Advertisement
E-Paper

রক্ত খাচ্ছে মশা, বামফ্রন্ট রক্তকরবীতে

ছেলে মহম্মদুল্লার মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে ভেঙে পড়ছিলেন বাকিবুল্লা মণ্ডল। ডেঙ্গির থাবায় প্রিয়জনের মৃত্যু আর তার সঙ্গে সরকারি মনোভাব আঘাত দিয়েছে প্রদীপ গায়েনকেও। স্বাস্থ্যভবনের অদূরে প্রতিবাদ মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজেদের বেদনার কথা জানাচ্ছিলেন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৫
বর্ম: সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবন চত্বরে মশারি টাঙিয়ে ডেঙ্গি-প্রতিবাদ বামেদের। সোমবার। ছবি: শৌভিক দে।

বর্ম: সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবন চত্বরে মশারি টাঙিয়ে ডেঙ্গি-প্রতিবাদ বামেদের। সোমবার। ছবি: শৌভিক দে।

মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে কান্না বাঁধ মানছিল না মালতী দাসের। ডেঙ্গি তাঁর ৮ বছরের নাতনি রিয়ার প্রাণ কেড়েছে। ডেঙ্গি ধরা পড়ার পরীক্ষার কাগজপত্রও সরকারি হাসপাতাল ফেরত দেয়নি বলে অভিযোগ। হাতে শুধু ডেথ সার্টিফিকেট। সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ আনছেন তিনি।

ছেলে মহম্মদুল্লার মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে ভেঙে পড়ছিলেন বাকিবুল্লা মণ্ডল। ডেঙ্গির থাবায় প্রিয়জনের মৃত্যু আর তার সঙ্গে সরকারি মনোভাব আঘাত দিয়েছে প্রদীপ গায়েনকেও। স্বাস্থ্যভবনের অদূরে প্রতিবাদ মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজেদের বেদনার কথা জানাচ্ছিলেন তাঁরা। শোককে ক্ষোভে পরিণত করার ডাকও দিচ্ছিলেন নেতারা।

কিন্তু ওই পর্যন্তই! ডেঙ্গি মোকাবিলায় সরকারের উদাসীনতার যে কাহিনি নিজ মুখে শোনাচ্ছিলেন রোগাক্রান্তদের পরিজনেরা, তাতেই ইঙ্গিত ছিল কেমন ক্ষোভের স্তূপে বসে আছেন মানুষ। অথচ এমন হাতিয়ার পেয়েও রাজনৈতিক প্রতিবাদের বদলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সোমবার মঞ্চ ব্যবহার করল বামফ্রন্ট! তৃণমূলের কর্মসূচিকে জলসার চেহারা নিতে দেখতে বঙ্গবাসী অভ্যস্ত। বামেদের প্রতিবাদের মধ্যে এত ‘মিউজিক্যাল হাঙ্গামা’ (এক বাম কর্মীর ভাষায়)? সহজে মনে করতে পারছেন না কেউ।

একের পর এক নাম ডাকা হল আর মাইকের সামনে ‘যেমন খুশি গাও’-এর প্রতিযোগিতা চলল যেন! হঠাৎ ‘রক্তকরবী’ থেকে খানিকটা শ্রুতিনাটক মঞ্চস্থ হয়ে গেল! যার সঙ্গে ডেঙ্গি প্রতিবাদের কী সম্পর্ক, সেক্টর ফাইভের রাস্তায় হাজির কারও বোধগম্য হল না! অনুষ্ঠানের সভাপতি বিমান বসু আবার একটু খুঁচিয়ে দিলেন, গান-নাটক হলে আবৃত্তির বাচিক শিল্পীরা বাদ যাবেন কেন? অতঃপর শুরু হয়ে গেল মঞ্চে উঠে আবৃত্তি। এমনকী, এসএফআইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ গণসংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মঞ্চে উঠে সাহস উদ্দীপক গান গেয়ে দিলেন! মঞ্চের চারপাশে মশার কাটআউট, মশারি টাঙিয়ে ভিতরে প্রতীকী আক্রান্ত, একটু দূরে প্রকৃত আক্রান্ত— কেউ কিছু ভেবে পাচ্ছে না তখন!

প্রথমে রক্তদান এবং সচেতনতা প্রচার, তার পরে পুরসভার বরো কার্যালয়ে এবং শেষে কলকাতা পুরসভার সদর দফতরে বিক্ষোভের ধাপ পেরিয়ে স্বাস্থ্যভবনে ধর্না-বিক্ষোভের কর্মসূচি নিয়েছিল বামফ্রন্ট। কিন্তু এ দিন প্রতিবাদ সভার রকম সকম দেখে সিপিএম নেতাদেরই অনেকে দ্রুত সভাস্থল ছেড়েছেন। ঘরোয়া আলোচনায় বিস্ময় এবং ক্ষোভ চেপে রাখেননি অনেকে। বিধাননগরে কর্মসূচি বলে আয়োজনের দায়িত্ব ছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বামফ্রন্টের। মুখ না খুললেও আগাগোড়া মঞ্চে ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম দেব। উত্তর ২৪ পরগনার মতো আদ্যন্ত রাজনৈতিক লড়াইয়ে অভ্যস্ত জেলার আয়োজনে এমন প্রতিবাদ দেখে আরও স্তম্ভিত বাম নেতা-কর্মীরাই! এক যুব নেতার কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যভবনের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা বা নিদেনপক্ষে চারটে ঝাঁঝালো বক্তৃতা হলেও কিছু হতো!’’

লোকজন উঠতে শুরু করার পরে শেষ লগ্নে বিমানবাবু অবশ্য অভিযোগ করেছেন, ডেঙ্গি নিয়ে সরকার ‘ফৌজদারি অপরাধ’ করছে। তাঁর আহ্বান, সরকারের ব্যর্থতা এবং মিথ্যাচারের প্রতিবাদে রাস্তায় থেকে লড়াই করতে হবে। বাম কর্মীদের প্রশ্ন, রাস্তার লড়াই এমন আর হবে না তো?

Dengue ডেঙ্গি CPM TMC Dengue Campaign তৃণমূল বামফ্রন্ট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy