্রের খবর, এ দিন গোলমালের সময় সাহিনের বাবা ইউসুফ বাড়িতে ছিলেন না। ফিরে এসে দেখেন, বাড়িতে আগুন জ্বলছে। তাঁর এবং পড়শিদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার সন্তোষ পাণ্ডে জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই পরিবারে ঝামেলা চলছিল। তবে শুধুই তৃতীয় বিয়ের তাগিদ, নাকি অন্য কোনও কারণে মতিন এমন রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটালেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

bagha jatin sunilkumar das romi chowdhury sahin akhtar chowdhury abdul motin
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy