Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্র কর্মসূচিতে ‘অযাচিত’ লাঠি, বিতর্কে পুলিশ

দেশ জোড়া বিশ্ববিদ্যালয়-উত্তাপ নিয়ে মুখে আগল রাখার নীতি নিয়েছে তৃণমূল। সেখানে এ রাজ্যের একটি ঘটনা তাদেরই অস্বস্তিতে ফেলল। মঙ্গলবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআইকর্মসূচিতে ‘অতি-সক্রিয়’ হয়ে লাঠি চালানোর অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশ আসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে। এসএফআইয়ের দাবি, লাঠির ঘায়ে ২৫ জন আহত। ১১ জন হাসপাতালে ভর্তি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৯
Share: Save:

দেশ জোড়া বিশ্ববিদ্যালয়-উত্তাপ নিয়ে মুখে আগল রাখার নীতি নিয়েছে তৃণমূল। সেখানে এ রাজ্যের একটি ঘটনা তাদেরই অস্বস্তিতে ফেলল। মঙ্গলবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআইকর্মসূচিতে ‘অতি-সক্রিয়’ হয়ে লাঠি চালানোর অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশ আসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে। এসএফআইয়ের দাবি, লাঠির ঘায়ে ২৫ জন আহত। ১১ জন হাসপাতালে ভর্তি।

জেএনইউ, বিএইচইউ এবং এ রাজ্যের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা-প্রবাহের প্রতিবাদ না করায় এ পর্যন্ত তৃণমূলকে বিঁধে চলেছেন বিরোধীরা। একই সুতোয় বর্ধমানেও এ বার পুলিশ এবং শাসক পক্ষের যৌথ বোঝাপড়ায় পড়ুয়াদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের। যাদবপুরে টানা ঘেরাও তুলতে প্রাক্তন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী পুলিশ ডেকে আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করিয়েছিলেন—বর্ধমানের এ দিনের ঘটনা সেই স্মৃতি উস্কে দিয়েছে বলেও মনে করেছেন অনেকে। টুইটে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রর অভিযোগ, ‘‘জেএনইউয়ের উপাচার্যের মতোই বর্ধমানের উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পুলিশ ডেকে এনেছেন এবং ছাত্রদের বিরুদ্ধে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে! ছাত্রদের ন্যায্য দাবির পাশে আছি।’’ ঘটনার প্রতিবাদে আজ, বুধবার রাজ্য জুড়ে মিছিল ও ধিক্কার কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছে এসএফআই।

ছাত্রদের উপরে লাঠি চালানো প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুনেছি। তবে বিশদে না জেনে কিছু বলব না। উপাচার্যের কাছ থেকে রিপোর্ট নিতে শিক্ষাসচিবকে বলেছি।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে সিপিএম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-সহ বিভিন্ন জায়গায় গোলমাল করে সংবাদের শিরোনামে আসার পরিকল্পনা করেছে। আমাদের সদা-সতর্ক থাকা উচিত।’’ লাঠি চালানোর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালের দাবি, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ গত কয়েকদিন ধরেই স্নাতক স্তরের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা পিছনো ও দ্বিতীয় বর্ষের মার্কশিট দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন পড়ুয়ারা। তবে রাজনৈতিক দলের ছাতার তলায় নয়। সোমবার ওই দাবি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামককে দিনভর ঘেরাও করা হয়। ফল প্রকাশে বিভ্রাট, নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল এসএফআইয়ের। তাতে যোগ দিতে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ শ’চারেক পড়ুয়া রাজবাটি ক্যাম্পাসে যান।

পুলিশের দাবি, ক্যাম্পাসের মূল দরজা তালাবন্ধ থাকায় আন্দোলনকারীদের কেউ গেট টপকে, কেউ তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন। সোজা উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকারের ভবনের সামনে জড়ো হন তাঁরা। পুলিশ আগে থেকেই ছিল সেখানে। উপাচার্যের দফতরে ঢোকার সিঁড়ির মুখে কোল্যাপ্সিবল দরজা নিয়ে আন্দোলনকারীরা ঠেলাঠেলি শুরু করতেই গোলমাল পাকে।

এসএফআইয়ের অভিযোগ, এসডিপিও (বর্ধমান সদর) সৌমিক সেনগুপ্তের নেতৃত্বে ছাত্রছাত্রীদের ঠেলতে শুরু করে পুলিশ। মহিলা পুলিশও ছিল। শুরু হয় লাঠি চালানো। ওই ভবন থেকে রাস্তা পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের মারতে মারতে বার করে দেওয়া হয়। এমনকী, পতাকা কেড়ে তার ডান্ডা দিয়েও দু-এক ঘা কষিয়ে দেন পুলিশকর্মীরা। এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি মধুজা সেন রায়ের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ এ ভাবে গুন্ডামি করবে ভাবতে পারিনি।’’

পরিস্থিতি ‘অপ্রত্যাশিত’ তাঁদের কাছেও এমনই দাবি করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবকুমার পাঁজা। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি রক্ষার জন্য পুলিশ ডাকা হয়েছিল। পুলিশ কেন লাঠি চালাল, তা জানতে চাইব।’’ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গণতন্ত্র বজায় রাখতে পুলিশ ডাকার বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করে ইতিমধ্যেই অনেক ঝড়ঝাপ্টা সয়েছেন যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। বর্ধমানে কি তেমন করা যেত না? উপাচার্য স্মৃতিকুমারবাবুর জবাব, ‘‘মোটা বাঁশ, লাঠি, শাবল নিয়ে স্মারকলিপি দিতে এসেছিল ছাত্রছাত্রীরা। সোমবারের অভিজ্ঞতা ভাল নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman University
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE