রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় উদ্ধার হওয়া দেহ দ্রুত শনাক্ত করতে গত বছর একটি অ্যাপ বা পোর্টাল চালু করেছিল রাজ্য পুলিশ। মূলত অজ্ঞাতপরিচয় দেহের শনাক্তকরণে গতি আনতেই ওই ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ অ্যাপটি চালু হয়েছিল। যাতে কলকাতা পুলিশ এলাকা, রাজ্যের প্রতিটি জেলা এবং কমিশনারেট এলাকায় কারও অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে তাঁর ছবি-সহ বিস্তারিত তথ্য পুলিশকর্মীদের আপলোড করতে বলা হয়েছিল।
অভিযোগ, কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন থানা ওই নির্দেশ মেনে ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ অ্যাপে দেহের বিস্তারিত তথ্য কিংবা ছবি আপলোড করছে না। অনেক ক্ষেত্রে দেহ উদ্ধারের দিন সেই তথ্য আপলোড না করে পরে করা হচ্ছে। ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ অ্যাপের যথাযথ ব্যবহারের জন্য এ বার থানাগুলিকে নির্দেশ দিল লালবাজার। সূত্রের দাবি, কলকাতা পুলিশ এলাকার সব থানা যাতে ওই নির্দেশ মেনে ছবি-সহ বিস্তারিত তথ্য যথাযথ সময়ে আপলোড করে, তার জন্য থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে লালবাজারের তরফে ওসিদের ওই অ্যাপ ব্যবহারের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট থানা এলাকায় চলতি বছরে কতগুলি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে কতগুলি ওই অ্যাপে তোলা হয়েছে, তা-ও জানাতে বলা হয়েছে বলে সূত্রের দাবি।
এক পুলিশকর্তা জানান, কিছু থানা ওই নির্দেশ মেনে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে দেহের ছবি তোলা এবং ময়না তদন্তের আগে তা অ্যাপে দেওয়ার নিয়ম অনুসরণ করছে না বলে নজরে এসেছে। ফলে, ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ অ্যাপে সময় মতো সব তথ্য মিলছে না। যার জন্য অনেক সময়ে অজ্ঞাতপরিচয় দেহের শনাক্তকরণও হচ্ছে না।
পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন থানা এলাকায় প্রতিদিন উদ্ধার হওয়া দেহের একটি বড় অংশ শনাক্ত না হয়ে মর্গে পড়ে থাকে। দেহের শনাক্তকরণে গতি আনতে এই অ্যাপ চালু করা হয়েছিল। অভিযোগ, পুলিশকর্মীরা তা না মানায় অ্যাপের আসল উদ্দেশ্যই সিদ্ধ হচ্ছে না।
সিআইডির তরফে গত বছর ওই অ্যাপ তৈরি করা হয়। গত জুলাই থেকে সেটি কার্যকর হয়। এর জন্য প্রতিটি থানায় একটি করে ট্যাব দেওয়া হয়েছিল। কোথাও কোনও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ অফিসারদের ওই ট্যাব নিয়ে সেখানে পৌঁছে সরাসরি দেহের ছবি তুলে অ্যাপে তুলে দেওয়ার কথা। মৃতের পরিচয় জানা থাকলে সেটিও তোলার নির্দেশ রয়েছে। আবার মৃতদেহের পরিচয় জানা না গেলে, তা-ও উল্লেখ করতে বলা হয়েছে অ্যাপে। কোন থানা এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, তা নথিভুক্ত করার পাশাপাশি কোথায় ময়না তদন্ত করা হবে, তা-ও অ্যাপে তুলতে বলা হয় অফিসারদের। যাতে অজ্ঞাতপরিচয় কোনও দেহ উদ্ধার হলে যে কোনও থানা ওই অ্যাপে দেওয়া দেহের ছবির সঙ্গে নিখোঁজ ব্যক্তির তথ্যভান্ডার মিলিয়ে দেখে নিতে পারেন। কিন্তু থানাগুলি সব তথ্য না দেওয়ায় ওই কাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে বলে মত পুলিশের একাংশের।
উল্লেখ্য, ওই অ্যাপের মাধ্যমে পুলিশের পাশাপাশি নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবারও অস্বাভাবিক মৃত্যু হওয়া অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির ছবি দেখতে পান।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)