Advertisement
E-Paper

স্টেশন-আলোয় পড়েই মহীরুহ হয়ে ওঠার স্বপ্ন

লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রীতিরা। বন্ধুরা ঠাট্টা করে বলেছে, ‘‘তুই কলেজে যাবি! কী মজা! ’’ লক্ষ্যে স্থির প্রীতি জানান, কলেজে তাঁর সঙ্গে যাবে তাঁর মেধা। আর কিছু নয়। ‘‘ব্যাঙ্কিং সেক্টরে কাজ করার ইচ্ছে আছে। দিদিমণির মতো অন্যদের দায়িত্ব নিতে হবে তো,’’ কর্তব্যে অবিচল রয়েছেন প্রীতি।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০৫:০২
মধ্যমণি: বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দে মেতেছেন প্রীতি কুমারী। শুক্রবার দমদম স্টেশন চত্বরে। ছবি: শৌভিক দে

মধ্যমণি: বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দে মেতেছেন প্রীতি কুমারী। শুক্রবার দমদম স্টেশন চত্বরে। ছবি: শৌভিক দে

আঁকার ক্লাস থাকে প্রতি শুক্রবার। অন্যান্য সপ্তাহের মতো এই শুক্রবার বিকেলেও দিদিমণি কান্তা চক্রবর্তীর পাঠশালায় আর্ট পেপারে মোমরঙে ডুবে ছিলেন প্রীতি কুমারী। আঁকায় আনন্দ আজ একটু যেন বেশি! দমদম স্টেশনের চাতালের আলোয় পড়ে উচ্চ মাধ্যমিকের বাণিজ্য শাখায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ প্রীতি।

পথবাতির আলোয় লেখাপড়া করে মনীষীর দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠার উদ্দীপক কাহিনি মনে পড়ছে কি?

বছর বারো আগে এক ব্যক্তি প্রীতি এবং তাঁর বোন প্রিয়া কুমারীকে কান্তা দিদিমণির কাছে দিয়ে গিয়েছিলেন। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন দুই বোন। দিদিমণির পরিবারে আছে আর‌ও ১৯টি কন্যে। দমদম কেএলসি হিন্দু বিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রীতি এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিলেন। তাঁর মোট প্রাপ্ত নম্বর ৩০২। অ্যাকাউন্টেন্সিতে পেয়েছেন ৭২। প্রীতির কথায়, ‘‘বিজনেস স্টাডি এবং ইকনমিক্সে নম্বরটা একটু কম হয়েছে। ন‌ইলে আরও ভাল হত।’’

পরিবারের সদস্যের সাফল্যে গুড়িয়া, টুনটুনি, বুলবুলি, ময়না, সর্বানুরা বেজায় খুশি। কান্তাদেবী বললেন, ‘‘আমার কুড়িটি মেয়েই রত্ন। প্রতি রবিবার প্রীতিকে রাজ্য এবং কেন্দ্রের সরকারি চাকরির জন্য বারাসতে কোচিং দিতে নিয়ে যাচ্ছি। বি কম শেষে ও সরকারি চাকরি পাবেই।’’ আগামী বছর মাধ্যমিক দেবে গুড়িয়া মাহাতো। পরের বছর আরও ছ’জন। এখন‌ থেকেই সেই ছয় মেয়ে কান্তাদেবীকে বলে রেখেছে, ‘‘তুমি প্রীতির পরীক্ষা চলাকালীন রোজ স্কুলে যেতে। আমাদের বেলায় দেখব কোথায় কোথায় যাও।’’ মেয়েদের মানুষ করে তুলতে কান্তা দিদিমণির সর্বক্ষণের সঙ্গী লালদা, ভোলাদা। তাঁরা বলেন, ‘‘মিষ্টি নিয়ে আয়। সকলকে চা দিয়েছিস?’’ নীতা দিদিমণিকে তাঁরা বললেন, ‘‘বাচ্চাদের মিষ্টি খাইয়ে দিন।’’

আত্মহারা হ‌ওয়ার‌ই তো দিন। প্রীতি তো শুধু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাই উত্তীর্ণ হননি। ১২ বছর ধরে নানা ভাবে পাওয়া ২০টি মেয়ের ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন যিনি, তাঁকে অফুরন্ত প্রাণশক্তি জোগান দিয়েছেন তিনি। দমদম স্টেশনের হকারেরা, জিআরপি, আরপিএফ, সিঁথি থানা, মেট্রো রেলের স্টেশনমাস্টার, পূর্ব রেলের স্টেশনমাস্টারেরাও তাঁদের এই লড়াইয়ে শরিক। দমদম কেএলসি হিন্দু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘স্কুলের আর‍ও অনেকে ভাল ফল করেছে। সকলেই আমার ছাত্রছাত্রী। তবু প্রীতি যে-পরিস্থিতিতে থেকে এই সাফল্য অর্জন করেছে, তাতে কুর্নিশ না-জানিয়ে পারা যায় না।’’ এ দিন ইছাপুর থেকে এক দল শিক্ষানুরাগী এসেছিলেন প্রীতিকে অভিনন্দন জানাতে। সকলেরই কিছু না কিছু অবদান আছে। লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রীতিরা। বন্ধুরা ঠাট্টা করে বলেছে, ‘‘তুই কলেজে যাবি! কী মজা! ’’ লক্ষ্যে স্থির প্রীতি জানান, কলেজে তাঁর সঙ্গে যাবে তাঁর মেধা। আর কিছু নয়। ‘‘ব্যাঙ্কিং সেক্টরে কাজ করার ইচ্ছে আছে। দিদিমণির মতো অন্যদের দায়িত্ব নিতে হবে তো,’’ কর্তব্যে অবিচল রয়েছেন প্রীতি।

কথাগুলো বলেই আর্ট পেপারে ভূখণ্ড আঁকতে বসে গেলেন প্রীতি। বিষয় নীল আকাশের তলায় মহীরুহ। যার শিকড় অনেক গভীরে। স্টেশন-চাতালে বসে উঁচু বাতিস্তম্ভের তলায় তাতে মোমরং বোলাচ্ছেন প্রীতি। লক্ষ্যে অবিচল।

Higher Secondary Examination 2018 Dumdum Metro Station Student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy