Advertisement
E-Paper

বিল না-মেটায় হয়নি ছুটি, মৃত্যু হাসপাতালেই

বেসরকারি হাসপাতালের বিল মেটাতে না পেরে জমির দলিল তাদের হাতে দিয়েছিলেন রোগিণীর ভাই। কিন্তু ছুটি মেলেনি। ক’দিন বাদে তিনি মারা যান। ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতি এবং দলিল আটকে রাখার অভিযোগ নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে পরিবার।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫২
ধানুবালা হাজরা

ধানুবালা হাজরা

বেসরকারি হাসপাতালের বিল মেটাতে না পেরে জমির দলিল তাদের হাতে দিয়েছিলেন রোগিণীর ভাই। কিন্তু ছুটি মেলেনি। ক’দিন বাদে তিনি মারা যান। ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতি এবং দলিল আটকে রাখার অভিযোগ নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে পরিবার।

মুর্শিদাবাদের বহরমপুর শহরের পঞ্চাননতলায় কারবালা রোডের ওই হাসপাতাল অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। মৃতার ভাই, নবগ্রামের ইকরোল গ্রামের নিতাই হাজরা বৃহস্পতিবার বহরমপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। গ্রামের কয়েকশো লোক তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছেও লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। হাসপাতালের তরফেও বকেয়া টাকা না মেটানোর অভিযোগ করা হয়েছে।

রোগিণীর নাম ধানুবালা হাজরা (৫৩)। একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা ছিলেন তিনি। বিধবা, ছেলেমেয়ে নেই। ভাইয়ের সংসারেই থাকতেন। ১৮ অক্টোবর নবগ্রামের সুকি মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে একটি অ্যাম্বুল্যান্স তাঁকে ধাক্কা দেয়। ডান পা, বাঁ হাত, পাঁজর ভেঙে যায়। নবগ্রাম ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, পরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখান থেকে কলকাতায় ‘রেফার’ করা হয়েছিল। কিন্তু গ্রামের যুবক, পেশাসূত্রে নবগ্রামের এক বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের কর্মী, তাঁকে কারবালা রোডের ওই হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন।

নিতাই বলেন, ‘‘আমরা গরিব। চিকিৎসা চলাকালীন জমি বিক্রি করে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিই। ১৫ নভেম্বর ওরা দিদিকে ছুটি দিয়ে আরও এক লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা চায়। তা দিতে পারিনি।’’ গাঁয়ের লোকের কাছে চেয়েচিন্তে আরও ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করেন নিতাই। যত দিন বাঁচবেন, তত দিন ভোগদখল করবেন এই শর্তে ধানুবালার নামে ২২ কাঠা জমির দলিল ছিল। নিতাইয়ের দাবি, ‘‘৫০ হাজার টাকা জমা দিই। গত সোমবার দলিলটাও হাসপাতালে নিয়ে যাই, যাতে ওটা রেখে দিদিকে ছাড়ে। ওরা দলিলটা রেখে দেয়, কিন্তু দিদিকে ছাড়েনি। টাকা না পাওয়ায় চিকিৎসাও করেনি। তাই যাকে ওরা ছুটি দিতে চাইছিল, কুড়ি দিনের মধ্যে সে বেঘোরে মারা গেল!’’

ওই হাসপাতালের ম্যানেজার (অপারেশনস) মোবারক হোসেন অবশ্য দাবি করেন, “কোনও রকম গাফিলতি হয়নি। ওই রোগিণী সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন বলেই ১৫ নভেম্বর ছুটি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আচমকা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে যায়।’’ ছুটি পাওয়া রোগিণীকে ছাড়া হয়নি কেন? মোবারকের দাবি, ‘‘ওঁরা বিল মেটাতে পারেননি বলেই নিয়ে যেতে চাননি। দলিল আটকে রাখার অভিযোগ ভিত্তিহীন। দলিল নিয়ে কী করব?’’

বুধবার দুপুরে ধানুবালার মৃত্যুর পরে হাসপাতাল তাঁর মৃতদেহ ছাড়তে চায়নি বলেও অভিযোগ। নিতাইয়ের কথায়, ‘‘সন্ধ্যায় দেহ আনতে গেলে ওরা বলে, পুলিশের হাতে আছে।’’ মোবারক অবশ্য দাবি করেন, খবর পেয়েও বাড়ির লোক মৃতদেহ নিতে না-আসায় তাঁরা পুলিশে খবর দেন। তারা দেহ নিয়ে মর্গে পাঠায়।

জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার শুধু বলেন, “অভিযোগ হয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আর, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাসের বক্তব্য, “যদি সত্যি এমন হয়ে থাকে, হাসপাতাল আদৌ ঠিক কাজ করেনি। খোঁজ নিচ্ছি।’’

Death Hospital Leave Bill ধানুবালা হাজরা Anganwadi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy