Advertisement
E-Paper

ভোট-পর্বের মধ্যেই রামনবমীতে ফের সশস্ত্র মিছিলের ডাক বিজেপির

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, রামনবমীর মিছিলে প্রশাসন বাধা দিতে গেলে পরিণাম ‘ভয়ঙ্কর’ হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ০১:২৭
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

ভোট-পর্বের মধ্যেই অস্ত্র হাতে রামনবমী পালন করার ডাক দিল বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার। কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় আজ, শনিবার থেকেই সশস্ত্র এবং বাইক মিছিল হবে বলে আগাম জানিয়ে দিয়েছে তারা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নির্বাচন কমিশনের কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য চেয়েছে রাজ্য প্রশাসন।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, রামনবমীর মিছিলে প্রশাসন বাধা দিতে গেলে পরিণাম ‘ভয়ঙ্কর’ হবে। কিন্তু ভোট-প্রচারের সময়ে ধর্মীয় অনুষঙ্গ ব্যবহার করা যখন নিষিদ্ধ, তখন এমন কর্মসূচি কী ভাবে হতে পারে, সেই প্রশ্ন আগেই তুলেছিল সিপিএম। তৃণমূল-সহ অন্য দলগুলিও একই প্রশ্ন তুলছে। তবে বিজেপির অস্ত্র-মিছিলের বিরোধিতা করলেও নানা জায়গায় রামনবমীর অনুষ্ঠানে সামিল হওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূলও। কোথাও সরাসরি, কোথাও নানা সংগঠনের মাধ্যমে।

কোনও বাধা-নিষেধের পরোয়া না করে তাঁরা যে অস্ত্র নিয়েই রামনবমীর মিছিল করতে চান, শুক্রবার তা স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন দিলীপবাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রামনবমীতে অস্ত্র নিয়ে শোভাযাত্রা ঐতিহ্য। যার যেটা ঐতিহ্য, সে সে ভাবে করবে। ভোট এসেছে বলে বা কোনও সরকারের জন্য আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক পরম্পরা ছেড়ে দেব, এটা হতে পারে না!’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ভোটের সময়ে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ ছড়ানোর দায়ে বিরোধীরা যে কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছে, তা নিয়েও পাল্টা কটাক্ষ করেছেন বিজেপি সভাপতি তথা মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী। দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘নির্বাচন কমিশন কেন, বিজেপিকে আটকাতে পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে বিরোধীরা! যাক কমিশনে! কিন্তু আমার ধার্মিক অধিকার আমি পালন করব। সংবিধান সেই অধিকার আমাকে দিয়েছে। আমাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘আমি সাম্প্রদায়িক কাজ করলে ওঁরা আমার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিন, জনজাগরণ করুন। কিন্তু ওঁরাও তো রামনবমী করছেন। আমরা শুরু করেছি। ওঁরা অনুকরণ করছেন।’’ প্রশাসন বাধা দিলে কী হবে? দিলীপবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে। ভোটের মধ্যে জনগণের থাপ্পড় খেলে আর উঠে দাঁড়াতে পারবেন না!’’

গেরুয়া শিবিরের এমন হুঙ্কারের প্রেক্ষিতে সতর্কতা নিতে হচ্ছে কমিশনকেও। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে রামনবমীর জন্য দুই কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাতে সম্মত হয়েছে তারা। প্রাথমিক ভাবে ব্যারাকপুর এবং আসানসোলে ওই বাহিনী ব্যবহার করা হবে বলে কমিশন সূত্রে খবর। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে গত বছর অর্জুন সিংহ তৃণমূলের পাল্টা রামনবমী ও হনুমান জয়ন্তী পালনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। অর্জুন এ বার ব্যারাকপুরে বিজেপির প্রার্থী। অর্জুন বলেছেন, ‘‘আমি নিজে কোনও মিছিল করছি না। তবে এই অঞ্চলে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ শোভাযাত্রা বার করবে। আমি প্রতিটিতেই যোগ দেব।’’ তাঁর বক্তব্য, মিছিলে অস্ত্র থাকবে কি না, তা ঠিক করবে পরিষদই। আসানসোলেও বিজেপি-তৃণমূলের পাল্টা কর্মসূচি ঘিরে গত বার উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। তাই ওই দুই জায়গাতেই আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার ব্যবস্থা করছে কমিশন ও প্রশাসন।

ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কাজে লাগিয়ে ভোটের মধ্যে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধীরা। শাসক তৃণমূলের তরফে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘রামনবমী সকলেই পালন করতে পারেন। কিন্তু ওঁরা যে ভাবে অস্ত্র নিয়ে ভয় দেখিয়ে উত্তেজনা তৈরি করেন, আমরা বরাবরই তার বিরুদ্ধে। কমিশন যদি কিছু না করে, তা হলে বলতেই হবে তারা বিজেপির জন্য নীরব দর্শক!’’ তৃণমূলও যে নানা সংগঠনের হয়ে রামনবমী পালন করতে যাচ্ছে, সেই প্রসঙ্গে ফিরহাদের ব্যাখ্যা, ‘‘মানুষ তো ধর্মাচরণ করতেই পারেন। গোলমাল না হলেই কোনও সমস্যা নেই।’’

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দলই ধর্মীয় উৎসবকে রাজনৈতিক মেরুকরণের স্বার্থে ব্যবহার করছে। আমরা রাজ্যের সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আহ্বান করছি, সতর্ক থাকুন। ঐক্যবদ্ধ থাকুন। কোনও সুযোগ সাম্প্রদায়িক শক্তিকে দেবেন না।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘রামনবমী কেউ করতে পারে। কিন্তু অস্ত্র নিয়ে মিছিল, ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার কোনও ভাবেই মানা যায় না।’’

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পূর্ব ভারতের সংগঠন সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিংহ অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘রামনবমী একটি সামাজিক উৎসব। বিরোধীরাই রামনবমীতে রাজনৈতিক রং লাগানোর চেষ্টা করছে। যে সমস্ত রাজনৈতিক দল ভোট রাজনীতির জন্য রামনবমী করছে, আমরা তার তীব্র বিরোধী।’’ কিন্তু বিজেপি নেতারা তো আপনাদের রামনবমীতে যোগ দিচ্ছেন? শচীনবাবুর উত্তর, ‘‘যাঁরা যোগ দিচ্ছেন তাঁরা ব্যক্তিগত ভাবে আসছেন। দলের তরফ থেকে নয়।’’ মিছিলে কি অস্ত্র থাকবে? শচীনবাবুর বক্তব্য, ‘‘যে রীতি এবং ঐতিহ্য মেনে রামনবমীর মিছিল হয়, এ বারেও তা-ই হবে।’’

BJP RSS Ram Navami Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy