Advertisement
E-Paper

কালো পতাকার পাল্টা ধর্না

হঠাৎই মঙ্গলা হাজরা নামে ওই মহিলা অভিযোগ করেন, দাসপুরে এক যুবতীকে অ্যাসিড বালব ছুঁড়ে মারার মিথ্যে অভিযোগে ভারতী ঘোষ তাঁর ভাইকে জেলে ভরেছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১
ভারতী ঘোষের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ, কালো পতাকা প্রদর্শন (বাঁ দিকে)। নীচে, রাস্তায় বসে পড়ে অবস্থান বিক্ষোভ ভারতীর। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

ভারতী ঘোষের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ, কালো পতাকা প্রদর্শন (বাঁ দিকে)। নীচে, রাস্তায় বসে পড়ে অবস্থান বিক্ষোভ ভারতীর। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

সূচি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ভোট প্রচারে এসে পাঁশকুড়াতেও জনতার বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষকে। প্রার্থীর গাড়ি ঘিরে ধরে কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় লোকজন। ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়া হয় ভারতীর উদ্দেশে। বিক্ষোভ, স্লোগান ও পাল্টা স্লোগানের মধ্যেই তাঁকে প্রচারে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে রাস্তার উপর বসে অবরোধ শুরু করেন ভারতী। গণ্ডগোলের মধ্যেই এক তৃণমূল কর্মীর খড়ের গাদায় আগুন লাগানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে এ দিন রাতে ভারতীর নেতৃত্বে পাঁশকুড়া থানা ঘেরাও করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা।

এদিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ কেশাপাটের যশোড়া বাজারে প্রচারের শুরুতেই প্রার্থীর তাল কাটেন এক মাছ বিক্রেতা মহিলা। ভারতী তখন মাইক হাতে যশোড়া বাজারে বক্তৃতা করছিলেন। হঠাৎই মঙ্গলা হাজরা নামে ওই মহিলা অভিযোগ করেন, দাসপুরে এক যুবতীকে অ্যাসিড বালব ছুঁড়ে মারার মিথ্যে অভিযোগে ভারতী ঘোষ তাঁর ভাইকে জেলে ভরেছিলেন। এখনও তিনি জেলে। মহিলার চিৎকার শুনে তড়িঘড়ি বক্তৃতা শেষ করে হাঁটতে শুরু করেন ভারতী। মাইশোরা এলাকায় ঢুকতেই শুরু হয় বিপত্তি। রাস্তার ওপর তখন কালো পতাকা হাতে অপেক্ষা করছিলেন শ’খানেক পুরুষ ও মহিলা। ভারতীকে দেখে বিক্ষোভকারীরা ‘ভারতী ঘোষ গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে শুরু করে। স্লোগান ওঠে ‘সোনা চোর, বালি চোর ভারতী ঘোষ দূর হটো’। পাল্টা স্লোগান দেন বিজেপি সমর্থকরা। বেলা ২ টো নাগাদ ভারতী রাস্তার ওপর বসে পড়ে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। রাস্তার উপর বাঁশ ফেলে পথ অবরোধ শুরু করেন বিজেপির কর্মী সমর্থকরা। এই সময় ঘটনাস্থলের পাশে এক তৃণমূল কর্মীর খড়ের গাদায় আগে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সেই সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছন পাঁশকুড়া থানার ওসি অজিত কুমার ঝা। জল দিয়ে আগুন নেভান এলাকার মানুষ ও পুলিশ।

ওসির সামনে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেন ভারতী। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্য। ভারতী বলেন, ‘‘আজকের ঘটনার জন্য দায়ী এলাকার তৃণমূলের গুন্ডা কুরবান শা। তাঁকে গ্রেফতার করা না হলে আমি অবরোধ তুলব না।’’ পরে সন্ধে ৬ টা নাগাদ অবস্থান তুলে এলাকা ছাড়েন ভারতী। মাইশোরা থেকে বেরিয়ে পাঁশকুড়ায় কর্মিসভা করেন ভারতী।

গোলমালের সময় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে রাস্তার পাশে খড়ের গাদায়। নিজস্ব চিত্র

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কুরবান শা’র দাবি, ভারতী ঘোষ পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার থাকাকালীন মাইশোরার বহু গাড়ির মালিককে অন্যায়ভাবে জরিমানা করেছিল। দাসপুরের খুকুড়দহ বাজারে সোনা দোকানে চুরির ঘটনায় চার জন নিরীহ মানুষকে জেল খাটিয়েছিল। তারই প্রতিবাদে এলাকার মানুষ ভারতী ঘোষকে কালো পতাকা দেখায়। এর সাথে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ভারতীই গাড়ি থেকে নেমে আমাদের গালিগালাজ করেন। বিজেপির কর্মীরা আমাদের কর্মীদের মারধর করে। এলাকায় সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য ভারতী ঘোষ সহ বিজেপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি।’’ যদিও বিজেপির অভিযোগ এদিনের ঘটনার পিছনে তৃণমূলের ইন্ধন রয়েছে।

পাঁশকুড়া ব্লকের মাইশোরা পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা কুরবান শা’র সঙ্গে সাপে-নেউলে সম্পর্ক বিজেপি নেতা আনিসুর রহমানের। বিজেপিতে যোগদানের পর থেকে একাধিক মামলায় জর্জরিত আনিসুর এখনও জেলে। তৃণমূলে আনিসুরের জায়গা নেন কুরবান। ক্রমেই হয়ে ওঠেন অধিকারী পরিবারের আস্থাভাজন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পাঁশকুড়া-১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি পদে কুরবানকেই মনোনীত করে অধিকারী পরিবার। ফলে শক্তি বাড়ে কুরবানের। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিরোধীশূন্য মাইশোর পঞ্চায়েতের দখল নেয় তৃণমূল। আসন্ন নির্বাচনেও মাইশোরায় এখনও চোখে পড়েনি বিরোধী দলের দেওয়াল লিখন। আনিসুর ও কুরবানের শত্রুতা এখন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিণত হয়েছে। যার ফলেই বৃহস্পতিবার ভারতীকে কালো পতাকা দেখানোর ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

এদিন রাতে দু’দলের তরফেই পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলে গ্রেফতারের দাবিতে পাঁশকুড়া থানা ঘেরাও করা হয়। ঘেরাও কর্মসূচি থেকে ফেরার পথে থানার অদূরে বিজেপি নেতা কর্মীদের ওপর তৃণমূলের লোকজন চড়াও হয় বলে অভিযোগ ।এই ঘটনায় তাদের ২২ জন নেতা কর্মী আহত হয়েছেন বলে বিজেপির দাবি। তিন জনকে তমলুক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, বাকিদের স্থানীয় একটি চিকিৎসালয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। আহতদের মধ্যে রয়েছেন পাঁশকুড়া পুরসভার বিরোধী নেতা সিন্টু সেনাপতিও। যদিও বিজেপির নেতা কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা অস্বীকার করেছে তৃণমূল। মাইশোরায় তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে হামলার ঘটনায় ভারতী ঘোষ সহ বিজেপির ১৮ জন নেতা কর্মীর নামে অভিযোগ দায়ের করেছে তৃণমূল।

Lok Sabha Election 2019 general-election-2019-west-bengal লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ Panskura Bharati Ghosh BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy