নিউ টাউনের একটি অভিজাত হোটেলে মঙ্গলবার রাতে বাঙালি বিদ্বজ্জনদের সঙ্গে অমিত শাহের এই আলাপচারিতার আয়োজন হয়েছিল।
বাংলায় বিজেপিকে ‘বহিরাগত’ আখ্যা দেওয়া নিয়ে এ বার মুখ খুললেন অমিত শাহ। বিজেপির কিছুই নেই বাংলায়, বাইরে থেকে নেতা ভাড়া করে এনে লড়ছে তারা— এ কথা তৃণমূলের সব স্তরের নেতারাই বার বার বলছেন। বিজেপির রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলার সংস্কৃতি মেলে না,বলা হচ্ছে এমনও। অমিত শাহের রোড শোকে ঘিরে শুরু হওয়া হাঙ্গামায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর সেই তত্ত্বকে তুঙ্গে তুলেছে তৃণমূল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার রাতেই কলকাতায় বিদ্বজ্জনদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিজেপি সভাপতি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলেন, বিজেপিকে ‘বহিরাগত’ হিসাবে দেখে ভয় পাওয়া কেন উচিত নয়।
অমিত শাহের রোড শোয়ে লোক আনা হয়েছে বাইরে থেকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ দাবি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি-টিএমসিপি সংঘর্ষে কলেজ স্ট্রিট ও বিধান সরণি উত্তপ্ত হয়ে ওঠা এবং বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর হওয়ার পরে বিদ্যাসাগর কলেজে ছুটে যান তিনি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী ফের বলেন, ‘‘বিহার, রাজস্থান থেকে বিজেপি গুন্ডা নিয়ে এসেছে।’’ আর বাংলায় বিজেপি ‘বহিরাগত’ দল— এ কথা তিনি আগেও অনেক বার বলেছেন। মঙ্গলবার রাতে সে সবের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন বিজেপি সভাপতি। বাঙালি বিদ্বজ্জনদের সঙ্গে এক বৈঠকে শাহের মন্তব্য, ‘‘এখানে বিজেপি জিতলে কোনও বাঙালিই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, বাইরে থেকে কেউ আসবেন না।’’
নিউ টাউনের একটি অভিজাত হোটেলে মঙ্গলবার রাতে বাঙালি বিদ্বজ্জনদের সঙ্গে অমিত শাহের এক আলাপচারিতার আয়োজন হয়েছিল। লোকসভার নির্বাচন কোন ধরনের ইস্যুর উপর ভিত্তি করে লড়া উচিত, বিধানসভার নির্বাচনে কোন কোন ইস্যুতে জোর দেওয়া উচিত— সে বিষয়ে নিজের মত বিশদে জানান শাহ। দেশের সুরক্ষা, অর্থনীতি, মজবুত সরকার, জাতীয়তাবাদ— এই ধরনের ইস্যুই লোকসভা নির্বাচনে চর্চিত হওয়া উচিত, জাতপাতের নামে বা গোষ্ঠীর নামে ভোট হওয়া উচিত নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন, কে ভাঙল মূর্তি, বাইকে আগুন ধরাল কারা? ভিডিয়ো দেখিয়ে প্রমাণের চেষ্টা ডেরেক-পার্থর
বিজেপি-কে এ রাজ্যে ‘বহিরাগত’ হিসেবে আখ্যা দেওয়ার প্রসঙ্গও আসে সেই আলোচনাতেই। অমিত শাহ বলেন, ‘‘বহিরাগত, বহিরাগত বলে কাউকে ভয় দেখাবেন না। আমিও এখান থেকে নির্বাচনে লড়ব না, কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও লড়বেন না। যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে কোনও বাঙালি ভদ্রলোক বা ভদ্রমহিলাই মুখ্যমন্ত্রী হবেন।’’
আরও পড়ুন, কথা বলার ভাষা নেই, প্রতিক্রিয়া শঙ্খের, গেরুয়া নৈরাজ্যকে ডেকে আনছেন মমতাই, বললেন অসীম
অমিত শাহ যখন এই মন্তব্য করছেন, ততক্ষণে কিন্তু বিজেপি-কে ‘বাঙালি বিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত করে কণ্ঠস্বর তুঙ্গে তুলে দিয়েছে তৃণমূল। বিজেপি বাংলার সংস্কৃতি জানে না, বিদ্যাসাগরকে চেনেই না, তাই বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষে তাঁর মূর্তি ভেঙে দিয়েছে— এই কথা বলে সুর চরমে তুলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। ‘‘আমার লজ্জা করছে, আমরা লজ্জিত’’, বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি-কে তীব্র ‘ধিক্কার’ জানিয়েছেন তিনি। বিদ্বজ্জনদের বৈঠকে ঢোকার আগে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সে মন্তব্য বিজেপি সভাপতির কানে পৌঁছেছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণের জবাব দেওয়ার চেষ্টা যে অমিত শাহের মন্তব্যে ছিল, তা পরিষ্কার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy