বিস্ফোরণ বা জঙ্গি-হানার মতো ঘটনার মোকাবিলায় আগাম সতর্কতা হিসেবে এ বার শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার গাড়ি রাখার জায়গায় নজরদারি ক্যামেরা বসাবে পুরসভা। ঠিক হয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ধর্মতলা, বড়বাজার, নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট এবং পার্ক স্ট্রিটের মতো ঘিঞ্জি ও জনবহুল এলাকায় ওই সমস্ত ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হবে।
পুরসভা সূত্রের খবর, পার্কিংয়ের জায়গা ভাড়া দেওয়ার জন্য ২০০৭ সালে শেষ বার দরপত্র ডাকা হয়েছিল। এক বছরের জন্য সে ব্যবস্থা চালু থাকলেও গত সাত বছরে আর দরপত্র ডাকা হয়নি। যে সব সংস্থা বরাত পেয়েছিল, তাদেরই কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়। এ নিয়ে পুরসভার অন্দরমহলে একাধিক বার নানা গুঞ্জনও উঠেছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। এ বারও দরপত্র ডাকা হবে কি না, তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা চলেছে। গত জানুয়ারিতে তৃণমূল-পরিচালিত পুর-প্রশাসন দরপত্র ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়। দীর্ঘকাল পরে দরপত্র ডাকায় ওই কাজে আগ্রহী সংস্থাগুলি বরাত পেতে সচেষ্ট হয়ে উঠেছে।
সেই মতো শহরের বিভিন্ন রাস্তায় পার্কিংয়ের জায়গা ভাড়া দিতে চেয়ে দরপত্র আহ্বান করেছে পুর-প্রশাসন। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকার গাড়ি রাখার জায়গায় নজরদারি ক্যামেরা বসানোর কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই দরপত্রেই। পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্কিং) দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, পার্কিং এলাকায় নানা অঘটন ঘটেছে মুম্বই, দিল্লির মতো বিভিন্ন শহরে। তাই নিরাপত্তার বিষয়টিকে এ বার অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পুর-প্রশাসন নিজের খরচেই ক্যামেরা বসাবে। যার তত্ত্বাবধান করবেন পুরসভার অফিসারেরা। সহায়তা নেওয়া হবে পুলিশের।
আর যে সব সংস্থা পার্কিংয়ের বরাত পাবে, তাদের জন্যও কয়েকটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সংস্থার নামধাম সব বোর্ডে লিখে প্রতিটি পার্কিংয়ের জায়গায় টাঙিয়ে রাখতে হবে। বরাত পাওয়া সংস্থা তার পার্কিং এলাকা অন্য কাউকে ভাড়া দিতে পারবে না। গাড়ি রাখতে ঘণ্টা-পিছু কত টাকা দিতে হবে, তা-ও লিখে রাখতে হবে বোর্ডে। প্রতিদিন নিয়ম করে সাফাই করতে হবে গাড়ি রাখার জায়গা।
পুরসভার পার্কিং দফতরের এক অফিসার জানান, দিন ও রাত মিলিয়ে শহরে মোট ৫৪৪টি রাস্তা গাড়ি রাখার জন্য ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। যা ১০৭টি পার্কিং লটে ভাগ করা হয়েছে। ওই সব জায়গায় এক সঙ্গে ৯০৩৭টি গাড়ি রাখা যাবে। গত বছর পার্কিংয়ের জায়গা থেকে ভাড়া বাবদ সাত কোটিরও বেশি টাকা আয় হয়েছিল পুরসভার। ওই দফতরের এক অফিসার জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে গোটা চল্লিশেক সমবায় সমিতি শহরের পার্কিংগুলির দায়িত্ব সামলে চলেছে। এক বার প্রশ্নও উঠেছিল, সমবায় সমিতি ছাড়া অন্য কেউ পাবে না কেন? সে সময়ে এক বার দরপত্র চাওয়াও হয়। তাতে অন্যেরাও অংশ নিতে পারে, এমনটি বলা হয়েছিল। কিন্তু দরপত্র খোলার দিন বাক্স ভাঙচুর হওয়ায় সব কিছু স্থগিত হয়ে যায়।
বরাত পাওয়ার যোগ্যতা কী?
পুরসভা সূত্রের খবর, দিনে গাড়ি রাখার লটের (প্রতি লটে প্রায় ২০০ গাড়ি থাকে) সংখ্যা ৬৪। রাতে ৪৩। দিনের লটগুলিকে রাস্তার গুরুত্ব অনুযায়ী এ, বি, সি ও ডি এই চারটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। যারা বরাত পেতে আগ্রহী, তাদের ক্ষেত্রে এ জোনের জন্য কুড়ি, বি জোনের জন্য দশ, সি জোনের জন্য পাঁচ বা তার বেশি বছরের অভিজ্ঞতা (পার্কিং ব্যবসায়) চাওয়া হয়েছে। ডি জোনের জন্য অন্তত পাঁচ বছর পর্যন্ত অভিজ্ঞতা দরকার। রাতেও তেমন এন ১, এন ২, এন ৩ এবং এন ৪ জোন হয়েছে।
পুর-প্রশাসনের এই শর্তাবলী নিয়েই ‘স্বজনপোষণের’ অভিযোগ উঠেছে পুরসভার ভিতরে। এক শ্রেণির অফিসারের বক্তব্য, এখন যারা পার্কিংয়ের দায়িত্বে রয়েছে, তাদেরই ফের বরাত পাইয়ে দেওয়ার জন্য এ সব করা হচ্ছে। এ অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ মেয়র পারিষদ দেবাশিসবাবু। তিনি বলেন, “কলকাতা অত্যন্ত ব্যস্ত এবং জনবহুল শহর। রাস্তাঘাট সব সময়ে যানবাহনে ভর্তি। তাই রাস্তার ধারে পার্কিং লট বরাদ্দ করার আগে দেখে নেওয়া দরকার কারা ওই কাজের যোগ্য। তা ভেবেই শর্তগুলি আরোপ করা হয়েছে।” তাঁর কথায়, “যে সব সমবায় সমিতি এত কাল ধরে ওই কাজ করেছে, দরপত্র-প্রক্রিয়ায় তাদের অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া মানে কাজের বরাত দিয়ে দেওয়া নয়। তা ছাড়া, আদালতের রায়ও বলছে, তাদের সুযোগ দিতে হবে। সব দিক বিবেচনা করেই আটঘাট বেঁধে নেমেছে কলকাতার পুর-প্রশাসন।”
দেবাশিসবাবু বলেন, “কাজের যোগ্যতা নেই, এমন কাউকে তো আর কাজ দেওয়া যায় না। তাই রাস্তার গুরুত্বের নিরিখে অভিজ্ঞতার বছরও বাড়ানো হয়েছে।” দরপত্রে গাড়ি-পিছু দৈনিক ১১৫০ টাকা দর রেখেছে পুর-প্রশাসন। এ বার যে সংস্থা বেশি দর দেবে, তারাই কাজের বরাত পাবে বলে জানান মেয়র পারিষদ। আগামী ১১ মার্চ, ১৪ মার্চ ও ১৭ মার্চে সব জোনের দরপত্র-প্রক্রিয়া শেষে কারা বরাত পাবে, তা নির্ধারিত হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy