Advertisement
E-Paper

শহরে বাড়ছে নতুন মাদকের কারবারও, উদ্বিগ্ন লালবাজার

শহরে পার্টির মরসুমে বাড়ছে মাদক পাচার। বাড়ছে মাদক পাচারকারীর সংখ্যাও। হোটেল বা নাইট ক্লাবে হানা দেওয়া ছাড়াও সোর্স মারফত খবরের মাধ্যমেও বেশি মাদক আটক হচ্ছে প্রতি বছর। এমনই তথ্য উঠে আসছে লালবাজারের গোয়েন্দাদের তরফে। তাঁরা জানিয়েছেন, চলতি নেশার বস্তু ছাড়াও নতুন ধরনের নেশার সামগ্রীও বাজেয়াপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা থেকে।

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২১

শহরে পার্টির মরসুমে বাড়ছে মাদক পাচার। বাড়ছে মাদক পাচারকারীর সংখ্যাও। হোটেল বা নাইট ক্লাবে হানা দেওয়া ছাড়াও সোর্স মারফত খবরের মাধ্যমেও বেশি মাদক আটক হচ্ছে প্রতি বছর। এমনই তথ্য উঠে আসছে লালবাজারের গোয়েন্দাদের তরফে। তাঁরা জানিয়েছেন, চলতি নেশার বস্তু ছাড়াও নতুন ধরনের নেশার সামগ্রীও বাজেয়াপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা থেকে।

গোয়েন্দারা আরও জানান, এ রাজ্যে হেরোইন সাধারণত ঢোকে বাংলাদেশ থেকে বনগাঁ সীমান্ত হয়ে। অসম, মণিপুর ও নাগাল্যান্ড থেকে মূলত আসে গাঁজার জোগান। নেপাল থেকে আসে হেরোইন, গাঁজা ও চরস। চরসের জোগান আসে হিমাচলপ্রদেশ থেকেও। তাই পার্টির মরসুমে শহরে ঢোকার বিভিন্ন পথে এবং বাজারগুলিতে নজরদারি চালানো হয়। হানা দেওয়া হয় পার্ক স্ট্রিট, শেক্সপিয়র সরণি বা আলিপুর এলাকার বিভিন্ন নাইট ক্লাব ও হোটেলেও। গত বছর নভেম্বরে এ ভাবেই হানা দিয়ে নিউ মার্কেট এবং তালতলা থেকে দুই ব্যবসায়ীকে পাকড়াও করেছিলেন গোয়েন্দারা। মিলেছিল ৬০ কেজি গাঁজা এবং ৩ কেজি চরস।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, তাদের তরফেও হুগলি, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, বনগাঁ, ঘুটিয়ারিশরিফ, বাটানগরের মতো কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। আগে এই ধরনের অভিযান মাসে দু’তিন বার চালাতে হলেও পার্টির মরসুমে তা ৮-১০ বারও চালাতে হয় বলে দাবি গোয়েন্দাদের। সূত্রের খবর, অধিকাংশ ক্ষেত্রে গরিব ছেলেমেয়েরাই পয়সার লোভে মাদক পাচার করেন। পাশাপাশি, গত কয়েক বছরে পোল্যান্ড, নাইজেরিয়া-সহ বিভিন্ন বিদেশি যুবকও মাদক পাচারের দায়ে ধরা পড়েছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের হাতে।

পুলিশকর্তাদের মতে, অভিজাত এলাকাগুলির হোটেল এবং নাইট ক্লাবে পুজোর পর থেকেই পার্টির সংখ্যা বাড়তে থাকে। তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয় বড়দিন এবং বর্ষবরণের সময়ে। হোটেল বা নাইট ক্লাব ছাড়াও বহুতলের ছাদে, পার্কে বা নিজেদের বাড়িতেও অনেকে এই ধরনের আসর বসান। কয়েক বছর আগেও পার্ক স্ট্রিট, শেক্সপিয়র সরণি, আলিপুর, পাটুলি-সহ গড়িয়া, সোনারপুরের মতো এলাকায় ছিল ‘পার্টি অ্যানিম্যাল’দের অবাধ যাতায়াত। এখন পার্টির পরিধি ছড়িয়ে গিয়েছে নিউ টাউন, বাইপাস, বিধাননগরের মতো এলাকাগুলিতেও। ওই সব জায়গার নাইট ক্লাব, পাব বা হোটেলে পার্টি চলার সময়ে বহু জায়গাতেই চলে নিষিদ্ধ মাদক সেবন।

পুলিশ জানাচ্ছে, সাধারণত হোটেল, পাব বা নাইট ক্লাবের পার্টিতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বহু মানুুষের ভিড় থাকে। কিন্তু রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় মাদক চক্র। যা প্রচলিত ভাবে ‘রেভ পার্টি’ নামে প্রচলিত।

গোয়েন্দারা জানান, এই সব পার্টিতে গাঁজা, ক্রিস্টাল মেথ, এলএসডি, হাসিস, কোকেন, হেরোইন ছাড়াও নাইট্রোসাম, স্প্যাজমোপ্রক্সিভন, সেকোবারবিটাল, ফেনমেট্রাজিন, মিথাকুইনোন, অ্যালপ্রাজোলাম, অ্যাটিভান, ক্যাম্পোস এমন বহু অপ্রচলিত বা স্বল্প প্রচলিত মাদক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দেখা যায় এই সমস্ত মাদক বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়েও সেবনের প্রবণতাও।

এই মাদক চক্র রুখতে কী ব্যবস্থা নেয় পুলিশ? গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, সারা বছর স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে প্রচার চালানো হয়। পুজো, বড়দিন বা বর্ষবরণে অতিরিক্ত পুলিশি নজরদারি তো থাকেই। এ ছাড়াও শপিং মল, বার, হোটেল, পাবগুলিতেও চলে চিরুনি তল্লাশি।

পাশাপাশি, পার্টি চলাকালীন নাইট ক্লাবগুলিতে নিজেদের সোর্সের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় পুলিশ। সাদা পোশাকেও হাজির থাকেন প্রচুর পুলিশকর্মী। কলকাতা পুুলিশের এলাকা ছাড়া জেলাতেও নিজেদের সোর্সের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, পুরনো মাদক বিক্রেতা বা নেশাড়ু ছাড়াও সোর্স হিসেবে ব্যবহার করা হয় সাধারণ মানুষ, সেলিব্রিটি ও লাস্যময়ী মহিলাদের। মাদক পাচারকারী কেউ ধরা পড়লে সর্বোচ্চ শাস্তি ২০ বছরের কারাবাস। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “সোর্সের মাধ্যমে সরাসরি সারা বছর আমাদের রুটিন নজরদারি থাকেই। পার্টির মরসুমেও কোথাও কোনও খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিই।”

avik bandyopadhyay drugs
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy