Advertisement
E-Paper

নিয়ম না মানাই দস্তুর মন্দারমণিতে

মন্দারমণির সৈকতে নামার ঠিক আগে বড় বড় করে লেখা রয়েছে, ‘সি বিচে গাড়ি চালাবেন না।’ কিন্তু এই লেখাই সার। অনেক পর্যটকই এই লেখার দিকে তাকিয়েও দেখেন না। ফলে সৈকত ধরে সাঁ সাঁ ধরে ছুটতে থাকে গাড়ি। আর এমন দুর্ঘটনারই বলি কলকাতার তিন তরুণ।

সুব্রত গুহ

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০১:১২
নির্দেশই সার। সৈকতে দিব্যি চলছে গাড়ি। সোহম গুহর তোলা ছবি।

নির্দেশই সার। সৈকতে দিব্যি চলছে গাড়ি। সোহম গুহর তোলা ছবি।

মন্দারমণির সৈকতে নামার ঠিক আগে বড় বড় করে লেখা রয়েছে, ‘সি বিচে গাড়ি চালাবেন না।’

কিন্তু এই লেখাই সার। অনেক পর্যটকই এই লেখার দিকে তাকিয়েও দেখেন না। ফলে সৈকত ধরে সাঁ সাঁ ধরে ছুটতে থাকে গাড়ি। বিপদ হতেই বা কতক্ষণ। আর এমন দুর্ঘটনারই বলি কলকাতার তিন তরুণ।

রবিবার কাকভোরে সৈকতে তীব্র গতিতে গাড়ি ছোটাতে গিয়ে অন্য একটি গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হল তিনজনের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন বৈভব শাণ্ডিল্য (২১), সুরজ দাশগুপ্ত (২২) এবং শিবরাজ নস্কর (২২)। বৈভব রাজারহাট, সুরজ সন্তোষপুর আর শিবরাজ বেলেঘাটার বাসিন্দা। অন্য গাড়ির সওয়ার দীপেশ রঞ্জন জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।

মাস তিনেক আগে গত ২০ মে মন্দারমণি সৈকতে গাড়ি চালাতে গিয়ে এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছিল। বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনার পর প্রশাসন মন্দারমণি সৈকতে গাড়ি চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এছাড়াও সৈকতে নামার রাস্তায় ড্রপ গেট বসানো ছাড়াও বেশ কিছু সতর্কতামুলক ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। কিন্তু সত্যিই নজরদারি থাকলে কি এ দিনের এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এড়ানো যেত না? কেন বারবার মন্দারমণি সৈকতে একের পর এক মৃত্যু ঘটছে?

আসলে নিষেধ না মানাটই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে মন্দারমণিতে। রাজ্যের অন্যতম সৈকত পর্যটন কেন্দ্র মন্দারমণি সৈকতে গাড়ি চলাচলের উপর প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেই নিষেধাজ্ঞাকে আমল না দিয়েই সৈকতের উপর দিয়ে চলছে অবাধ যান চলাচল। সৈকতে গাড়ি না চালানোর যে নিষেধাজ্ঞা জেলা প্রশাসনের তরফে ২০১৪ সালে জারি করা হয়েছিল, সেখানেই দায়িত্ব সেরে ফেলেছে প্রশাসন। সচেতনতার তোয়াক্কা না করে সৈকতের উপর দিয়ে অবাধ যান চলাচলের ফলেই ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। সৈকতে যান চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পর্যটক, গাড়িচালক আহত হচ্ছেন। এমনকী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে পর্যটকদের। তবুও বিরাম নেই সৈকতের উপর দিয়ে যান চলাচলের।

সৈকতে যান চলাচল বন্ধ করা নিয়ে পুলিশ-প্রশাসন উদাসীন বলেই স্থানীয় মানুষজনের অভিযোগ। রামনগরের কগ্রেস নেতা ও কালিন্দী স্কুলের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দীপক দাস অভিযোগ করেন, “সৈকতে যান চলাচল নিষিদ্ধ করেই এক প্রকার দায় সেরেছে প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞা কতটা মানা হচ্ছে বা আদৌ মানা হচ্ছে কি না তা দেখার কেউ নেই। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।” দীপকবাবুর প্রশ্ন, ‘‘অত ভোরে দুটি গাড়ি কীভাবে পুলিশের নজর এড়িয়ে সৈকতে গিয়ে দাপিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ল সেটা নিয়েও
ভাবতে হবে।”

স্থানীয় বাসিন্দা ও কাঁথি মহকুমা মৎস্যজীবী নেতা লক্ষ্মীনারায়ণ জানারও অভিযোগ সেখানেই। তাঁর কথায়, ‘‘সৈকতের উপর দিয়েই গ্রামের মানুষদের যাতায়াত করতে হয়। বেশ কিছু হোটেল লজেরও যাতায়াত ও সেখান দিয়েই করতে হয়। ওই রাস্তা বন্ধ করে দিলে তো হবে না। সচেতন হতে
হবে মানুষকেই।’’

স্থানীয় কালিন্দী গ্রামপঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান অশোক মাইতির কথায়, “বিকল্প রাস্তা না থাকায় সৈকতে ট্রেকার চলাচল নিয়ে কোনও অসুবিধা হয় না, যত সমস্যা পর্যটকদের গাড়ি নিয়ে।”

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমলও বলেছেন, ‘‘ওই রাস্তা স্থানীয়রাই ব্যবহার করেন। বিকল্প রাস্তা যতদিন না শেয হচ্ছে ততদিন ওই রাস্তা ব্যবহার করা যাবে।’’ সঙ্গে তিনি আরও জানান, বিকল্প রাস্তার কাও শেষের পথে।

মন্দারমণি উপকূল থানার পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, যেখানে সৈকতে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেখানে পুলিশ গেট বসিয়ে সৈকতে যানবাহন নামতে দেওয়া হচ্ছে না।

সদ্য শেষ হয়েছে জেলা জুড়ে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ। রাস্তার পাশে এখনও জ্বলজ্বল করছে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্ল্যাকার্ড। যে রাস্তা দিয়ে সমুদ্র সৈকতের দিকে ছুটে গিয়েছিল বৈভবদের গাড়ি, সেই রাস্তার পাশে প্ল্যাকার্ডে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নিয়ে সচেতনতার বার্তা দেওয়া ছিল।

ভাগ্যের পরিহাস বোধহয় একেই বলে!

surveillance Mandarmoni sea beach
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy