Advertisement
E-Paper

‘বহিরাগত’ তরজায় সরগরম শেষ দফা

বিজেপি নেতাদের এই ‘নৈশ অভিযান’কে কটাক্ষ করে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, ‘‘ওঁরা কি অবাধ ভোটের কথা বলতে গিয়েছিলেন নাকি ব্যাঘাত ঘটানোর কৌশল ঠিক করতে গিয়েছিলেন? ওঁরা যা কিছুই করুন না কেন, মানুষ এর যোগ্য জবাব দিয়ে দেব। আমাদের সেটাই ভরসা।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৯ ০২:২৭

তৃণমূলের ‘বহিরাগত’ অভিযোগ এ বার বিজেপির গলায়।

নির্বাচনী প্রচারের প্রথম দিন থেকেই তৃণমূল নেত্রী বিজেপির বিরুদ্ধে বহিরাগত এনে বাংলাকে ‘অশান্ত’ করার অভিযোগ করছিলেন। শুক্রবার নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বিজেপি অভিযোগ করল, ‘‘দমদম, বসিরহাট, কলকাতা উত্তরে যত মানুষ থাকেন তার থেকে অনেক বেশি লোক বাইরে থেকে এসেছেন। সেই বহিরাগতদের শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে।’’ দাবি জানাতে এ দিন রাতে পোর্ট ট্রাস্টের অতিথিশালায় বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবের কাছেও ফের দরবার করতে যান বিজেপি নেতারা। দলে কলকাতা উত্তরের প্রার্থী রাহুল সিংহও ছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, ভোটারদের পরিচিতি নিশ্চিত করে তবেই যেন ভোট দিতে দেওয়া হয় এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারি যেন কড়া থাকে।

বিজেপি নেতাদের এই ‘নৈশ অভিযান’কে কটাক্ষ করে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, ‘‘ওঁরা কি অবাধ ভোটের কথা বলতে গিয়েছিলেন নাকি ব্যাঘাত ঘটানোর কৌশল ঠিক করতে গিয়েছিলেন? ওঁরা যা কিছুই করুন না কেন, মানুষ এর যোগ্য জবাব দিয়ে দেব। আমাদের সেটাই ভরসা।’’

বিজেপি অবশ্য ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনে থেকে ইন্দৌরের ভোটার কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে ভোটের দিন দুপুরে কলকাতায় দলের রাজ্য দফতরে থাকতে দেওয়ার অনুমতি আদায় করে এনেছে। এখন দিল্লির ভোটার মুকুল রায়ও রবিবার ভোট চলাকালীন কলকাতায় দলের রাজ্য দফতরে থাকতে পারেন বলে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন। যার অর্থ, তাঁরা ‘বহিরাগত’ নন।

অন্য দিকে তৃণমূলও আগেই কমিশনে চিঠি লিখে বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী ভোটের দিন নির্বাচনী এলাকার বাইরের মাত্র এক জন নেতাই রাজ্যে থাকতে পারেন। সেই নিয়ম যেন মানা হয়।

বিজেপির ‘বহিরাগত’ নেতাদের কলকাতায় এনে বসিয়ে রাখার পিছনে ষড়যন্ত্র আছে বলেও মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কলকাতা মেয়র তথা, রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (ববি) বলেন, ‘‘চোরের মায়ের বড় গলা। বাসে পকেটমাররাই সবার আগে চেঁচায়। ওদেরও সেই অবস্থা হয়েছে। বহিরাগত কারা? কমিশনে গিয়ে যিনি বহিরাগত নিয়ে এত চেঁচামেচি করছেন, তিনি নিজেই তো দিল্লির ভোটার! ইন্দৌরের ভোটারকেও তাঁরা কলকাতায় দলীয় দফতরে বসিয়ে রাখার ব্যবস্থা করছেন বলে শুনেছি। জানতে চাই, ওখান থেকেই কি ভোট কিনতে টাকার থলি পাচার হবে?’’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী সভা থেকে একাধিকবার বলেছেন, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ থেকে লোক এনে বাংলায় অশান্তি ছড়াচ্ছে বিজেপি। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের রোড শো’য়ের দিন বিদ্যাসাগর কলেজের হাঙ্গামা এবং বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনাতেও ‘বহিরাগত’দের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর নির্বাচন কমিশনের কাছে বিজেপির এ দিনের আর্জি গোটা বিষয়টিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।

ফিরহাদের দাবি, ‘‘বাইরের লোক এনে আমাদের ভোট করাতে হয় না। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের এত দুর্দশা হয়নি যে বহিরাগত দিয়ে ভোট করাতে হবে। কারা বহিরগত এনে কী করে, মানুষ চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন। ’’

তৃণমূলের পার্থবাবুও এ দিন নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানান, ত্রিপুরা-সহ দেশের বেশ কিছু জায়গা থেকে বিজেপি লোক ঢুকিয়েছে রাজ্যে।

এ দিন কমিশনে গিয়েছিল বাম প্রতিনিধি দলও। শেষ দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর পূর্ণ নিরাপত্তা এবং অবাধ ভোটের দাবিতে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরে এ দিন বিক্ষোভ দেখিয়েছে ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি’। তাদের দাবি, ,ষষ্ঠ দফায় কমিশন বলেছিল ৯৪% বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও হলদিয়া বিধানসভা এলাকার প্রায় সব বুথ দখল হয়েছে। গোলমালের সময়ে কোথাওই প্রায় বাহিনীকে দেখা যায়নি। তাদের অভিযোগ, শেষ দফার ভোটের আগে বিভিন্ন এলাকার হোটেল, লজ এবং অনুষ্ঠান-বাড়িতে বাইরে থেকে দুষ্কৃতীদের এনে রাখা হচ্ছে ভোট লুটের জন্য। অভিযান চালিয়ে বহিরাগতদের বার করে দেওয়ার দাবি তুলেছে তারা। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা সিইও-র কাছে জানতে চেয়েছিলাম, মানুষ অবাধে ভোট দিতে পারবেন? সিইও আশ্বাস দিয়েছেন, এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে। প্রতিশ্রুতি কার্যকর হল কি না, ১৯ তারিখই বোঝা যাবে!’’

কমিশনের কর্তাদের মতে, সুষ্ঠু ভোটের লক্ষে সমস্ত রকম পদক্ষেপ করা হয়েছে। ওই দিন রাজ্যের ন’টি লোকসভা কেন্দ্রের ভোটের পাশাপাশি ভাটপাড়া, দার্জিলিং, হবিবপুর এবং ইসলামপুর বিধানসভার উপ নির্বাচন রয়েছে। তার মধ্যে ভাটপাড়া রয়েছে। লোকসভা ভোটের কারণে আজ, শনিবার সকাল আটটা থেকে রবিবার রাত আটটা পর্যন্ত ফেরি সার্ভিস বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে ব্যারাকপুরের মহকুমা শাসককে নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নির্বাচন অফিসার তথা জেলাশাসক অন্তরা আচার্য।

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ TMC BJP Mamata Banerjee Election Commission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy