Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
জল ঢুকল বহরমপুরেও

মিলছে না ত্রাণ, ফুঁসছে বড়ঞা

টানা তিন দিন জলবন্দি হয়ে রয়েছে বড়ঞার বিস্তীর্ণ এলাকা। অথচ প্রশাসনের তরফে কেউই সেখানে যাননি। যাতায়াতের জন্য ব্যবস্থা করা হয়নি নৌকারও। এমনই অভিযোগ তুলে সোমবার দফায় দফায় হলদিয়া-ফরাক্কা বাদশাহি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন বৈদ্যনাথপুর ও সোনাভারুইয়ের বাসিন্দারা। অভিযোগ, শুক্রবার রাতের বৃষ্টির পরে ওই এলাকার প্রায় দশ হাজারেরও বেশি পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়ে।

বৈদ্যনাথপুরে বাঁধ ভেঙে ঢুকছে জল। ডানদিকে, রাস্তা ডুবে গিয়েছে। সাটুইয়ে নৌকা নিয়ে যাতায়াত স্থানীয় বাসিন্দাদের। গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

বৈদ্যনাথপুরে বাঁধ ভেঙে ঢুকছে জল। ডানদিকে, রাস্তা ডুবে গিয়েছে। সাটুইয়ে নৌকা নিয়ে যাতায়াত স্থানীয় বাসিন্দাদের। গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

কৌশিক সাহা ও সুজাউদ্দিন
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০১:৪৯
Share: Save:

টানা তিন দিন জলবন্দি হয়ে রয়েছে বড়ঞার বিস্তীর্ণ এলাকা। অথচ প্রশাসনের তরফে কেউই সেখানে যাননি। যাতায়াতের জন্য ব্যবস্থা করা হয়নি নৌকারও। এমনই অভিযোগ তুলে সোমবার দফায় দফায় হলদিয়া-ফরাক্কা বাদশাহি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন বৈদ্যনাথপুর ও সোনাভারুইয়ের বাসিন্দারা।
অভিযোগ, শুক্রবার রাতের বৃষ্টির পরে ওই এলাকার প্রায় দশ হাজারেরও বেশি পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়ে। অথচ প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি। স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষও ‘কিছুই করার নেই’ বলে দায় এড়িয়েছেন। এ দিকে, বৈদ্যনাথপুর গ্রামে ঢোকার মোরামের রাস্তায় দু’জায়গা ধসে যাওয়ায় ওই এলাকাও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সোমবার সকালে সুন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের নজরুল হক বৈদ্যনাথপুর মোড়ে যেতেই স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে আটকে বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধ শুরু করেন। পরে সেখানে একটি নৌকার ব্যবস্থা করা হলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা পিন্টু শেখ, ফুলচাঁদ শেখেরা বলেন, ‘‘তিন দিন ধরে জলবন্দি হয়ে রয়েছি। এখনও ত্রাণ আসেনি। নলকূপ ডুবে যাওয়ায় পানীয় জলও মিলছে না। প্রশাসন এক ট্রাঙ্ক পানীয় জল পাঠালেও সে জল পানের অযোগ্য।” প্রধান নজরুল হক বলেন, “বৈদ্যনাথপুরে ক্যাম্পে রান্না করে বাসিন্দাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যান্য জলবন্দি এলাকাতেও এই ব্যবস্থা করা হবে।’’ তিনি জানান, পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। তবে দু’টি নৌকা পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি সোনাভারুই, জাওহাড়ি ও বড়ঞা গ্রামের বাসিন্দাদের পারাপারের জন্য দেওয়া হয়েছে। মজলিশপুরের বাসিন্দা তথা সুন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য আলাউদ্দিন শেখ বলেন, “বিভিন্ন মহলে আর্জি জানিয়েও একটি ত্রিপল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ক্যাম্প করে যে বাসিন্দাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করব সেই জায়গাটুকু পর্যন্ত জলে ডুবে রয়েছে। স্থানীয় স্কুলে জল ঢুকে গিয়েছে। জলবন্দিরা কী ভাবে আছেন তার জানার প্রয়োজন মনে করেনি প্রশাসন।’’

এ দিন দফায় দফায় বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধের পরে অবশ্য বড়ঞা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তরফে বৈদ্যনাথপুরের মোড়ে একটি ক্যাম্প করা হয়। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কুন্তল ঘোষ বলেন, “মঙ্গলবার থেকে সুন্দরপুর এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার জন্য বাদশাহি সড়কের উপরে একটি ভ্রাম্যমাণ ক্যাম্প চালু করা হবে।’’ কান্দির মহকুমাশাসক বিজিন কৃষ্ণ বলেন, “প্রশাসন কিছুই করছে না, এমন অভিযোগ ঠিক নয়। প্রথম থেকেই আমরা গোটা পরিস্থিতির উপরে নজর রেখেছি। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ত্রাণের জিনিসপত্র যাতে জলবন্দি এলাকার বাসিন্দারা পান তা দেখতে। তৈরি করা হয়েছে মেডিক্যাল টিমও। তবে এটা ঠিক যে, চাহিদার তুলনায় নৌকার অভাব রয়েছে।’’ এ দিন সকাল থেকে অবশ্য কান্দি-সালার রাজ্য সড়ক ও হলদিয়া-ফারাক্কা বাদশাহি সড়কের উপর থেকে জল কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

সোমবার সুন্দরপুরে ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিলেন রাজ্য যুব তৃণমূলের সহ সভাপতি সৌমিক হোসেন। সৌমিক বলেন, “মুর্শিদাবাদের জেলা পরিষদ থেকে বড়ঞা বিধানসভা সবই কংগ্রেসের দখলে আছে। অথচ ওরা জলবন্দি এলাকার বাসিন্দাদের জন্য কিছুই করেনি।” কিন্তু সুন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত তো তৃণমূলের দখলে রয়েছে। তারা কিছু করল না কেন? সৌমিকের কাছে অবশ্য সে প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মেলেনি। কংগ্রেসের মুর্শিদাবাদ জেলার মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “বন্যায় মানুষ বিপন্ন। এই পরিস্থিতিতে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে তৃণমূল। এই নোংরা রাজনীতি কংগ্রেস করে না। অধীর চৌধুরীর নির্দেশে বড়ঞার বিধায়ক প্রতিমা রজক–সহ ব্লক কংগ্রেসের সকলেই ওই এলাকার মানুষের পাশেই আছেন।’’

অন্য দিকে, সোমবার বাবলা নদীর বাঁধ ভেঙে বহরমপুর ব্লকের সাটুই-সহ বেশ কিছু এলাকা এ দিন জলবন্দি হয়ে পড়েছে। জল ঢুকে যাওয়ায় ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে স্থানীয় স্কুলগুলোতে। এলাকার পাকা সড়ক দিয়েই চলছে নৌকা। সাটুই জুনিয়র গালর্স স্কুলের শিক্ষিকা মৌসুমী বসু রায় বলেন, ‘‘স্কুলে বেরিয়েও এ দিন ফিরে আসতে হয়েছে।’’ সাটুই রাজেন্দ্রনারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির সন্দীপ হালদারের কথায়, ‘‘ফের কবে স্কুলে যেতে পারব জানি না।’’ কেবল ওই দু’টি স্কুলই নয়, এ দিন এলাকার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের সামনের মাঠে সাঁতার কাটতে দেখা গিয়েছে কচিকাঁচাদের।

সাটুইয়ের অদূরে পোড়াডাঙ্গায় রাস্তায় জল উঠে পড়ায় আটকে ছিল বহু গাড়ি। বহরমপুরে বিডিও বর্ণমালা রায় বলেন, ‘‘নলঘোষা, সন্তোষনগর এলাকায় বাঁধ ভেঙে জল ঢুকছে সাটুই এলাকায়। ব্লকের ২৫টা গ্রামের চার হাজার মানুষ এই পরিস্থিতিতে বিপদে পড়েছেন। ২০০ বাড়ির ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। ত্রাণ শিবির চালু করা করা হয়েছে। সাধারণ নৌকার পাশাপাশি সিভিল ডিফেন্সের বোটও নামানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Brawna Lack Trinamool Baharampur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE