Advertisement
E-Paper

বিতর্কের গুঁতোয় পোশাক-ফতোয়া ফর্দাফাঁই

প্রায় পোশাক-পুলিশের কায়দায় পড়ুয়াদের সাজপোশাক নিয়ন্ত্রণের ফতোয়া দিয়েছিলেন শাসক দল সমর্থিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। বিতর্কের মুখে দমদমের মতিঝিল কলেজে ছাত্র সংসদের সেই ‘পোশাক-ফতোয়া’ তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-রই রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। একই সঙ্গে শঙ্কুদেবের বক্তব্য, ওই কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিকি পাল যে-নির্দেশিকা জারি করেছেন, তার কয়েকটি সদর্থক দিকও আছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৩৯

প্রায় পোশাক-পুলিশের কায়দায় পড়ুয়াদের সাজপোশাক নিয়ন্ত্রণের ফতোয়া দিয়েছিলেন শাসক দল সমর্থিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। বিতর্কের মুখে দমদমের মতিঝিল কলেজে ছাত্র সংসদের সেই ‘পোশাক-ফতোয়া’ তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-রই রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা।

একই সঙ্গে শঙ্কুদেবের বক্তব্য, ওই কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিকি পাল যে-নির্দেশিকা জারি করেছেন, তার কয়েকটি সদর্থক দিকও আছে। কিন্তু তা নিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে লাগাতার প্রচার করে সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। তা না-করে ‘তালিবানি কায়দায় ফতোয়া জারি করা’ মোটেই কাম্য নয়।

ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা অবশ্য বলছেন, তাঁরা মোটেই কোনও ‘ফতোয়া’ জারি করেননি। কলেজের পরিবেশ উন্নত করার স্বার্থে কিছু ‘অনুরোধ’ করেছিলেন মাত্র। কলেজের শিক্ষকদের একাংশেরও বক্তব্য, ছাত্র সংসদ কলেজের পড়ুয়াদের কিছু ‘অনুরোধ’ করেছিল, যার অধিকাংশই সমর্থনযোগ্য।

দমদমের মতিঝিল কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নিয়ন্ত্রিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিকি লিখিত নির্দেশে বলেছিলেন, ওই কলেজের ছাত্রছাত্রীরা হাঁটুর উপরে পোশাক, রোদচশমা বা টুপি পরতে পারবেন না। ধূমপান না-করা, পানের পিক না-ফেলা, কলেজ চত্বরে ‘ভদ্র ভাবে’ মোটরবাইক চালানো, কলেজে হাজিরা এবং পরিচয়পত্র দেখানোর ব্যাপারেও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর তরফে মোট ১০ দফা নির্দেশ ওই কলেজে টাঙিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কলেজের ছাত্র সংসদ আদৌ এমন নির্দেশ জারি করতে পারে কি না, বিশেষত পড়ুয়াদের উপরে কোনও পোশাক-বিধি চাপিয়ে দিতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিতর্কের জেরেই টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব ওই লিখিত নির্দেশ তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন বিকিকে।

শঙ্কুদেব রবিবার বলেছিলেন, ওই কলেজের ছাত্র সংসদের নির্দেশের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। সোমবার তিনি বলেন, “খোঁজ নিয়ে জেনেছি, কলেজ-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ছাত্র সংসদ ওই ধরনের একটা নির্দেশ জারি করেছিল। অর্থাৎ এটা ওই কলেজের ছাত্র সংসদ এবং শিক্ষকদের ব্যাপার। টিএমসিপি এর সঙ্গে জড়িত নয়।” শঙ্কুদেবের সংযোজন, “তবে আমাদের সংগঠন শালীনতা রক্ষার পক্ষপাতী। কলেজের ছাত্র সংসদ অশালীন অনুষ্ঠান করলে প্রতিবাদ হয়। আবার ছাত্র সংসদ শালীনতা রক্ষার চেষ্টা করলেও বিতর্ক হয়। এ তো স্ববিরোধিতা!” তাঁর বক্তব্য, আসলে ওই নির্দেশের কিছু সদর্থক দিক আছে। কিন্তু সেগুলি পড়ুয়াদের মধ্যে লাগাতার প্রচার করে তাদের আস্থা অর্জন করে প্রয়োগ করতে হবে। তালিবানি কায়দার ফতোয়া বরদাস্ত করা হবে না। ওই কলেজের টিচার ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) শুক্লা মজুমদার অবশ্য এই ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি।

মতিঝিল কলেজের শিক্ষকদের একাংশ অবশ্য মনে করেন, ছাত্র সংসদের তরফে পড়ুয়াদের কিছু অনুরোধ করা হয়েছে, যা কলেজের পক্ষে ভাল। তাঁদের বক্তব্য, কলেজে ছাত্রছাত্রীদের হাজিরা নিয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশ আছে বিশ্ববিদ্যালয়েরই। আর পরিচয়পত্র দেখানোর নিয়ম কলেজ আগেই জারি করেছে। কিন্তু অনেক সময়েই পড়ুয়ারা সেগুলি মনে রাখেন না। তাতে তাঁদেরই ক্ষতি হয়। ছাত্র সংসদ সেগুলি পড়ুয়াদের মনে করে দিয়েছে মাত্র। কলেজের শিক্ষকদের একাংশের আরও বক্তব্য, কলেজ-চত্বরে পানের পিক ফেলা, ধূমপান করা বা বিপুল শব্দ করে দ্রুত গতিতে মোটরবাইক চালিয়ে ঘুরে বেড়ানো যে শোভন নয়, তা তো স্বতঃসিদ্ধই। ছাত্র সংসদ যদি সেই সত্য মনে করিয়ে দেয়, তাতে দোষের কিছু নেই।

“ছাত্র সংসদ কলেজেরই স্বার্থে পড়ুয়াদের কিছু অনুরোধ করেছে। এর বেশি কিছু নয়,” বললেন কলেজের প্রথম বর্ষের ইংরেজি অনার্সের ছাত্র দেবরূপ সেনগুপ্ত। কিন্তু ছাত্র সংসদ কি পড়ুয়াদের উপরে কোনও পোশাক-বিধি চাপিয়ে দিতে পারে? শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, ছাত্র সংসদ তো শুধু হাঁটুর উপরে পোশাক না-পরতে অনুরোধ করেছে। অন্য কোনও পোশাক নিয়ে তারা কিছু বলেনি। কলেজে পড়ুয়ারা হাঁটুর উপরে পোশাক পরে আসবেনই বা কেন? তবে এ ব্যাপারে শিক্ষকদের অন্য অংশের বক্তব্য, পোশাক নিয়ে যা বলার, ছাত্র সংসদ পড়ুয়া এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলোচনা করেই তা বললে ভাল করত।

পোশাক-বিধি নিয়ে এর আগেও এ রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে স্কুলের শিক্ষিকাদের সালোয়ার-কামিজের বদলে শাড়ি পরার ফতোয়া দিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল-কর্তৃপক্ষ। এ-সব নিয়ে রাজ্যে বহু বার বিস্তর বিতর্কও হয়েছে। কিন্তু তাতে যে পোশাক-ফতোয়ার ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়নি, মতিঝিল ফের তা দেখিয়ে দিল।

motijhil college fatwa tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy