Advertisement
E-Paper

সিন্ডিকেট-যুদ্ধে দলের হস্তক্ষেপ, এলাকায় র‌্যাফ

বন্ধ গুমটির বাইরে দরমার বেড়ায় লেখা দু’জনের নাম এবং ফোন নম্বর। নীচে লেখা: সুলভ মূল্যে ইট, বালি, স্টোন চিপস সরবরাহ করা হয়। গুমটি থেকে একটু দূরেই রাস্তার ধারের একটা বিদ্যুতের খুঁটিতে লেখা রয়েছে আরও দু’টি নাম এবং ফোন নম্বর। এখানেও লেখা, ওই ব্যক্তিরা সুলভ মূল্যে ইট, বালি, স্টোন চিপ্স সরবরাহ করেন। নিউ টাউনের রামকৃষ্ণপল্লিতে এই ফোন নম্বরগুলিই হল সিন্ডিকেটের এক-একটা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ০২:৩৫
তৃণমূল ভবনে সাংবাদিকদের সামনে উত্তেজিত পার্থ চট্টোপাধ্যায়।  নিজস্ব চিত্র

তৃণমূল ভবনে সাংবাদিকদের সামনে উত্তেজিত পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

বন্ধ গুমটির বাইরে দরমার বেড়ায় লেখা দু’জনের নাম এবং ফোন নম্বর। নীচে লেখা: সুলভ মূল্যে ইট, বালি, স্টোন চিপস সরবরাহ করা হয়।

গুমটি থেকে একটু দূরেই রাস্তার ধারের একটা বিদ্যুতের খুঁটিতে লেখা রয়েছে আরও দু’টি নাম এবং ফোন নম্বর। এখানেও লেখা, ওই ব্যক্তিরা সুলভ মূল্যে ইট, বালি, স্টোন চিপ্স সরবরাহ করেন।

নিউ টাউনের রামকৃষ্ণপল্লিতে এই ফোন নম্বরগুলিই হল সিন্ডিকেটের এক-একটা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম। বড় বড় সিন্ডিকেটের মতো যাদের নিজস্ব ‘অফিসঘর’ নেই, তাদের অনেকেই সিন্ডিকেট চালান পানের দোকান থেকে, কেউ বা আবার চায়ের দোকান থেকেও। নিউ টাউনের ঘুনি মৌজার ছোট্ট এলাকা এই রামকৃষ্ণপল্লিতেই রয়েছে এমন ছোট-বড় ২৫টির মতো সিন্ডিকেট।

এলাকার এই রমরমা ব্যবসাই রবিবার সকাল থেকে বন্ধ। বড় সিন্ডিকেট অফিসের ঝাঁপ খোলা হয়নি সকাল থেকেই। শনিবার ‘আপনজন’ সিন্ডিকেটের সামনে তুলকালাম হওয়ার পর থেকেই আর খোলেনি সে সব অফিস। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গোলমালের আশঙ্কায় পুলিশ কয়েকটি সিন্ডিকেটের অফিস এ দিন সকাল থেকে বন্ধ করে দিয়েছে।

কিন্তু তাতেই কি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে? এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, রাস্তায় ঘুরছে র‌্যাফের গাড়ি। কিন্তু এর মধ্যেও এলাকায় চক্কর কাটছে বাইকবাহিনী। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, রামকৃষ্ণপল্লিতে গোলমাল না হলেও এ দিন নিউ টাউনের তারুলিয়াতে দুই গোষ্ঠীর হাতাহাতিও হয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতেই ফের আশঙ্কার সিঁদুরে মেঘ দেখছেন রামকৃষ্ণপল্লির বাসিন্দারা। তাঁদের আশঙ্কা, এলাকায় র‌্যাফের ঘোরাফেরা বন্ধ হলেই, পুলিশের নজরদারি কমলেই রামকৃষ্ণপল্লি এলাকায় ফের অশান্তি শুরু হবে।

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মতে, এলাকার বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত ও সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের মধ্যে মতবিরোধ মিটলে তবেই একমাত্র এলাকায় শান্তি আসতে পারে। যদিও তার এখনই কোনও সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন না তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলেরই এক স্থানীয় নেতা জানান, গত পঞ্চায়েত ভোটে জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে কাকে টিকিট দেওয়া হবে, তা নিয়েই অশান্তির শুরু। ওই নির্বাচনের পরে পঞ্চায়েত প্রধান কে হবেন, তা নিয়েও গোলমাল শুরু হয়। ওই নেতার মতে, টিকিট পাওয়ার দৌড়েও জিতেছিলেন সব্যসাচী দত্তের অনুগামীরা, পঞ্চায়েত প্রধানের পদও পান তাঁর পছন্দের লোক। এর পরেই এলাকা ও সিন্ডিকেটগুলোর একটা বড় অংশ ক্রমশ সব্যসাচীর অনুগামীদের ‘দখলে’ চলে যায়। ওই নেতার অভিযোগ, এ নিয়ে তিক্ততা ক্রমশই বাড়তে থাকে বিধায়ক ও সাংসদের মধ্যে।

কোনও ঘটনাই আমাদের দৃষ্টির বাইরে নেই। এটা আমাদের দলের ব্যাপার। আমাদের উপরেই ছেড়ে দিন!

পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূলের মহাসচিব

এই বিরোধ থেকেই গত এক মাস ধরে নানা ধরনের অশান্তি ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা। এলাকার তৃণমূল নেতারা জানান, লোকসভা ভোটে কাকলিদেবী জেতার পর তাঁর অনুগামীরাও এ বার নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে মাঠে নামেন। সম্প্রতি ঠিক হয়েছিল, রবিবার সাংসদের অনুগামীরা ঘুনি এলাকায় একটি বিজয়োৎবের আয়োজন করবেন। সেখানে ৫ হাজার মানুষের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই উৎসবই শনিবারের গোষ্ঠীসংঘর্ষের অন্যতম কারণ বলে মনে করেছেন কাকলিদেবীর অনুগামীরা। উৎসবের এক আয়োজক এ দিন বলেন, “কাকলিদি জিতেছেন বলে এই খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেছি। ঠিক হয়েছিল, এই উৎসবে দেখিয়ে দেওয়া হবে যে আমাদের লোকবল এখন অনেক বেশি। তাই এই উৎসব পণ্ড করতেই শনিবার পরিকল্পনা করেই গোলমাল করা হল।”

যদিও এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন এলাকার বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। তিনি বলেন, “আমি নিজে কোনও সিন্ডিকেট করি না। তবে এলাকাবাসীদের কেউ কেউ সিন্ডিকেট করতেই পারেন। আমি কাউকে বেশি সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিএটা যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন, তা হলে বিধায়ক পদ ছেড়ে দেব।” নাম না করলেও সাংসদকে লক্ষ করেই বিধায়কের বক্তব্য , “২০১১ সাল থেকে এলাকা তো শান্তই ছিল। কেন গত এক মাস ধরে এলাকা অশান্ত হচ্ছে, তা এলাকায় কান পাতলেই শোনা যাবে। গত কয়েক মাসে কারা তৃণমূলে যোগ দিচ্ছে, কাদের মিটিং-মিছিলে থাকছে, তো তা এলাকায় ঘুরলেই বোঝা যাবে!”

বিধায়কের এই অভিযোগের জবাব জানার জন্য বারবার টেলিফোন করা হয়েছিল কাকলিদেবীকে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। তবে দলের মধ্যে একের পর এক গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে জড়িত নেতা-কর্মীদের কাউকেই দল রেয়াত করবে না বলে রবিবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। পার্থবাবুর বক্তব্য, “জড়িতদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। মিলেমিশে থাকতে না পারলে দল যে তা ভাল ভাবে নেবে না, তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

বিধায়ক সব্যসাচীবাবুকে এ দিন বিকেলেই তৃণমূল ভবনে ডেকে পাঠানো হয়। যদিও সব্যসাচীবাবু বলেন, “সিন্ডিকেট নয়, আমাকে মেট্রো সংক্রান্ত বিষয়ে ডাকা হয়েছিল।” এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দলের ভাবমূর্তি যে নষ্ট হচ্ছে এবং তা দল প্রশ্রয় দেবে না, তা বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশিই সব্যসাচীবাবুর সঙ্গে আলাদা ভাবে এ দিন কথা বলেন পার্থবাবু। কথা বলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও। অন্য দিকে, নির্দিষ্ট দিনক্ষণ না জানালেও কাকলিদেবীকেও যে ডাকা হবে সে কথা জানিয়েছেন পার্থবাবু।

পুলিশ জানিয়েছে, নিউ টাউনে শনিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের এ দিন বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক এক দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

aryabhatta khan partha chattapadhyay kakali ghosh dastidar sabyasachi dutta tmc syndicate new town
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy