Advertisement
E-Paper

মন্ত্রীর হুমকিই সার, আবার অটো-শাসনে নামল জনতাই

পরিবহণমন্ত্রীর ক্রমাগত হুঁশিয়ারিতে যে কোনও কাজ হচ্ছে না, তা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান। শুধু তা-ই নয়, বেপরোয়া অটোর সামনে পড়ে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে এলাকার প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০২:৩৭
অটোর ধাক্কায় মৃত চিত্তরঞ্জন সাহা।

অটোর ধাক্কায় মৃত চিত্তরঞ্জন সাহা।

পরিবহণমন্ত্রীর ক্রমাগত হুঁশিয়ারিতে যে কোনও কাজ হচ্ছে না, তা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান। শুধু তা-ই নয়, বেপরোয়া অটোর সামনে পড়ে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে এলাকার প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারাই। পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে অবশ্য ফের হুঁশিয়ারির চেনা পথেই হেঁটেছেন মন্ত্রী।

সোমবার রাতে গাঙ্গুলিবাগানে দ্রুত গতিতে আসা একটি অটোর সামনে পড়ে মারা যান এলাকারই ৮৬ বছরের এক বৃদ্ধ। প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে দীর্ঘক্ষণ রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয় মানুষ। যার পুরোভাগে দেখা যায় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকেই। আবার সেই অবরোধ তুলতে এগিয়ে আসেন তৃণমূলেরই অন্য একটি অংশ।

অটোচালকদের হুঁশিয়ারি মন্ত্রী মদনের। মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র।

এ সবের মধ্যেই দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে একই সুরে আবার অটোচালকদের হুমকি দিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। আবারও বলেছেন, “রাজ্য সরকার কোনও ভাবে অটোচালকদের দৌরাত্ম্য বরদাস্ত করবে না।” এমনকী নতুন অভিযোগ এলে গাঙ্গুলিবাগান রুট থেকে এখন চলাচল করা সমস্ত অটোর লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়ার হুমকিও দেন মন্ত্রী। গত ২১ জানুয়ারি এই রুটেই একটি অটোর ধাক্কায় মারা গিয়েছিলেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। সোমবারের দুর্ঘটনাতেও অটোর সামনে পড়ে মৃত্যু হয় এক বৃদ্ধের। শহরের অন্যত্রও কখনও যাত্রী, কখনও পথচারী, কখনও মোটরসাইকেল আরোহীর সঙ্গে অটোচালকদের বাক-বিতণ্ডা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অটোচালকদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের মারধর করার অভিযোগও আসছে নিয়মিত। অটোচালকদের ব্যবহার শোধরাতে প্রশিক্ষণ-শিবিরও শুরু করতে হয়েছে পুলিশকে।

এ দিন গাঙ্গুলিবাগানে অটোচালকদের সামনেই স্থানীয় বাসিন্দা মালা মজুমদার মন্ত্রীকে নালিশ করেন, “খুচরো না দিলে ওঁরা (অটোচালকেরা) যা-তা ভাষায় কথা বলেন যাত্রীদের সঙ্গে। ভাঙা রুটে অটো চালান। অফিসযাত্রী, অসুস্থ, বৃদ্ধ এমনকী অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদেরও রেয়াত করেন না।” তাঁর কথা শুনে মদনবাবু জানান, তিনি সমস্ত অভিযোগ শুনেছেন। মন্ত্রী বলেন, “যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারও কোনও রকম রেয়াত করবে না।”

প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, গাঙ্গুলিবাগানের বাসিন্দা ৮৬ বছরের চিত্তরঞ্জন সাহা সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তা পেরোচ্ছিলেন। হাতে ধরা ছিল লাঠি। অশক্ত বৃদ্ধ রাস্তা পেরোতে গিয়ে একটি অটোর সামনে পড়ে যান। অভিযোগ, অটোটি তুমুল গতিতে আসছিল। চিত্তরঞ্জনবাবুকে দেখে সেটি জোরে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, তার ফলেই বৃদ্ধ পড়ে যান রাস্তায়। অটোর সঙ্গে তাঁর ধাক্কা লাগেনি।

অভিযোগ, অত জোরে অটোটি তাঁর সামনে এসে ব্রেক কষায় টাল সামলাতে না পেরে বৃদ্ধ রাস্তায় পড়ে যান। স্থানীয় মানুষ এসে তাঁকে তোলেন। খবর পেয়ে দ্রুত তাঁর বড় ছেলে অসিতবাবুও চলে আসেন ঘটনাস্থলে। ওই অটোটিতে তুলেই বৃদ্ধকে বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত দশটায় সেখানেই মারা যান চিত্তরঞ্জনবাবু। তাঁর ছেলে অসিতবাবু বলেন, “বাবা এমনিতে অশক্ত, তার উপরে চোখে ভাল দেখতে পেতেন না। কানেও কম শুনতেন। তাই ঘাবড়ে গিয়ে পড়ে যান।”

সোমবার রাতে চিত্তরঞ্জনবাবুর মৃত্যুর পরে কানাই নামে ওই অটোচালককে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে তোলা হলে তিনি জামিন পেয়ে যান। মঙ্গলবার সকাল থেকে এই ঘটনা নিয়েই উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা। অটোচালকদের দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদে সকাল ৮টা থেকে টানা চার ঘণ্টা পাটুলি থানার গাঙ্গুলিবাগান মোড় অবরোধ করেন একদল স্থানীয় বাসিন্দা। নেতৃত্ব দেন রামগড় কলোনি কমিটির সম্পাদক, স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিভু নন্দী। দাবি ওঠে, রামগড় থেকে গাঙ্গুলিবাগান পর্যন্ত ৮টা স্পিড-ব্রেকার বসাতে হবে।

এই এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। লাগোয়া ৯৯ ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায় অবরোধ চলাকালীন প্রায় জনা পঞ্চাশ অটোচালককে নিয়ে এসে অবরোধ তুলে নিতে বলেন। বিভুবাবু বলেন, “মিতালি এসে বলে, ওঁর সঙ্গে নাকি মদনদার কথা হয়েছে। মদনদাই বলেছে অবরোধ তুলে নিতে। তাই আমরা অবরোধ তুলে নিই।” মিতালিদেবীর দাবি অনুযায়ী, তিনি দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেই অবরোধ তুলতে যান। কারণ ব্যস্ত সময়ে অবরোধের জেরে অফিসযাত্রী ও স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের অসুবিধা হচ্ছিল।

দুপুরে পরিবহণমন্ত্রী নিজেই চলে যান এলাকায়। দলীয় কার্যালয়ে বসে কথা বলেন স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে। পরে চিত্তরঞ্জনবাবুর বাড়ি গিয়ে তাঁর স্ত্রী ফুলরানিদেবীকে মদনবাবু জানান, দল ও সরকার সব রকমের সাহায্য করবে তাঁর পরিবারকে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। মন্ত্রী এসেছেন খবর পেয়ে স্থানীয় অটোচালকেরাও জড়ো হন। দাবি তোলেন, তাঁদের সঙ্গেও মন্ত্রীকে কথা বলতে হবে। মদনবাবু ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পরে অটোচালকেরা কার্যত তাঁকে ঘিরে ধরে অভিযোগ জানাতে থাকেন। যার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল খুচরো পয়সার অভাব সংক্রান্ত। ওই অটোচালকদের ধমক দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “অটোচালকদের এই দৌরাত্ম্য সরকার বরদাস্ত করবে না। নিজেদের শোধরাতে হবে।”

অটোচালকদের তৃণমূল ইউনিয়নের নেতাও ছিলেন ওই ভিড়ে। মন্ত্রী তাঁদের জানিয়ে দেন, সময় মতো নিজেদের শোধরাতে না পারলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বলেন, “এই গাঙ্গুলিবাগানের অটোচালকদের বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগ এসেছে। এর আগেও অটো-দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন এক ব্যক্তি। আর যদি একটিও অভিযোগ কানে আসে, তা হলে এই রুটের সমস্ত অটোর লাইসেন্স বাতিল করে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নতুন অটো চালু করব।”

এ দিকে, শনিবার রানিকুঠিতে এক যাত্রীকে মারধরের অভিযোগে এক অটোচালককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আদালত ওই চালককে ১ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তাঁর জামিনের দাবিতে সোমবার থেকে টালিগঞ্জ-গড়িয়া রুটে লাগাতার অটো বন্ধ রাখেন চালকেরা। এ দিন গাঙ্গুলিবাগান থেকে টালিগঞ্জে গিয়ে ওই অটোচালকদের সঙ্গেও বৈঠক করেন মদন মিত্র। মন্ত্রীর আশ্বাসে ওই রুটে আবার অটো চলা শুরু হয়েছে।

auto accident Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy