কোনও গেট নেই, তাই উঠে গিয়েছে গেট পাস!
অভিযোগ, এর জেরে হাওড়া স্টেশনের পার্সেল বিভাগে আসা মালপত্র পরীক্ষা না করেই স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ট্রেনের পার্সেল ভ্যানে আসা বাক্সবন্দি মালের মধ্যে কোনও বিস্ফোরক আসছে কি না, এ ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র বা মাদক পাচার হয়ে যাচ্ছে কি না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।
হাওড়া স্টেশনের ১ থেকে ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম ও ১৭ থেকে ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে রয়েছে পার্সেল ও লাগেজ বিভাগ। এই দু’টি বিভাগকে ঘিরে দীর্ঘ দিন ধরেই নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। পূর্ব রেল সূত্রে খবর, বছর দুয়েক আগে ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মের পাশে ডিআরএম অফিসের সামনে গেট পাস দেখার দু’টি গেটই ভেঙে ফেলা হয় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য। ফলে ওই গেটে মালপত্র ঢোকা-বেরোনোর জন্য গেট পাস ব্যবস্থা উঠে যায়। পূর্ব রেল সূত্রে খবর, তখন ঠিক হয়েছিল, ওই গেট দিয়ে স্টেশনে মালবোঝাই গাড়ি ঢুকবে। কিন্তু গেট পাস দেখিয়ে বেরোবে এসআরপি অফিসের পাশের রাস্তা দিয়ে। কিন্তু সেই নিয়ম মানা তো দূর, স্টেশনে পার্সেল আসার পরে তা গাড়িতে করে ডিআরএম অফিসের সামনে দিয়েই সোজা চলে যায় স্টেশনের বাইরে, গেট পাস ছাড়াই।
এখান থেকেই শুরু হয়েছে রেলের শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অতিরিক্ত মাল নিয়ে যাওয়ার অসাধু ব্যবসা। অভিযোগ, পার্সেল ভ্যানগুলিতে যেখানে ১৮ থেকে ২২ টন মাল বহনের ক্ষমতা রয়েছে, সেখানে রেলকে জানতে না দিয়ে ২৪-২৫ টন মাল তুলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার হাওড়া স্টেশনে পার্সেল আসার পরে ডেলিভারি কাউন্টারে যেখানে রেলের পক্ষ থেকে তিন কপি কাগজ দেওয়ার কথা, সেখানে শুধুমাত্র রেলওয়ে ডেলিভারি কপি রেখে দিয়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে গেট ক্লার্ক কপি ও ডেলিভারি রসিদ। যে রেলকর্মী মালটি দিচ্ছেন এবং যিনি সেটি গ্রহণ করছেন, রেলওয়ে ডেলিভারি কপিতে তাঁদের সই বাধ্যতামূলক হলেও, তা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। অভিযোগ, তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আরপিএফের সঙ্গে ‘গোপন বোঝাপড়ায়’ সব পার্সেল স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, ‘‘পার্সেল ভ্যানের বুকিং থেকে সেগুলি নির্বিঘ্নে স্টেশনের বাইরে বেরোনো বা ঢোকা, সবটাতেই একটা চক্র রয়েছে।’’
পূর্ব রেল সূত্রে খবর, পার্সেল ও লাগেজ বিভাগে মূলত বুক করা হয় লাগেজ, গৃহস্থালির জিনিস এবং আনাজ, ফল ও মাছ। এই বিভাগগুলিতে প্রায় ২০০ জন ক্লিয়ারিং এজেন্ট রয়েছেন। তাঁদের মাধ্যমেই পার্সেল বুক করা হয়। জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য বর্তমানে রেল আবার পার্সেল ভ্যানগুলিকে লিজ চুক্তিতে বেসরকারি সংস্থা বা ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়ে হাত-পা ঝেড়ে ফেলেছে। শুধু যে স্টেশন থেকে পার্সেল ভ্যানে ওই মাল ওঠে, সেই ভ্যানের ওজন ও অন্য নজরদারির দায়িত্ব পড়েছে আরপিএফের উপরে।
তবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য যে পার্সেল ও লাগেজ বিভাগে নজরদারিতে সমস্যা হচ্ছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন হাওড়ার চিফ পার্সেল অ্যান্ড লাগেজ ইনস্পেক্টর ডি কে গিরি। তবে গেটপাস ও রেলের কাগজে স্বাক্ষর বা সিল ছাড়া যে মাল বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে, তা মানতে রাজি নন ওই রেলকর্তা। তিনি বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। এমন ঘটলে অবশ্যই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy