Advertisement
E-Paper

সৌজন্যে এসি, বাড়ছে রাতের বিদ্যুৎ চাহিদাও

এই গরমেও রাতের ঘুমটা কিন্তু মন্দ হচ্ছে না গড়িয়ার বলাইবাবুর স্ত্রী-মেয়ের। রাত বারোটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত দিব্যি এসি চলছে ঘরে। ঘুমোতে কষ্ট হচ্ছে না বলাইবাবুরও। তবে সকালে উঠে এসি বন্ধ করার সময়ে এক বার ঘড়ির দিকে তাকান তিনি। মনে মনে হিসেব করে নেন, এ মাসের বিদ্যুতের বিল কোথায় পৌঁছতে পারে!

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৪ ০০:২৪
জমিয়ে চলছে বিক্রিবাটা। রবিবার।  ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

জমিয়ে চলছে বিক্রিবাটা। রবিবার। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

এই গরমেও রাতের ঘুমটা কিন্তু মন্দ হচ্ছে না গড়িয়ার বলাইবাবুর স্ত্রী-মেয়ের। রাত বারোটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত দিব্যি এসি চলছে ঘরে। ঘুমোতে কষ্ট হচ্ছে না বলাইবাবুরও। তবে সকালে উঠে এসি বন্ধ করার সময়ে এক বার ঘড়ির দিকে তাকান তিনি। মনে মনে হিসেব করে নেন, এ মাসের বিদ্যুতের বিল কোথায় পৌঁছতে পারে!

শুধু বলাইবাবুই নন, এপ্রিল মাসের তীব্র গরমে শহরের আম-মধ্যবিত্তের ঘরেও এসি ব্যবহারের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। রাতভর এসি চালিয়ে ঘুমোচ্ছেন কর্তা-গিন্নি-ছেলে-মেয়েরা। এখনও যাঁরা কিনে উঠতে পারেননি, তড়িঘড়ি ছুটছেন শো-রুমে। এপ্রিলে যদি না-ও হয়, পয়লা মে থেকে এসি-তে ঘুমোতেই হবে, এমন আব্দারও কান পাতলে আকছার শোনা যাচ্ছে।

এসি-র ব্যবহার যে বাড়ছে, তা মেনে নিয়েছেন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার কর্তারাও। রাতভর এসি চালানো ছাড়াও প্রতিদিন গড়ে ২০০-৩০০টি এসির লাইন নেওয়ার আবেদনপত্র জমা পড়ছে তাঁদের অফিসে। সিইএসসি সূত্রের খবর, ২০১২ সালে এপ্রিল থেকে জুন মাসের (গরমকালে) মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার নতুন এসি-র আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। এ বছর পয়লা এপ্রিল থেকে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সাড়ে দশ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। গরমের এই রূপ দেখে সিইএসসি কর্তাদের অনুমান, এ বছরের জুনের শেষে গিয়ে ২০১২ সালকে টপকে যেতে পারে এসি-র আর্জিপত্র। দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ছুঁয়ে ফেলতে পারে ২০০০ মেগাওয়াটের ঘর। এ সবের জেরেই এক লাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। সিইএসসি সূত্রের খবর, এপ্রিল মাসে গত কয়েক দিন ধরে গড় বিদ্যুৎ চাহিদা ১৯০০ মেগাওয়াট ছুঁইছুঁই। এপ্রিল মাসেই এমন বিদ্যুতের চাহিদা এর আগে দেখা যায়নি বলেই সংস্থা সূত্রের খবর। সিইএসসি-র ইতিহাসে এ যাবৎ কালে সব থেকে বেশি বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ২০১২ সালের ৪ জুন। সে দিন কলকাতায় ১৯০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল। এ বছরের এপ্রিল অবশ্য তাকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে। সিইএসসি জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটের সময়ে শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৮৮৫ মেগাওয়াট!

কিন্তু এ সবের বাইরেও সিইএসসি কর্তারা অবাক হয়েছেন রাতের বিদ্যুতের চাহিদা দেখে। গত কয়েক বছরে গরম কালে রাতে গড়ে ৭০০-৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকত। এ বছর সেটা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১০০ মেগাওয়াটে। সাধারণত রাতে অফিস-কাছারি-বাজার বন্ধ থাকে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা সামগ্রিক ভাবে কম থাকে। মূলত গৃহস্থ বাড়িতেই বিদ্যুৎ লাগে তখন। “এ বছর গৃহস্থবাড়ির বিদ্যুতের চাহিদাই দোকান-বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে।”মন্তব্য এক সিইএসসি কর্তার। সিইএসসি ছাড়াও শহর লাগোয়া বহু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। সংস্থার কর্তারা জানিয়েছেন, গরমের দাপটে বিদ্যুতের চাহিদা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তাঁদেরও। যার মোকাবিলায় শহরতলি বা মফসস্লে নতুন ফিডার বক্স বসানো কিংবা ট্রান্সফর্মারের মেরামতি করছে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা।

বস্তুত এসি যে এখন শুধুই উচ্চবিত্তের ব্যবহার্য পণ্য নয়, তা জানাচ্ছেন বিভিন্ন বৈদ্যুতিন পণ্য শো-রুমের কর্তারাও। সে কারণেই হঠাৎ করে এসি-র বিক্রি বেড়ে গিয়েছে। গত বছর গরমে যে দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৪০টি এসি বিক্রি হত, এ বছর তা প্রায় ৮০ ছুঁয়েছে। রবিবার দুপুরেই বিবাদী বাগের একটি দোকানে এসি কিনতে এসেছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের অজয় চক্রবর্তী। বেসরকারি সংস্থার চাকুরে অজয়বাবুর বাড়িতে ছোট বাচ্চাও রয়েছে। তিনি বলছেন, “যা গরম পড়েছে, তাতে এসি কিনতেই হচ্ছে। তা ছাড়া, গরমের হাত থেকে বাচ্চাকে সুস্থ রাখার জন্যও এসি দরকার।”

একটি দোকানের ম্যানেজার মলয় সরকার বলছেন, এসি কিনতে এলে বিভিন্ন সংস্থা সহজ কিস্তিতে শোধ করার শর্তে ঋণও দিচ্ছে। তার ফলে মধ্যবিত্তেরা এসি কেনার ক্ষেত্রে অনেক স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন। সাধারণ ভাবে একটি এসি-র দাম ২৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার মধ্যে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ টাকা ক্রেতাকে এককালীন দিতে হচ্ছে। বাকিটা ঋণ হিসেবে মিলছে। কয়েকটি স্কিমে আবার পুরোটাই ঋণ। ক্রেতাকে আপাতত নগদে দিতে হচ্ছে না কিছুই। এর ফলে এসি-র চাহিদা এত বেড়েছে, যে সময় মতো এসি বাড়িতে পৌঁছে গেলেও লাগানোর লোক মিলছে না। একটি দোকানের কর্তা জানান, এখন এসি কেনার পরে তা লাগানোর জন্য ক্রেতাকে দশ-বারো দিনও অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

এ নিয়ে কী বলছেন আম-মধ্যবিত্তেরা?

তাঁরা বলছেন, গত কয়েক বছরে রাতে ঘণ্টা দুয়েক এসি চালালেই ঘর ঠান্ডা হত। তার পরে এসি বন্ধ করে ফ্যান চালালেই ঘুমোনো যেত। কিন্তু এ বার তা হচ্ছে না। বরং এসি বন্ধ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘাম হচ্ছে। ফ্যান চালালেও! এক বেসরকারি সংস্থার চাকুরে শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাত এগারোটা থেকে ভোর ছ’টা পর্যন্ত টানা এসি না চালালে ঘুমোতে পারছি না।” আর বিদ্যুতের বিল?

এ দিন দুপুরে একটি শো-রুম থেকে এসি কিনে বেরোনোর সময় এক যুবক বললেন, “বিল যা হয় হোক। রাতের ঘুম না হলে আরও ক্ষতি হবে!”

রোজ সকালে বিলের হিসেব করার সময় এটাও ভাবেন বলাইবাবু!

সহ প্রতিবেদন: কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়

electricity bill ac pinaki bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy