Advertisement
E-Paper

‘একা’ দৌড়লেন অধীর, ‘গেম ওভার’: ডেভিড

এ যেন এক অচেনা অধীর— বলছিলেন বহরমপুরের বাসিন্দারা, অধীরের ঘনিষ্ঠরা। 

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ০২:০১
ভোটদান: অধীর চৌধুরী। সোমবার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

ভোটদান: অধীর চৌধুরী। সোমবার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

‘‘দাদা, বিএড কলেজে বহিরাগতরা এসে ছাপ্পা দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি আসুন।’’

নিজের গাড়ি নিয়ে বিএড কলেজে ছুটলেন তিনি। সেখানে গিয়ে পৌঁছতেই ফের বেজে উঠল তাঁর মোবাইল, ‘‘দাদা, কৃষ্ণনাথ কলেজিয়েট স্কুলে আমাদের এজেন্টকে বের করে দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি আসুন।’’ ফের ছুটলেন তিনি, এ বার কৃষ্ণনাথ কলেজিয়েট স্কুলের দিকে।

সোমবার সকাল থেকে এমনই ছিল অধীররঞ্জন চৌধুরীর রুটিন। বহরমপুর এলাকায় পারদ তখন চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই। তার মধ্যেই এ ভাবে ছুটে বেড়ালেন তিনি। বসে পড়লেন রাস্তার ধারে এজেন্টদের বুথ সামলাতেও। বুথ কর্মীর হাত ধরে বললেন, ‘‘যদি শুনিস অধীর চৌধুরী খুন হয়ে গিয়েছে, তবুও বুথ ছাড়বি না।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এ যেন এক অচেনা অধীর— বলছিলেন বহরমপুরের বাসিন্দারা, অধীরের ঘনিষ্ঠরা।

লোকসভা হোক বা বিধানসভা, ভোটের দিন অধীরকে রাস্তায় নেমে বুথ সামলাতে শেষ কবে দেখেছেন, মনে করতে পারছেন না অধীরের ঘনিষ্ঠরাই। তেমনই একজন বলেন, ‘‘ভোটের দিন সাধারণত সারাদিন দাদা পার্টি অফিসেই কাটান। দুপুরের দিকে একবার খেতে যান বাড়িতে। খেয়ে বাড়ি থেকে পার্টি অফিসে ফেরার সময় নিজে ভোটটা দিয়ে আসেন। যেটুকু নির্দেশ তা ফোনেই সেরে ফেলেন। অভিযোগের ফিরিস্তি? খুব একটা শোনাই যায় না তাঁর মুখে।’’

এ দিনটা অধীরের জন্য শুরু হয়েছিল অন্যরকম ভাবে। তখনও ভোটগ্রহণ শুরু হয়নি। ভোর ছ’টা থেকে তিনি নেমে পড়েন ময়দানে। ঘুরে বেড়াচ্ছেন বুথে বুথে। অধীরের কথায়, ‘‘সকালে ঘুম ভেঙেছে একজনের ফোনে। বিছানা থেকে দাঁত না মেজে সোজা চলে এসেছি ভোটকেন্দ্রে।’’

ঘুরতে ঘুরতে তিনি দেখেন, শহরের বেশিরভাগ বুথেই নেই কেন্দ্রীয় বাহিনী। তার পর থেকেই অভিযোগ করতে শুরু করেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর একাংশের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ রয়েছে। তাই সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই।’’ দিন যত গড়িয়েছে, অধীরের মুখে অভিযোগের ফিরিস্তি তত দীর্ঘ হয়েছে।

কেন এই পরিবর্তন? ব্যাখ্যা নিজেই দিয়েছেন অধীর— ‘‘আমাকে একাই তো সব সামলাতে হচ্ছে। তাই একাই দৌড়াচ্ছি দিনভর। তবে আমি তো আর টারজান নই। যতটা পারছি করছি।’’ এর পর কিছুটা সামলে নিয়ে বলছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই তো কী হয়েছে! সাধারণ মানুষই কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাজ করছে। ওরা আমার পাশ রয়েছে।’’

মানুষ পাশে আছে কিনা, সেটা বোঝা যাবে ফলের দিন। তবে এত দিন যাদের উপরে ভর করে অধীর লড়তেন, তাঁরা যে নেই, তা ভালই মালুম পেয়েছেন বরহমপুরের সাংসদ। অধীরের সব থেকে বিশ্বস্ত সঙ্গী অর্পূব সরকার ওরফে ডেভিড। তিনিই এ বার অধীরের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী, তৃণমূল প্রার্থী।

যে ডেভিড এত দিন অধীরের আজ্ঞাবহ হয়ে ভোটের দিন চষে বে়ড়াতেন গোটা এলাকা, সে-ই তিনিই সোমবার সকাল থেকে মোটরবাইকের পিছনে বসে কান্দি ঘুরে বেলা এগারোটা নাগাদ এলেন বহরমপুরে তৃণমূল পার্টি অফিসে। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম। এর পর বেলা বারোটা নাগাদ একটা গাড়ি নিয়ে ভোট দেখতে বেরোলেন। কখনও গাড়িতে বসেই ভোটারদের দিকে হাত নেড়েছেন, কখনও কর্মীদের অনুরোধে রাস্তায় নেমে চা খেয়েছেন। তার পরে দ্রুত ফিরেছেন পার্টি অফিসে। সেখানে এসে নিশ্চিন্ত মনে বলেছেন, ‘‘চারিদিকে খুব শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে। মানুষ উল্লাস করে ভোট দিচ্ছে।’’

তবে তাঁর পুরনো নেতা অধীরের থেকে নজর সরাননি ডেভিড। পার্টি অফিসে বসে খোঁজ রাখছিলেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা রিপোর্ট শুনে বেলা বারোটা নাগাদই তিনি বলে দেন, ‘‘গেম ওভার। আমরাই জিতছি।’’ কী ভাবে বুঝলেন? তাঁর জবাব, ‘‘ভোটের দিন অধীর চৌধুরীকে এত ছোটাছুটি করতে কখনও দেখিনি।’’ একটু থেমে বলেন, ‘‘যে কাজগুলো আমাদের দিয়ে এত দিন করাতেন উনি, সেগুলো এখন নিজেকে করতে হচ্ছে। তাই অধীর চৌধুরী এত দিশাহারা। তবে ছোটাছুটি করে লাভ নেই।’’ দুপুরে বেলডাঙা ঘুরে কান্দিতে ফিরে যান ডেভিড।

অধীর কিন্তু সন্ধ্যার পরেও ছুট চালিয়ে গিয়েছেন। তখন পৌনে ছ’টা। ভোটগ্রহণ আর মাত্র পনেরো মিনিট হবে। অধীর শুনতে পেলেন, ফের বিএড কলেজে গোলমাল পাকছে। ছুটলেন সেখানে। প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে জানতে চান, কত শতাংশ ভোট পড়েছে বুথে? উত্তর শুনে খুশি অধীর। বলেন, ‘‘বহরমপুরে খুব ভাল শতাংশ ভোট পড়েছে। যতই সন্ত্রাস করে ভোট লুট করার চেষ্টা করুক না কেন, তৃণমূলের কোনও লাভ হবে না।’’

বলতে বলতেই আবার খবর আসে, একটি বুথে ছাপ্পা চলছে তখনও। গাড়ি ছেড়ে এ বারে মোটরবাইকের পিছনে উঠে বসেন অধীর। গাঢ় সন্ধ্যায় সেই বাইক মিশে যায় অন্ধকারে।

Election 2019 Phase 4 Lok Sabha Election 2019 Adhir Ranjan Chowdhury Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy