Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Tree Cutting

গাছ কাটায় দুর্বল পাহাড়ে ধস

শুধু জোরালো বৃষ্টির কারণেই কি ধস বেড়েছে? নাকি বৃষ্টির জোর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের শক্তিক্ষয়ও ঘটছে?

নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে পাহাড়ে।

নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে পাহাড়ে। প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২১ ০৫:৩৪
Share: Save:

উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে বৃষ্টির প্রাবল্য গত কয়েক বছর ধরেই বেড়েছে। তার সঙ্গে বেড়েছে ধসের প্রবণতাও। অনেকেই বলছেন, পাহাড়ি এলাকায় ধস অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু ধসের সংখ্যা এবং পরিসরও বাড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, শুধু জোরালো বৃষ্টির কারণেই কি ধস বেড়েছে? নাকি বৃষ্টির জোর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের শক্তিক্ষয়ও ঘটছে? পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা কিংবা নানা প্রয়োজনে নিয়মিত ওই এলাকায় যাতায়াতকারীদের বক্তব্য, যে ভাবে পাহাড় ভেঙে এবং গাছ কেটে তথাকথিত উন্নয়নের কাজ হচ্ছে, তাতেই দুর্বল হচ্ছে পাহাড়। তাই জোরালো বৃষ্টি হলেই ধস নামছে।

ভূগোলবিদদের মতে, পাহাড়ি এলাকায় ধস স্বাভাবিক ভৌগোলিক ঘটনা। তার পিছনে নানা প্রাকৃতিক কারণ থাকে। কিন্তু দার্জিলিং, কালিম্পঙে যে ভাবে ধস নামছে তাতে শুধু প্রাকৃতিক কারণ দায়ী থাকতে পারে না। এর উদাহরণ হিসেবে পরিবেশকর্মীদের অনেকের বক্তব্য, সেবকের কাছে কালীঝোরা এমনিতেই ধস প্রবণ। তার উপরে ওই এলাকায় যে ভাবে পাহাড় কেটে রেললাইনের কাজ হচ্ছে তাতে পাহাড়ের ক্ষতি হচ্ছে। সর্বশেষ বৃষ্টিতে ওই এলাকায় প্রবল ধসই তার প্রমাণ বলে পরিবেশকর্মীদের দাবি।

পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর মতে, অতিরিক্ত পরিমাণে কার্বন নির্গমনের ফলে পাহাড়ি এলাকায় প্রবল বৃষ্টির ঘটনা বাড়বে বলেই একাধিক আন্তর্জাতিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তার প্রমাণই দার্জিলিং, কালিম্পঙে মিলছে। তাঁর মতে, কার্বন নির্গমণের মাত্রা কমাতে বেশ করে গাছ লাগানো প্রয়োজন। শুধু স্বাভাবিক জঙ্গলে নয়, প্রয়োজনে বনসৃজন করে কৃত্রিম অরণ্য তৈরি করা প্রয়োজন। তার বদলে পর্যটন কেন্দ্র তৈরির নামে গাছ কাটা হচ্ছে।

ভূগোলবিদেরা জানান, পাললিক শিলাগঠিত নবীন ভঙ্গিল পর্বত হওয়ায় ভূতাত্ত্বিকগত ভাবেই হিমালয় অস্থির এবং নরম। তাই এখানে ধসের প্রবণতা বেশি। সেই কারণেই বড় বড় গাছ শিকড় দিয়ে মাটি এবং পাথর আঁকড়ে রাখে। গাছ কাটলে সেগুলি নড়বড়ে হয়ে যায় এবং প্রবল বৃষ্টিতে গড়িয়ে নেমে আসে। অনেকে এ-ও বলছেন, দার্জিলিং, কালিম্পঙে পাথরের সঙ্গে মাটিও অনেক বেশি। তাই গাছ কাটলে প্রবল বৃষ্টিতে জলের সঙ্গে মাটি ধুয়ে কাদাগোলা স্রোত হিসেবে গড়িয়ে নেমে আসে। পরিবেশ দফতরের এক পদস্থ বিজ্ঞানীর মতে, বৃক্ষচ্ছেদনের পাশাপাশি বেপরোয়া ভাবে পাহাড় কাটায় পাহাড়ের ঢাল এবং ভূতাত্ত্বিক চরিত্র বদলে যাচ্ছে। তার ফলেই ধসের প্রবণতা বাড়ছে।

প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি পাহাড়ে উন্নয়ন হবে না? পরিবেশবিদদের মতে, জলবায়ু বদলের পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবী জুড়ে সুস্থায়ী উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে। সেই নীতি অনুযায়ী, বদলে যাওয়া জলবায়ুর চরিত্রের সঙ্গে খাপ খাইয়ে উন্নয়ন করা জরুরি। আগামী ৩১ অক্টোবর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় রাষ্ট্রপুঞ্জের যে জলবায়ু সম্মেলন (সিওপি ২৬) হওয়ার কথা, সেখানেও অন্যতম বিষয় জলবায়ু বদলকে মানিয়ে নিয়ে উন্নয়নমূলক কাজ। ।

অনেকের পর্যবেক্ষণ, অন্যান্য পাহাড়ি এলাকায় বাড়ি বা অন্য কিছু নির্মাণের ক্ষেত্রে পাহাড়ের মাথাকে টেবিলের ধাঁচে কেটে নির্মাণ করা হয়। তাতে ধসের প্রবণতা কমে। পরিবেশবিদদের মতে, পাহাড়ে নির্মাণের কোনও সাধারণ নিয়মের বদলে নির্মাণস্থলের গড়ন এবং সেই পাহাড়ের ভূতাত্ত্বিক চরিত্র অনুযায়ী পাহাড় কেটে নির্মাণ করা উচিত। তাতেই প্রকৃতি এবং মানুষের সহাবস্থান বজায় থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tree Cutting Soil Erosion Hill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE