Advertisement
E-Paper

শহরে ধৃত পোলিশ মাদক পাচারকারী

সকালের আলো ফুটে গিয়েছে। যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ের দর্জিপাড়া পার্কের উল্টো দিকে পেট্রোল পাম্পের কাছে দাঁড়িয়ে এক বিদেশি যুবক। পরনে জিন্স, টি-শার্ট, গোড়ালি ঢাকা চামড়ার জুতো। অনেকটা হলিউডি সিনেমার ভিলেনের ঢঙে ইতিউতি কাকে যেন খুঁজছে সে। হঠাৎই তার দিকে এগিয়ে গেল মাথায় গামছা বাঁধা এক মুটে ও এক রিকশাচালক। তাঁরা হাত ধরার আগেই এক ঝটকায় নিজেকে সরিয়ে নিল ওই যুবক। কোমরের খাপ থেকে একটা ভোজালি বার করে তেড়ে গেল তাঁদের দিকে। শুরু হল ধস্তাধস্তি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৩১
পুলিশের জালে জেজেরেস্কি জ্যাক। সোমবার।  —নিজস্ব চিত্র।

পুলিশের জালে জেজেরেস্কি জ্যাক। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

সকালের আলো ফুটে গিয়েছে। যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ের দর্জিপাড়া পার্কের উল্টো দিকে পেট্রোল পাম্পের কাছে দাঁড়িয়ে এক বিদেশি যুবক। পরনে জিন্স, টি-শার্ট, গোড়ালি ঢাকা চামড়ার জুতো। অনেকটা হলিউডি সিনেমার ভিলেনের ঢঙে ইতিউতি কাকে যেন খুঁজছে সে। হঠাৎই তার দিকে এগিয়ে গেল মাথায় গামছা বাঁধা এক মুটে ও এক রিকশাচালক। তাঁরা হাত ধরার আগেই এক ঝটকায় নিজেকে সরিয়ে নিল ওই যুবক। কোমরের খাপ থেকে একটা ভোজালি বার করে তেড়ে গেল তাঁদের দিকে। শুরু হল ধস্তাধস্তি। ওই এলাকায় দাঁড়িয়ে লোকজন দেখলেন, মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছেন আরও এক মুটে ও রিকশাচালক। মিনিট কয়েক মারামারির পরে ওই চার জন টেনে-হিঁচড়ে বিদেশিকে একটি গাড়িতে তুললেন। চলে গেলেন এলাকা ছেড়ে। ততক্ষণে ভিড় জমানো লোকজন বুঝে গিয়েছেন, মুটে ও রিকশাচালকের ছদ্মবেশে থাকা ওই যুবকেরা আসলে লালবাজারের পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই বিদেশির নাম জেজেরেস্কি জ্যাক। তার কাছে দু’কেজি চরস মিলেছে। পোল্যান্ডের নাগরিক জেজেরেস্কি মাস তিন আগে গোয়া হয়ে ভারতে ঢোকে। সপ্তাহ দুই আগে কলকাতায় এসে সদর স্ট্রিটের এক হোটেলে আস্তানা গাড়ে। মাঝে নেপালের লুম্বিনী গিয়েছিল সে। সেখান থেকে চরস এনে শহরে বিক্রি করত। পুলিশ জানিয়েছে, জেজেরেস্কির সঙ্গে আরও কয়েক জন এই মাদক পাচার চক্রে জড়িত। তারাও কলকাতার ওই হোটেলে এসে সেখান থেকেই নেপাল গিয়েছে। গোয়েন্দাদের অনুমান, দিন কয়েক পরে তারাও মাদক নিয়ে শহরে ঢুকতে পারে।

মাস কয়েক আগেই এসএসকেএমে এক মেডিক্যাল পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তদন্তে পুলিশ জানায়, অতিরিক্ত মাদক সেবনের ফলেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। ওই ঘটনার পরেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হস্টেলে মাদক-চক্রের রমরমার খবর উঠে আসে। পুলিশ সূত্রের খবর, এসএসকেএমের ঘটনার পর থেকেই শহরে মাদক পাচারকারীদের উপরে নজর রাখতে শুরু করেছিল লালবাজার। ওই ঘটনার কিছু দিন আগেই দক্ষিণ কলকাতা থেকে রাম রাই নামে আন্তঃরাজ্য মাদক পাচার-চক্রের এক চাঁইকে গ্রেফতার করা হয়। নেপালের বাসিন্দা রামের কাছ থেকেও প্রায় এক কিলোগ্রাম চরস মিলেছিল।

গোয়েন্দাদের ধারণা, জেজেরেস্কি বা তার সঙ্গীরাও শহরের বিভিন্ন নেশার ঠেকে মাদক সরবরাহ করত। কিন্তু সেই জায়গাগুলির সন্ধান পায়নি পুলিশ। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ধৃতকে জেরা করা হবে। তার পরেই ওই ঠেকগুলিতে হানা দেওয়া হবে।”

লালবাজার সূত্রের খবর, মাস ছয় আগেই বিদেশিদের এক মাদক পাচার-চক্রের খোঁজ পান গোয়েন্দারা। তার পরেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ‘সোর্স’দের সতর্ক করা হয়। রবিবার সন্ধ্যায় এমনই এক সোর্স জেজেরেস্কির খোঁজ দেয়। মোবাইল মারফত জেজেরেস্কির সঙ্গে যোগাযোগ করেন লালবাজারের নার্কোটিক্স শাখার অফিসারেরা। জেজেরেস্কি তাঁদের হোটেলে যেতে বললেও, অফিসারেরা যেতে চাননি। বরং ওই বিদেশিকেই পেট্রোল পাম্পে আসতে বলে পুলিশ।

লালবাজার সূত্রে খবর, পুলিশ দেখে অভিযুক্ত বিদেশি পালিয়ে যেতে পারেন, এই আঁচ করে ছদ্মবেশের আশ্রয় নেন গোয়েন্দারা। সোমবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ নার্কোটিক্স শাখার ওসি মৃগাঙ্ক দাস এবং তিন সাব-ইনস্পেক্টর অমিত চট্টোপাধ্যায়, সাধন মণ্ডল ও সুব্রত সাহা ওই পেট্রোল পাম্পের আশপাশে ওত পাতেন। কেউ সাজেন মুটে, কেউ বা রিকশাচালক। সকাল সাতটা নাগাদ জেজেরেস্কি এলে তাকে পাকড়াও করা হয়। অভিযুক্তের ভোজালির কোপে মৃগাঙ্কবাবুর হাত ও অমিতবাবুর পা জখম হয়েছে। তাঁদের মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।

পুলিশ জানায়, অভিযুক্তকে এ দিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হয়। তাকে ৮ মে পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

jejeresky jack smuggler
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy