Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ওরা বাইরে কেন, প্রশ্ন কুণালের

‘প্রভাবশালী’র তকমা গায়ে সেঁটে তিনি জেলে পচবেন। আর যাঁদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার সচিত্র অভিযোগ, তাঁরা থাকবেন বাইরে! কেন?

ব্যাঙ্কশাল আদালতে কুণাল। মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র।

ব্যাঙ্কশাল আদালতে কুণাল। মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪৯
Share: Save:

‘প্রভাবশালী’র তকমা গায়ে সেঁটে তিনি জেলে পচবেন। আর যাঁদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার সচিত্র অভিযোগ, তাঁরা থাকবেন বাইরে! কেন?

মঙ্গলবার আদালতের সামনে প্রশ্নটি তুললেন তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ। সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে যিনি আপাতত জেলে বন্দি। এ দিন কোর্টে তাঁর হাজিরা ছিল। ইতিমধ্যে ‘নারদ নিউজ’ ওয়েব পোর্টালের ভিডিও ফুটেজ ঘিরে রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এমনকী, এ দিন সংসদের দুই কক্ষেও বিস্তর হইচই হয়েছে, যে খবর কুণালের কানে পৌঁছাতে দেরি হয়নি।

কাঠগড়ায় সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে দ্বিধা করেননি তৃণমূলের সাসপেন্ডেড এমপি। এজলাসে পেড়ে ফেলেছেন ঘুষ-কাণ্ডের প্রসঙ্গ।

কী ভাবে?

সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস মামলায় সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ও তাঁর ‘ছায়াসঙ্গিনী’ দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ দিন কুণালকে আনা হয়েছিল বিচারভবনে। বিচারক অরবিন্দ মিশ্রের এজলাসে তিন জনকে তোলা হয়। কুণালের কৌঁসুলি বিচারকের কাছে পরবর্তী একটি দিন চেয়ে নিচ্ছিলেন। তখনই কুণাল চেঁচিয়ে ওঠেন, ‘‘আমি কিছু বলতে চাই।’’

বিচারক তাঁর দিকে তাকাতেই ক্ষোভ উগরে দেন কুণাল। ‘‘আমি চার দিনের জন্য জামিনের আবেদন করলাম। তখন আমার বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর কথা উঠল!’’— আক্ষেপ তাঁর। পর ক্ষণেই প্রশ্ন, ‘‘স্যার, চার দিনের জামিন চাওয়ায় প্রভাবশালীর তত্ত্ব খাড়া করা হলে, যাঁদের ছবি টিভি’তে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের লোক যাঁদের টাকা নিতে দেখছে, তাঁদের জেলে রেখে তদন্ত হচ্ছে না কেন?’’

বন্দির অনুযোগের উত্তরে বিচারক তাঁকে বলেন পরবর্তী শুনানির দিন বিষয়টি উত্থাপন করতে। শুনে কুণালের জবাব, ‘‘স্যার, প্রচণ্ড যন্ত্রণায় রয়েছি। আমি তো প্রায়শ্চিত্ত করছি। অথচ আমাকে আটকে রেখে বলা হচ্ছে, আমি জামিন পেলে নাকি তদন্তে প্রভাব খাটাব!’’ বিচারক তাঁকে ফের একই কথা বলেন। ২২ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য হয়েছে।

তবে শুধু এজলাসে নয়। এ দিন আদালতে ঢোকা-বেরোনোর পথে সাংবাদিকদের সামনেও কুণাল নারদ-ভিডিও নিয়ে মন্তব্য করেন। কোর্টে ঢোকার আগে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে তিনি প্রথমে বলেছিলেন, ‘‘আমি এ সবের মধ্যে নেই।’’ যদিও একটু থেমে জুড়ে দেন, ‘‘হীরক রাজার দেশে সিনেমাটা সবে মাত্র দেখেছি। যায় যদি যাক প্রাণ, হীরকের রাজা ভগবান।’’

এমতাবস্থায় পুলিশ তাঁকে খানিকটা জোর করেই আদালতের ভিতরে টেনে নিয়ে যায়। শুনানি সেরে বেরিয়ে কুণাল আবার কিছুটা অন্য সুর ধরেন। বলেন, ‘‘আমি এক জন সাংসদ। ভোটের আগে এই ভিডিও (ঘুষ-কাণ্ডের) প্রকাশ্যে এনে দলকে বিব্রত করার চেষ্টা হচ্ছে। আমি কোর্টে যাব। এফআইআর করব। আবেদন করব, ভিডিওর যাবতীয় পরীক্ষা করা হোক।’’ এমনকী, ভিডিওটি ভুয়ো প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার ইচ্ছে প্রকাশ করে কুণালের সংযোজন, ‘‘দল আমাকে সেই অনুমতি দিক।’’

কিন্তু এর পরেই ফের তোপ। কুণাল বলতে থাকেন, ‘‘ভিডিও সত্যি প্রমাণিত হলে কী হবে? আমি আটকে থাকব, আর যাঁরা নগদ টাকা নিয়েছেন তাঁরা বাইরে থাকবেন? হতে পারে না। তখন আমি এমপি হিসেবেই হাইকোর্টে যাব।’’

পুলিশ ওঁকে কার্যত পাঁজাকোলা করে পিছনের গেট দিয়ে বার করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kunal ghosh Tmc Jail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE