Advertisement
E-Paper

দিনভর অর্জুন যেন ব্যূহবন্দি

তৃণমূলের প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীও সোমবার ছুটে বেড়ালেন বুথ থেকে বুথে। এবং দু’জনের ক্ষেত্রে একেবারে ভিন্ন চিত্র উঠে এল। দীনেশ দু’জন সঙ্গীকে নিয়ে হাসি মুখে ঘুরলেন শ্যামনগর থেকে জগদ্দল।

সুনন্দ ঘোষ ও সুপ্রকাশ মণ্ডল 

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৯ ০৪:২৫
 বুথ থেকে বেরিয়ে খেলায় মাতলেন দীনেশ ত্রিবেদী। ভাটপাড়ায়। ছবি: সুমন বল্লভ

বুথ থেকে বেরিয়ে খেলায় মাতলেন দীনেশ ত্রিবেদী। ভাটপাড়ায়। ছবি: সুমন বল্লভ

তিনি ছুটলেন, তিনি লড়লেন, তিনি লড়ালেন এবং তিনি জখম হলেন— কখনও প্রতিপক্ষের মারে, কখনও তাড়া করতে গিয়ে পড়ে গিয়ে। দিনের শেষে এই অর্জুন সিংহ ব্যারাকপুরের কাছে ঘোর অ-চেনা।

তৃণমূলের প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীও সোমবার ছুটে বেড়ালেন বুথ থেকে বুথে। এবং দু’জনের ক্ষেত্রে একেবারে ভিন্ন চিত্র উঠে এল। দীনেশ দু’জন সঙ্গীকে নিয়ে হাসি মুখে ঘুরলেন শ্যামনগর থেকে জগদ্দল। একেবারে শেষ বেলায় ভাটপাড়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিবেকানন্দ ভবনের বুথের সামনের মাঠে একটু ক্রিকেট ও ফুটবল খেলে গাড়িতে ওঠার সময়ে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে দেখে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। বচসায় না-জড়িয়ে চুপ করে গাড়িতে উঠে চলে যান দীনেশ।

রবিবার রাত পর্যন্ত গন্ডগোলের খবর এসেছে শিল্পনগরীর গলি, তস্য গলি থেকে। ফলত, ভোটের দিন সকাল থেকে বড়সড় সংঘর্ষের আশঙ্কা ছিল। বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচন জুড়ে যা ব্যারাকপুরে ও তৎ-সংলগ্ন এলাকার ‘সংস্কার’ বলে পরিচিত। কিন্তু, কার্যত তা হয়নি। সকালে ব্যারাকপুরের মোহনপুরে অর্জুন সিংহের সঙ্গে তৃণমূলের হাতাহাতি, ব্যারাকপুরের গাঁজাগলিতে বাড়ির নীচে বসে থাকা নিরীহ কিছু মানুষের উপরে আচমকা কিছু দুষ্কৃতীর আক্রমণ আর বেলাশেষে ইছাপুরে কিছু টেনশন বাদ দিলে ভোট মিটেছে শান্তিতে। ব্যারাকপুরের দীর্ঘদিনের এক বাসিন্দার তির্যক মন্তব্য — ‘‘সারা দিনে একটা বোমাও পড়ল না! ভাবা যায়!’’

মোহনপুরে শুরুটা কিন্তু গন্ডগোলের আবহেই হয়েছিল। সেখানে আচমকাই হাজির হয়ে অর্জুন অভিযোগ করেন তৃণমূল ভোট করতে দিচ্ছে না। স্থানীয়দের প্রতিবাদ উড়ে আসে। তেড়ে যান অর্জুন। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। ঠোঁট কেটে যায় অর্জুনের। তাঁকেও রীতিমতো হাত চালাতে দেখা যায়। ‘গো ব্যাক’ স্লোগানের মাঝে সেখান থেকে পালিয়ে যান অর্জুন। এর পরে তিনি যেখানে গিয়েছেন, সেখানেই গোলমাল বেধেছে। কোথাও অভিযোগ ওঠে, অর্জুন এলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হবে। কোথাও, তৃণমূল ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেয়। এমনকি মহিলাদের তাড়া খেতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। একবার পা হড়কে পড়ে গিয়ে হাতে চোটও পেয়েছেন।

শেষ বেলায় ফের আমডাঙায় গিয়ে আক্রান্ত হন অর্জুন। সেখানেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট না-করতে দেওয়ার অভিযোগ তুলতেই তাঁকে বাঁশ নিয়ে তাড়া করে কিছু লোক। অভিযোগ, সেখানে তাঁকে মারধর করা হয়। কোনও রকমে পালিয়ে আসেন তিনি। দুষ্কৃতীরা তার পরে গাড়ি ভাঙচুর করতে শুরু করে। তাদের রোষ থেকে বাদ যায়নি সংবাদমাধ্যমের গাড়িও। আহত হন চিত্রসাংবাদিকও।

অভিযোগ, ভোট শেষের মুখে, পাঁচটা নাগাদ ব্যারাকপুর ঘোষপাড়া রোডে শাঁখারিপট্টিতে রাস্তার ধারে মানুষের জটলায় গিয়ে নির্বিচারে লাঠি চালায় পুলিশ। জখম বিজেপির সমর্থকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। সেখানে সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎ তোপদারকে হাজির হতে দেখে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান শুরু হয়। কিছু পরে সিপিএম প্রার্থী গার্গী চট্টোপাধ্যায় হাজির হন। গার্গী বলেন, ‘‘মানুষ আক্রান্ত শুনে এসেছি।’’ কংগ্রেস প্রার্থী মহম্মদ আলম অবশ্য বলেন, ‘‘মানুষ কিন্তু ভোট দিতে পেরেছে।’’

ভোটের শুরুতে বেশ কিছু বুথে ইভিএম যন্ত্র বিগড়ে যাওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে ভোটারদের। গা-জ্বালিয়ে দেওয়া রোদে বিরক্ত হয়েছেন মানুষ। দীনেশও অভিযোগ করেন, ‘‘খাওয়ার জল পর্যন্ত ছিল না। তা সত্ত্বেও মানুষ ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়েছিলেন।’’

আর দিনের শেষে অর্জুন ‘কয়েকটি ঘটনা ছাড়া ভোট শান্তিতে হয়েছে’ বললেও তাঁর শরীরী ভাষায় সেই ফুরফুরে মেজাজটাই যেন তখন মিসিং।

Lok Sabha Election 2019 TMC BJP Dinesh Tribedi Arjun Singh Barrackpore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy