Advertisement
E-Paper

চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত, কণ্ঠের বদলে কণ্ঠ, ‘ক’-এর বদলে ‘ক’!

আরজি কর আন্দোলন চলাকালীন সিপিএমের যুবনেতা কলতান দাশগুপ্তের সঙ্গে হালতুর সঞ্জীব দাসের কথোপকথন প্রকাশ্যে এনেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিকালে কুণাল তা ফাঁস করেন। সেই অডিয়ো ক্লিপ নিয়েই নতুন দাবি করলেন কুণাল।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৫৫
Kunal Ghosh Claims Police has asked for voice sample of CPM leader Kaltan Dasgupta

(বাঁ দিকে) ‘কালীঘাটের কাকু’ সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, কলতান দাশগুপ্ত (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

তাঁর আজীবনের অহিংস দর্শন থেকে মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘‘চোখের বদলে চোখ নিলে গোটা পৃথিবী অন্ধ হয়ে যাবে।’’ রাজনীতিতে গান্ধীবাদীদের প্রভাব থাকলেও রাজনীতি হিংসামুক্ত হয়নি। বরং পাল্টা দেওয়ার রাজনীতিতে চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত তুলে নেওয়ার কম ঘটনা নেই। কিন্তু কণ্ঠের বদলে কণ্ঠ? বৃহস্পতিবার তেমনই দৃষ্টান্ত তৈরি হল বঙ্গ রাজনীতিতে।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’ শারীরিক কারণে জামিন পেলেও তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ নিয়ে কম আলোচনা হয়নি। কয়েক দিন আগে সেই নমুনা সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। ‘কাকু’র সূত্রেই তদন্তকারীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত নির্দেশে দিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকেও কণ্ঠস্বরের নমুনা দিতে হবে। তার পরেই বৃহস্পতিবার তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ দাবি করলেন, আরজি কর-কাণ্ডের সময়ে ‘হিংসা’ ছড়ানোর অডিয়ো ক্লিপ-কাণ্ডে ধৃত সিপিএমের যুব নেতা কলতান দাশগুপ্তের থেকে তদন্তকারীরা তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা চাইছেন। কিন্তু কলতান তা দিতে রাজি হচ্ছেন না।

প্রসঙ্গত, ‘কাকু’ ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের কর্মচারী। কুন্তল তৃণমূলের যুবনেতা। দু’জনেরই কণ্ঠ নিয়ে প্রায়শই গলা ছাড়ে বাম-সহ বিরোধীরা। দেখা গেল, সেই কণ্ঠস্বর নিয়েই এ বার সিপিএমের কলতানকে বিঁধল তৃণমূল। কণ্ঠের বদলে কণ্ঠ! কাকু, কুন্তলদের পাল্টা কলতান। ‘ক’-এর বদলে ‘ক’। যিনি বিঁধলেন, ঘটনাচক্রে, তিনিও ‘ক’। কুণাল।

কুণাল বৃহস্পতিবার সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘কলতানকে পুলিশ কন্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষার কথা বলেছে। কলতান এবং সিপিএমের উচিত অবিলম্বে এতে সম্মতি দেওয়া। অন্যদের (কাকু, কুন্তল) কণ্ঠস্বরের নমুনা নিয়ে সিপিএমের এত বড় বড় কথা! নিজেদের সৎসাহসের সময় যেন উল্টো না দেখি। অবিলম্বে কণ্ঠস্বর পরীক্ষায় সম্মতি দিক কলতান। দেরি না করে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করুক পুলিশ। যদি ওর কণ্ঠস্বর না হয়, তা হলে ভয়ের কী আছে?’

কণ্ঠস্বরের পাল্টা যে কণ্ঠস্বরই, তা কুণালের বক্তব্যের একটি লাইনেই স্পষ্ট— ‘‘অন্যদের কণ্ঠস্বরের নমুনা নিয়ে সিপিএমের এত বড় বড় কথা। নিজেদের সৎসাহসের সময় যেন উল্টো না দেখি।’’ কলতান অবশ্য কুণালের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জানিয়েছেন, তাঁর কাছ থেকে পুলিশ কণ্ঠস্বরের নমুনা চায়নি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি প্রথম থেকেই তদন্তে সহযোগিতা করছি এবং ভবিষ্যতেও করব। কিন্তু কণ্ঠস্বরের নমুনা চাওয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমায় তদন্তকারীদের পক্ষ থেকে এমন কিছু বলা হয়নি।’’

আরজি কর নিয়ে আন্দোলন তখন তুঙ্গে। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অনির্দিষ্ট কাল অবস্থান চলছিল জুনিয়র ডাক্তারদের। সেই সময়েই কলতানের সঙ্গে হালতুর সঞ্জীব দাসের কথোপকথন প্রকাশ্যে এনেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল। ১৪ সেপ্টেম্বর বিকালে কুণাল তা ফাঁস করেন। সেই রাতেই সঞ্জীবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে দিন কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের অপসারণের দাবিতে সিপিএমের ‘লালবাজার অভিযান’ ছিল। সারা রাত লালবাজারের অদূরে অবস্থান করেছিলেন বাম কর্মীরা। সেখানে কলতানও ছিলেন। পর দিন ভোরে বৌবাজারের অদূরে ফিয়ার্স লেন থেকে কলতান যখন ফিরছিলেন, তখন তাঁকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে কলতান হাই কোর্টের নির্দেশে জামিন পেল‌েও তদম্ত চলছে। সেই তদন্তে কলতানের কণ্ঠস্বরের নমুনা পুলিশ নিতে চাইছে বলে দাবি করলেন কুণাল। কণ্ঠের বদলে কণ্ঠ। কাকুর বদলে কলতান। ‘ক’-এর বদলে ‘ক’!

Kunal Ghosh Kalatan Dasgupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy