শ্রাবণের বর্ষণেও জল-জঙ্গলে ঘেরা ঝাড়গ্রামে পর্যটকদের আনাগোনা চলছে। সপ্তাহান্তের ছুটিতে ভিড় জমছে ভালই। পুজোর আগাম বুকিংও প্রায় শেষ। কিন্তু এর মধ্যেই অস্বস্তির কাঁটা, ‘সৌজন্যে’ কুড়মিদের অবরোধ আন্দোলন। সেটি হওয়ার কথা সেপ্টেম্বরে। এর আগে, টানা অবরোধে মানুষের বিস্তর দুর্ভোগ হয়েছিল। মনে করা হচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটে কুড়মি প্রার্থীদের আশানুরূপ ফল না হওয়ার অন্যতম কারণ এই দুর্ভোগ। আন্দোলনের জন্য যেন মানুষকে সমস্যায় পড়তে না হয়, পঞ্চায়েত ভোটের পরে জেলায় এসে এই আবেদন
রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ফলে, অবরোধ-বিক্ষোভ নিয়ে কুড়মি সংগঠনগুলিও দ্বিধাবিভক্ত।
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর খড়্গপুরের খেমাশুলিতে রেল অবরোধের ডাক দিয়েছে ‘মূলমানতা’ (মুখ্য উপদেষ্টা) অজিতপ্রসাদ মাহাতোর নেতৃত্বাধীন আদিবাসী কুড়মি সমাজ। গত বছরও সেপ্টেম্বরে ও চলতি বছরে এপ্রিলে পাঁচ দিন ধরে রেল ও সড়ক অবরোধ চলেছিল। কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ)-সহ বেশ কিছু সংগঠন এ বারের অবরোধকে সমর্থন করছে না। সংগঠনের নেতা রাজেশ মাহাতো সরাসরিই বলছেন, ‘‘জনজীবন বিপর্যস্ত করে আন্দোলন করলে আমরা জনসমর্থন হারাব। তাই পিছিয়ে এসেছি।’’ উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর থেকেই কুড়মি সমাজের একাংশ বেশ নমনীয়। তবে অজিতের বক্তব্য, ‘‘তিন মাসে আগে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে আমাদের দাবি জানিয়েছি। কেউ আলোচনায় বসেনি। তাই কুড়মিদের সব সংগঠনকে আহ্বান জানাব, অবরোধে শামিল হওয়ার জন্য। কেউ না এলেও অবরোধ কর্মসূচি হবে।’’ রাজেশ বলেছেন, ‘‘সমাজের আন্দোলন যাতে সফল হয় তার শুভেচ্ছা রইল।’’
প্রশ্ন উঠেছে, কুড়মিদের এই আন্দোলনের পিছনে অন্য কোনও প্রশ্রয় আছে কি? ঝাড়গ্রামের জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু নাম না করে বিজেপিকে দুষে বলেন,
‘‘এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’’ অজিত অবশ্য বলেন, ‘‘জাতিসত্তার আন্দোলনের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।’’ বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর পাল্টা দাবি, ‘‘ঝাড়গ্রামে মমতা এসে কুড়মিদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে দিয়েছেন। বিভাজনের রাজনীতি বিজেপি করে না।’’
রাজনীতির এই টানাপড়েনে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। স্বাধীনতা দিবসের ছুটিতে জেলায় প্রচুর পর্যটক এসেছেন। পুজোর অধিকাংশ বুকিং সারা। ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন কর্মকার সে কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘এর পরে অবরোধ বা বন্ধ হলে প্রভাব তো পড়বে।’’ ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগরওয়ালের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘চেষ্টা করব, যাতে অবরোধ না হয়। প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)