Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সান্তার ঝোলা থেকে শীতের আশা বড়দিনে

আকাশের থমথমে অবস্থা দেখে মুখ গোমড়া জনতারও। বড়দিনের ছুটিতে বুকে-পিঠে রোদ মেখে ঘোরা যাবে কি না, রাতে কাঁপুনি ধরানো শীত পড়বে কি না— সেই প্রশ্ন তুলছে তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:০৪
Share: Save:

বড়দিনের উৎসব কার্যত শুরু হয়ে যাচ্ছে কাল, শনিবার থেকেই। কিন্তু বৃহস্পতিবারেও আকাশের মুখ ভার। মেঘের আড়াল থেকে সূর্য বাইরে প্রায় এলেনই না। ফলে দিনে ঠান্ডার কামড়। রাতে অস্বস্তিকর আবহাওয়া। আকাশের থমথমে অবস্থা দেখে মুখ গোমড়া জনতারও। বড়দিনের ছুটিতে বুকে-পিঠে রোদ মেখে ঘোরা যাবে কি না, রাতে কাঁপুনি ধরানো শীত পড়বে কি না— সেই প্রশ্ন তুলছে তারা।

হাওয়া অফিস অবশ্য পুরোপুরি নিরাশ করছে না। আবহাওয়ার মতিগতি খতিয়ে দেখে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীদের ধারণা, শেষ পর্যন্ত বড়দিনে মুখ থেকে মেঘের ঘোমটা সরাতে পারে প্রকৃতি। তাঁদের পূর্বাভাস, ডিসেম্বরের শেষ লগ্নে এসে কলকাতা-সহ সারা গাঙ্গেয় বঙ্গেই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে নামতে পারে। জোর বা়ড়তে পারে উত্তুরে হাওয়ার। অতএব শীত।

এ বার সূচনা থেকেই ঠোক্কর খাচ্ছে শীত। কখনও নিম্নচাপ তো কখনও পশ্চিমি ঝঞ্ঝার কবলে প়ড়ে বিগড়ে গিয়েছে তার ছন্দ। এই মুহূর্তে শীতকে বিপাকে ফেলার পিছনে রয়েছে বাংলাদেশ এবং লাগোয়া গাঙ্গেয় বঙ্গের উপরকার একটি ঘূর্ণাবর্ত। বৃহস্পতিবার কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি বেশি। পৌষের এই সময়টায় বাঁকু়ড়া-বীরভূমের মতো রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলায় হাড়কাঁপানো শীত প়ড়ে। কিন্তু হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, ওই সব এলাকাতেও এ বার তেমন শীত নেই। বাঁকুড়ায় এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.৩ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি বেশি। বীরভূম, বর্ধমানেও রাতের তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির আশেপাশে রয়েছে। ওই সব এলাকার নিরিখে এই শীত তেমন কিছুই নয়।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবেই আকাশ এত মেঘলা। রাতের তাপমাত্রাও নামতে পারছে না। আজ, শুক্রবারেও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা উপরের দিকে থাকবে। ‘‘ওই ঘূর্ণাবর্ত কেটে গেলেই রাতের তাপমাত্রা নামবে। উত্তুরে হাওয়ার জোর বা়ড়বে। তাই বড়দিনে শীত মিলবে বলেই মনে করছি আমরা,’’ বলেন সঞ্জীববাবু। হাওয়া অফিসের একটি সূত্র বলছে, বড়দিনে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রির কাছাকাছি নেমে যেতে পারে। আর পশ্চিমের জেলাগুলিতে রাতের তাপমাত্রা আরও অন্তত দু’ডিগ্রি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গভীর নিম্নচাপ, পশ্চিমি ঝঞ্ঝার পরে আপাতত চলছে ঘূর্ণাবর্তের খেল্‌। রাতের তাপমাত্রা না-নামলেও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে দিনের বেলা যে বেশ শীত-শীত ভাব, তার পিছনে ঘূর্ণাবর্তেরই কারিকুরি দেখছেন আবহবিদেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ওই ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবেই জোলো হাওয়া ঢুকছে গাঙ্গেয় বঙ্গের পরিমণ্ডলে। সেই জোলো হাওয়া ঘনীভূত হয়ে তৈরি করছে মেঘ। আর মেঘের চাদরের জন্যই চ়ড়া রোদ উঠতে পারছে না। ফলে বা়ড়ছে না তাপমাত্রা। মেঘ থাকায় রাতে মাটির তাপ বিকিরিত হয়ে আকাশে ফিরে যেতে পারছে না। তাই এই স্যাঁতসেঁতে ঠান্ডা, কখনও আবার ভ্যাপসা ভাব মালুম হচ্ছে।

বড়দিনে সান্তা ক্লজের ঝুলি থেকে শীত বেরোবে বলে হাওয়া অফিস আশ্বাস দিলেও অনেকেই তাতে পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারছেন না। তাঁদের বক্তব্য, এ বার গোড়া থেকেই শীত-ভাগ্য যে-ভাবে নিরাশ করে চলেছে, তাতে এই পূর্বাভাসে খুশি হওয়া মুশকিল। হয়তো দেখা যাবে, দু’-এক দিন পারদ নামতে না-নামতেই ফের কোনও উৎকট বাধা হাজির হয়ে পরিস্থিতি বিগড়ে দিল! এবং ইংরেজি বছরের শেষটাও হয়তো কাটাতে হল গরম নিয়েই...!

সত্যিই তেমনটা হবে কি?

‘‘আবহাওয়া পদে পদে যে-ভাবে খামখেয়ালি আচরণ করে চলেছে, তাতে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা মুশকিল,’’ বলেন এক আবহবিজ্ঞানী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Weather Update Christmas Winter Cold
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE