Advertisement
E-Paper

মমতার পথে বিপদ সরাতে ঘরহারা ইকো পার্কের সাপ

আচমকাই তাঁর ইচ্ছা হয়েছিল, শিল্পপতিদের নিয়ে বৈঠক আর চার দেওয়ালের মধ্যে করা হবে না। রাজারহাটের খোলামেলা ইকো-ট্যুরিজম পার্কের নাম উঠে এসেছিল পছন্দের তালিকায়। তাঁর ইচ্ছাই প্রতিটি ক্ষেত্রে মুখ্য হয়ে ওঠে, সেটাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয় গত তিন বছর ধরে এই বাংলায় এটাই রীতি। তাই গত জুন মাসে ইকো পার্ক লাগোয়া জলাশয়ের দ্বীপে কাচঘরে বসে সে দিনের বৈঠক সেরে নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৩২
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

আচমকাই তাঁর ইচ্ছা হয়েছিল, শিল্পপতিদের নিয়ে বৈঠক আর চার দেওয়ালের মধ্যে করা হবে না। রাজারহাটের খোলামেলা ইকো-ট্যুরিজম পার্কের নাম উঠে এসেছিল পছন্দের তালিকায়। তাঁর ইচ্ছাই প্রতিটি ক্ষেত্রে মুখ্য হয়ে ওঠে, সেটাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয় গত তিন বছর ধরে এই বাংলায় এটাই রীতি। তাই গত জুন মাসে ইকো পার্ক লাগোয়া জলাশয়ের দ্বীপে কাচঘরে বসে সে দিনের বৈঠক সেরে নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু জানা যায়, সে দিন কাচঘরের ভিতরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অন্য মন্ত্রী-আমলা-শিল্পপতিরা থাকলেও ঘরের বাইরে খেলা করেছে বেশ কিছু সাপ! জানা যাচ্ছে, ইকো পার্কে, বিশেষত এই দ্বীপে প্রচুর সাপ দেখা যায়। তার মধ্যে চন্দ্রবোড়া, কেউটে ও গোখরোর মতো বিষধরেরাও আছে। তাদের মাঝখান দিয়ে সে দিন মুখ্যমন্ত্রী ও অন্য বিশিষ্টদের নিরাপদে বার করে আনা গেলেও পরে বিপদের আশঙ্কা তৈরি হয়। বিশেষত, মাঝে দিন দুই বিমানবন্দরে যাতায়াতের পথে এই ইকো পার্কেই থেমে খানিকটা পায়চারি করে গিয়েছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে তাঁর চলাফেরার পথে সাপ এসে পড়লে যে ভয়ানক কাণ্ড ঘটে যেতে পারে, তা নিয়ে একটা আশঙ্কা ছিলই।

শেষে সাপ তাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। কারণ, জানুয়ারি মাসেই এই ইকো পার্কে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের বিশ্ব বাংলা শিল্প সম্মেলন হবে বলে ঠিক হয়েছিল। পরিবেশবিদ বা বন দফতরের একাংশের বক্তব্য ছিল, ইকো পার্ক মানে ‘ইকোলজিক্যাল পার্ক’, যেখানে খাদ্য ও খাদক সবাই একসঙ্গে থাকবে এবং সব ধরনের প্রাণীর সংরক্ষণ করা হবে। সেখান থেকে এ ভাবে সাপ তাড়ানো হলে পরিবেশের ভারসাম্যটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ‘ইকো পার্ক’ তৈরি করার মূল উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হবে। এই যুক্তি দিয়েও অবশ্য সরকারি উদ্যোগকে দমানো যায়নি।

সম্প্রতি অবশ্য ইকো পার্ক থেকে বিশ্ব বাংলা সম্মেলন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে, শুধু ৬ জানুয়ারি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে ওই পার্কে। বাকি অনুষ্ঠান হবে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। সাপের উপদ্রবই কি সম্মেলন সরিয়ে নেওয়ার কারণ? রাজ্যের শিল্পসচিব কৃষ্ণ গুপ্ত ফোনে বলেন, তিনি বৈঠকে ব্যস্ত রয়েছেন। পরে ফোন করতে। কিন্তু, পরে ফোন করেও তাঁকে আর পাওয়া যায়নি।

কিন্তু সম্মেলন সরিয়ে নেওয়ার চেয়ে আরও বড় অভিযোগ উঠেছে ‘নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (এনকেডিএ)-র বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তড়িঘড়ি সাপ তাড়াতে গিয়ে বন দফতরের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে তারা। নিয়মানুযায়ী, বন দফতরকে না জানিয়ে রাজ্যের কোথাও থেকে বন্যপ্রাণী ধরা যায় না। কিন্তু, সাপ তাড়াতে গিয়ে ইকো-ট্যুরিজম পার্কে একটি বেসরকারি সংস্থাকে সাপ ধরার বরাত দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এবং তা দেওয়া হয়েছে রীতিমতো টেন্ডার ডেকে। এই ঘটনায় বন দফতরের কর্তারা হতবাক! এক কর্তার কথায়, “নিয়ম থাকা সত্ত্বেও সরকারি সংস্থাই যদি নিয়ম না মানে, তা হলে সাধারণ মানুষ আর কী শিখবে!”

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এটা তো সাপেদের শীতঘুমের সময়, তা হলে সাপ নিয়ে এত আতঙ্ক কেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন ক্রান্তীয় জলবায়ুতে শীতকালেও সাপ বেরোনোটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

নিউ টাউনে এখনও কোনও পুরসভা তৈরি হয়নি। সেই পুর-পরিষেবা দেওয়ারই কাজ করে এনকেডিএ। সেখানেই প্রায় এক হাজার বিঘার বেশি জমি জুড়ে ইকো পার্ক। তাকে সাজিয়ে-গুছিয়ে এখন সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এনকেডিএ-র এক অফিসারের কথায়, “বেশ কিছুটা জলা জমি আছে। সেখানে বিষধর সাপও রয়েছে। অনেক সময়েই আমরা জানতে পেরেছি, যাঁরা বেড়াতে আসছেন, তাঁদের সামনে দিয়েই সাপেরা দিব্যি চলাফেরা করছে। সে জন্যই এই উদ্যোগ।”

সেই উদ্যোগেই গত সেপ্টেম্বরে বেসরকারি এক সংস্থাকে দিয়ে সাপ ধরার কাজ শুরু হয়। চুক্তি মতো, সেই সংস্থা সপ্তাহে দু’দিন এসে সাপ ধরবে। তার জন্য প্রতি সপ্তাহে তারা ৫৬০০ টাকা করে পাবে। সেই সাপ নিয়ে তারা কী করবে, কোথায় রাখবে— জানা নেই এনকেডিএ-র অফিসারদের। সূত্রের খবর, এক দিন ওই বেসরকারি সংস্থার দুই কর্মী সাপ ধরতে যান। খবর যায় বন দফতরের কাছে। সেখান থেকে অফিসারেরা এসে চেপে ধরেন ওই দুই কর্মীকে। তাঁদের তখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়ে ওই বেসরকারি সংস্থার কর্তা রামপ্রসাদ মিত্র বলেন, “সে দিন বন দফতর বলে গিয়েছে, সাপ ধরলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের জানাতে। সাপ তারা নিয়ে যাবে। এক দিনের জন্যও সেই সাপ আমাদের কাছে রাখা যাবে না। আমরা এখন মূলত স্প্রে করে সাপ তাড়াচ্ছি।”

রাজ্যের মুখ্য বনপাল উজ্জ্বল ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা বিষয়টি জেনে এনকেডিএ-কে জানিয়েছি। বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষের বিপদ হতে পারে, এমন ক্ষেত্রে আমাদের ডাকা হলে আমরাই সাপ ধরে সরিয়ে নিয়ে যাব। বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে এই কাজ করানো যাবে না।”

তা হলে, বন দফতরকে না ডেকে বেসরকারি সংস্থাকে ভার দেওয়া হল কেন? এনকেডিএ-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ বার থেকে সাপ ধরা নিয়ে যা করা হবে, বন দফতরকে জানিয়েই হবে।”

sunanda ghosh eco park newtown mamata snake
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy