Advertisement
E-Paper

ভোটের তাপে শোকের ছায়া কাটেনি কামাত গ্রামে 

ভোটের আঁচ কেমন ভাবে পড়ছে প্রত্যন্ত এলাকায়? কেমন আছেন দুঃস্থ, একদা নির্যাতিত, বা প্রান্তিক ভোটাররা? জনজীবনের সেই ছবি তুলে ধরছে আনন্দবাজার।হালিমা বলেন, ‘‘ছেলে দিল্লিতে কাজ করে। আমাকে এখানে পরের বাড়িতে কাজ করে পেট চালাতে হয়।’’ হালিমার কথায় যে চিত্র ফুটে ওঠে, একই বারোমাস্যার সাক্ষী রেজিনা, আতিয়া সাবিনাদের। তাঁরা কেউ অন্যের বাড়িতে কাজ করেন, কেউ কাঁচা চা পাতা তোলেন। কোনও মতে দিন চলে। 

মেহেদি হেদায়েতুল্লা 

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৯ ০৬:৫৪
শূন্য-ঘর: রহিমার শোক কাটেনি। নিজস্ব চিত্র

শূন্য-ঘর: রহিমার শোক কাটেনি। নিজস্ব চিত্র

আগে দু’টি উনুন জ্বলত। এখন একটি। সেটিও সব দিন জ্বলে না। খাওয়া এক বেলা। চাল বাড়ন্ত থাকলে উপোস। উনুনের আগুনে কাঠ ঠেসে দিয়ে কাপড়ের খুঁটে চোখ মুছতে মুছতে যা বললেন হালিমা খাতুন, তার মর্মার্থএ রকমই।

হালিমা বলেন, ‘‘ছেলে দিল্লিতে কাজ করে। আমাকে এখানে পরের বাড়িতে কাজ করে পেট চালাতে হয়।’’ হালিমার কথায় যে চিত্র ফুটে ওঠে, একই বারোমাস্যার সাক্ষী রেজিনা, আতিয়া সাবিনাদের। তাঁরা কেউ অন্যের বাড়িতে কাজ করেন, কেউ কাঁচা চা পাতা তোলেন। কোনও মতে দিন চলে।

চৈত্র মানে ‘অফ সিজন’। গ্রামে কোথাও কোনও কাজ নেই। উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়া কামাত গ্রামে এই ছবি। গ্রামের ২০০টি পরিবার রয়েছে। কাঁচা রাস্তা। নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা। গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ নেই। কাজের খোঁজে যেতে হয়েছে দিল্লি, কেরল, হরিয়ানায়। মহিলারা রাত থাকতে উঠে খেতমজুরের কাজ করতে রওনা দেন দূরের গ্রামে। এই অবস্থার মধ্যে তাই ভোটের বাদ্যি এখানে কারও কানে পৌঁছয় না। গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এই গ্রামের এক মহিলা সহ বেশ কয়েকজন যুবক পাড়ি দিয়েছিলেন ভিন্ রাজ্যে কাজের জন্য। কিন্ত মাঝ সড়কে থমকে যায়। ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান গ্রামের এক মহিলা সহ তিন জন। গত ফেব্রয়ারি মাসে হাজিপুরে নয়াদিল্লিগামী সীমাঞ্চল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় কামাত গ্রামের বাসিন্দা আনসার আলম, সামসুদ্দিন এবং সাহেদা খাতুনের মৃত্যু হয়। আনসার দশম শ্রেণির ছাত্র। এবারেই গ্রামের পড়শিদের সঙ্গে কাজের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্ত মাঝরাস্তায় থমকে গেছে সব। সেই ক্ষত এখনও ভুলতে পারেনি কামাত গ্রাম। তাই ভোট নিয়ে তাঁরা নিরুত্তাপ। কিছু দিন আগে এই গ্রামে গিয়েছিলেন বিদায়ী সাংসদ তথা এবারের রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দের সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম। তারপর আর কেউ খোঁজ নেননি।

এই এলাকার বিধায়ক মন্ত্রী গোলাম রব্বানি। গ্রামবাসীরা বলছেন, ঘটনার পরের দিন মন্ত্রী গোলাম রব্বানি এসেছিলেন। আশ্বাস দিয়েছিলেন ক্ষতিপূরণ মিলবে। কিন্ত কই? কিছুই তো পাওয়া গেল না?

দুর্ঘটনায় মৃতের সামসুদ্দিনের আত্নীয় মহম্মদ আলম জানান, সেদিন তিনিও সেই ট্রেনের যাত্রী ছিলেন। তিনি জানালেন, রেল থেকে ঘোষণা করেছিল ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে। তবে গ্রামের আনসারের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেলেও পাননি সামসুদ্দিন ও সাহেদা খাতুনের পরিবার।

যদিও রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কাগজপত্র ঠিক ছিল না। পরে অবশ্য কাগজপত্র জমা করেছে। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আনসারের বাবা পেশায় দিনমজুর আব্দুল রেজ্জাক বলেন, ‘‘পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছি। সেই টাকা দিয়ে কী করব? ছেলেটাকে হারিয়ে ফেলেছি। এলাকায় কাজ নেই বলেই তো পাড়ি দিয়েছিল ভিন রাজ্যে।’’

আক্ষেপ রয়েছে দুর্ঘটনায় মৃত্যু সাহেদা খাতুনের বোন রহিমা খাতুনের। বললেন, ‘‘দিদি কত বার স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রশাসনের কাছে দরবার করেছিল একটি ঘর আর বিধবা ভাতার জন্য। কিন্ত কিছুই পাননি। আর সেই ক্ষোভে হরিয়ানা যাচ্ছিলেন ছেলেদের কাছে।’’ তবুও লোকসভা ভোট এসে পড়ায় এলাকায় শুরু হয়েছে প্রচার। তা নিয়ে উৎসাহ তেমন চোখে পড়ে না হালিমা রহিমাদের। জানালেন, ভোট দিয়ে কী হবে? হালিমা বলেন, ‘‘বাইরে যেতেই হবে আমাদের ঘরের ছেলেদের। আর তারপর অপেক্ষা। কখনও সুসংবাদ আসে কখনও দুঃসংবাদ।’’

Lok Sabha Election 2019 Kamat Mourn
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy