অশান্তি: বন্ধ সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি। বুধবার সোনারপুর স্টেশনে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
মুখে তারা বলছে অন্যের ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু মনে মনে মানছে, নিজেদের ঝুলি শূন্য হচ্ছে ক্রমশ!
ইসলামপুরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার বিজেপির ডাকা বাংলা বন্ধে জনজীবন আংশিক ব্যাহত হয়েছিল বলে মেনে নিয়েছিলেন বাকি দুই বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস নেতারা। তবে তাঁদের অভিযোগ ছিল, তৃণমূল হুঙ্কার দিয়ে পথে নেমে বিজেপির বন্ধ সফল করতে সাহায্য করেছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজেও বন্ধের ‘সাফল্যে’র জন্য তৃণমূলকে ধন্যবাদ দেওয়ায় তাঁদের অভিযোগই প্রতিষ্ঠা পেল বলে দাবি করছেন সিপিএম ও কংগ্রেস নেতারা। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁদের চিন্তায় রাখছে সাম্প্রতিক কালের দুই বিপরীত চিত্র। বাম বা কংগ্রেস ধর্মঘট ডাকলে কিছু টেরই পাওয়া যাচ্ছে না অথচ বিজেপির ডাকে উত্তেজনা হচ্ছে! দলের অন্দরে আত্মসমীক্ষায় নিজেদের দুর্বলতাকেই দুষছেন সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব।
দিলীপবাবুর মন্তব্যকে হাতিয়ার করে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘‘ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে! আমরা বলেছিলাম, তৃণমূলের প্রযোজনায় বিজেপির বন্ধ হয়েছে। বিজেপি সভাপতি তৃণমূলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেটাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন!’’ প্রদেশ কংগ্রেসের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্যও বলছেন, ‘‘বিভিন্ন মন্তব্য করে রাজ্যের মন্ত্রীরাই এমন পরিবেশ তৈরি করেছিলেন, যাতে মানুষ ভেবেছিল রাস্তায় বেরোলে গণ্ডগোল হবে। বিজেপি কোথাও বন্ধের সমর্থনে মিছিল করলে বিরোধিতা করে তৃণমূল দ্বিগুণ মিছিল করেছে। এ সব না করলে দিল্লির মতো বন্ধ হত! যেখানে গাড়ি-ঘোড়া চলে, কেউ কোনও বিবৃতি দেয় না, আমলও দেয় না!’’ বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় আবার বন্ধ ‘সফল’ করার জন্য বাংলার মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে বিজেপির বন্ধের বিরোধিতায় তাঁরা সরব ঠিকই। কিন্তু দলের অভ্যন্তরে সিপিএম ও কংগ্রেস নেতারা অস্বীকার করতে পারছেন না যে, সম্প্রতি তাঁদের একাধিক ধর্মঘট বিশেষ কোনও আঁচ়ড় কাটতে পারেনি। অথচ বিজেপি রাস্তায় নেমে, জঙ্গি বিক্ষোভ করে তাদের বন্ধকে আলোচনার কেন্দ্রে রাখতে পেরেছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের আক্ষেপ, ‘‘বন্ধ ডেকে ঘরে বসে থাকলে হয় না। বছরতিনেক আগে ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘটে জেলায় জেলায় মিছিল করে তৃণমূলের হাতে মার খেয়েছিলেন আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা। তার পরে বন্ধে আরও বেশি উৎসাহে রাস্তায় থাকার কথা। কিন্তু সেটা হচ্ছে না!’’ প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতাও বলছেন, ‘‘চিরকালই বন্ধে কয়েকটা জায়গায় জঙ্গি বিক্ষোভ হত। এখন বিজেপি সেটাই করছে। আমরা সেটা করতে না পারলে আমাদের কেউ গুরুত্ব দেবে না।’’ দু’দলের নেতারাই ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, বিরোধী হিসেবে তৃণমূল যে কোনও প্রশ্নে রাস্তায় থাকত, বন্ধও ডাকত। এখন সরকারি দল হয়ে তৃণমূল বন্ধ ব্যর্থ করতে বেনজির পদক্ষেপ করছে ঠিকই। কিন্তু তাঁরাও রাস্তায় লোক নামিয়ে শাসককে পাল্টা চাপে রাখতে পারছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy