Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

রং না ছুঁয়েও রঙিন হওয়ার উদ্‌যাপন এই প্রজন্মের

‘খেলব হোলি, রং দেব না...!’ তা-ও হয়। দোলের দিনে রং ছাড়াই খাওয়া-দাওয়া-হুল্লোড়, কখনও বা অফিসের উদ্‌যাপনে নানা রঙের জামা ও মিষ্টিমুখ। রং মাখার সুযোগ না-ই বা থাকল, তাই বলে কি বাদ যাবে উত্‌সবের আনন্দ? মোটেই না।

রঙিন উল্লাস। ঋতুপর্ণা এবং অরুণিমা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

রঙিন উল্লাস। ঋতুপর্ণা এবং অরুণিমা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

পরমা দাশগুপ্ত ও সুচন্দ্রা ঘটক
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৪ ০২:৫৪
Share: Save:

‘খেলব হোলি, রং দেব না...!’

তা-ও হয়।

দোলের দিনে রং ছাড়াই খাওয়া-দাওয়া-হুল্লোড়, কখনও বা অফিসের উদ্‌যাপনে নানা রঙের জামা ও মিষ্টিমুখ। রং মাখার সুযোগ না-ই বা থাকল, তাই বলে কি বাদ যাবে উত্‌সবের আনন্দ? মোটেই না। তাই মাঝেমধ্যে রং-আবির ছাড়াও বসন্তের রংবাজিতে মাতছে জেন ওয়াই। বন্ধুরা সব দূরে? কুছ পরোয়া নেই, মোবাইল তো আছে। এসএমএস থেকে ফেসবুক, হোয়াটস্‌অ্যাপ থেকে স্কাইপ রং না মেখেই দিব্যি ‘হ্যাপি হোলি!’ দোলের দিন তিনেক আগে থেকেই রং ছড়াচ্ছে নেট-দুনিয়া।

বিয়ের পর প্রথম রঙের উত্‌সবেই অনসাইট-প্রবাসে আইটিকর্মী শিলাদিত্য। আজ, দোলের দিনটা স্ত্রী পারমিতার জন্য রঙিন করে তুলতে নানা উজ্জ্বল রং দিয়ে ই-কার্ড তৈরি করে ফেলেছেন। রং মেলানোর শুভক্ষণে পারমিতার টাইমলাইনে পোস্ট করবেন সেটাই। বাকি বন্ধুদের জন্যও তৈরি নানা রঙে ভর্তি পিচকিরি, বেলুন।

কাজের সূত্রে ছড়িয়েছিটিয়ে যাওয়া বন্ধুদের আর এক বার একজোট হওয়ার অজুহাতও তো দোলই। সকলে অন্য শহরে? সেটা আবার সমস্যা নাকি! গবেষক অঙ্কিতা আর তাঁর বন্ধুদের তাই হোলি স্পেশ্যাল চ্যাট-গ্রুপ তৈরি। বন্ধুরা মিলে আতিপাতি খুঁজে বেরিয়ে পড়েছে কলেজ জীবনের হোলির ছবি। দু’এক দিন আগে থেকেই চ্যাট গ্রুপে আপলোড হচ্ছে নিজেদেরই রং মাখা অবতার। সঙ্গে রংচঙে বার্তা তো আছেই!

দোলে আবার অনেক অফিসই খোলা। তাই বলে কি বাদ যাবে উদ্‌যাপন? দমছেন না তরুণ কর্মীরা। প্ল্যান হয়ে গিয়েছে পার্টির। এইচআর-এর কড়াকড়িতে অফিসে আবির-রং বাদ। তাই দোলের দিনের পোশাকেই থাকবে নানা রং, জানালেন আইটি কর্মী রূপম। খাওয়াদাওয়া, হুল্লোড় তো থাকছেই।

জমিয়ে রং না মাখলে যাঁদের সাদাকালো লাগে দিনটা, উদ্‌যাপনে টুইস্ট আনছেন তাঁরাও। কী পরবেন, কী মাখবেন থেকে কী খাবেন, হোলি টিপসের ছড়াছড়ি সর্বত্র। ফিল্মি কায়দায় হোলি পার্টিও বেশ ‘ইন’। সব দেখেশুনে অনেকে স্রেফ দোলের জন্য কিনেছেন সাদা ডিজাইনার পোশাক। বাদ যাচ্ছে না গয়না, জুতো, হোলি স্পেশ্যাল চশমাও। ইন্টারনেট ঘেঁটে বেরোচ্ছে ভাঙ-ককটেল-ভাজাভুজির নিত্যনতুন রেসিপিও।

পেশায় ব্যবসায়ী চিত্রণ জানালেন, ডিজাইনার টিপস্‌ মেনে সাদা পোশাক-হোলি চশমায় উদ্‌যাপন প্রায়ই দেখা যায় সল্টলেকের রাস্তায়। ‘‘আমাদের ছোটবেলায় যেমন সবচেয়ে খারাপ জামাটা তুলে রাখতাম রং খেলার জন্য, এখন দেখি রেওয়াজটাই পাল্টে গিয়েছে। রং খেলতেও নামছে নতুন জামা,” বলছেন তিনি। তারই সায় মিলল কলেজপড়ুয়া রিয়ার কথায়, “সাদা জামায় রং লাগলে খুব ঝলমলে লাগে। দোলটা তো রঙেরই উদ্‌যাপন। এই দিনটার জন্য না হয় একটা সাদা জামা কিনলামই!”

দোলের এই রং-বদলটা চোখে পড়েছে বেসরকারি সংস্থার কর্মী সোহম, পায়েলেরও। বললেন, “ছোটবেলার মতো পাড়ায় রং মেখে ভূত হওয়ার বদলে অনেকে এখন আবিরটাই বেশি পছন্দ করছেন। আসলে বাঙালি বোধহয় প্রোফেশনাল হয়ে গিয়েছে! দোলের পরদিন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে কি আর বাদুড়ে রং মাখা লাল মুখ নিয়ে যাওয়া যায়? সঙ্গে স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে রাসায়নিক রং-আবিরের চেয়ে ভেষজ আবিরই এখন জনপ্রিয় জেন ওয়াইয়ের কাছে।” সঙ্গে ‘ডিজাইনার হোলি’ বা হোলি স্পেশ্যাল পার্টির অন্য রকম ভাবনাগুলোই বেশি মানানসই মনে হয় সদ্য অফিসে ঢোকা সানি, পৌলমী, রাকাদেরও।

যুগ বদলেছে, দোল বদলাবে না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE