Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নজর এ বার দিল্লিতে, বুঝিয়ে দিল মমতার ইস্তাহার, মোদীর বিরুদ্ধে আরও চড়ল সুর

রাজ্য সরকারের সাফল্য, কেন্দ্রের ব্যর্থতা এবং প্রতিশ্রুতি— এক কথায় এই ত্রিমুখী লক্ষ্য নিয়েই প্রকাশিত হল তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহার।

ইস্তাহার প্রকাশ করছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র

ইস্তাহার প্রকাশ করছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ১৬:১৭
Share: Save:

লক্ষ্য শুধু বাংলার ৪২টি আসন নয়, বৃহত্তর লক্ষ্য দিল্লির দখল নেওয়াই— বুঝিয়ে দিল তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহার। বুধবার কালীঘাটে দলীয় কার্যালয়ে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের জন্য ইস্তাহার প্রকাশ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ৮ বছরে রাজ্যে তৃণমূল সরকারের যে সব সাফল্য রয়েছে, তার ফলাও উল্লেখ রয়েছে ইস্তাহারে। নোটবন্দি, জিএসটি-সহ একগুচ্ছ বিষয়ে কেন্দ্রের মোদী সরকারকেও নিশানা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে কেন্দ্রে সরকারে অংশ নিলে তাঁর পরিকল্পনা কী, ইস্তাহারে তার রূপরেখা তুলে ধরলেন মমতা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল, তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহারে সর্বভারতীয় চরিত্র।

রাজ্য সরকারের সাফল্য, কেন্দ্রের ব্যর্থতা এবং প্রতিশ্রুতি— এক কথায় এই ত্রিমুখী লক্ষ্য নিয়েই প্রকাশিত হল তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহার। তৃণমূল সূত্রে খবর মিলেছিল, রাজ্য সরকারের সাফল্যগুলি তুলে ধরা হবে ইস্তাহারে। প্রকাশের পরও দেখা গেল, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা তুলে ধরা হয়েছে। কন্যাশ্রী, কৃষকবন্ধুর মতো প্রকল্পে কী ভাবে রাজ্যের প্রান্তিক মানুষের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, তা তুলে ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘সব সম্প্রদায়, সব বয়সের নাগরিকদের কথা মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছে ইস্তাহার। কৃষক, শ্রমিকদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।’’

ইস্তাহার প্রকাশ পর্বে মমতা এ দিন যথেষ্ট আক্রমণাত্মক ছিলেন। কেন্দ্রকে নিশানা করে একের পর নোটবন্দি থেকে জিএসটি, নীতি আয়োগ থেকে কেন্দ্রের আর্থিক নীতির মতো একাধিক ইস্যুতে কটাক্ষ করেন মমতা। বলেন, নোটবন্দিতে দুর্নীতি হয়েছে এবং সেই দুর্নীতির তদন্ত চান তাঁরা। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে তদন্তের দাবিও তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী। একই সঙ্গে মমতার কটাক্ষ, সিবিআই, আরবিআই-এর মতো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। অপরিকল্পিত ভাবে জিএসটি চালু করা হয়েছে। আর এই জোড়া ধাক্কায় ভেঙে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। যোজনা কমিশন তুলে দিয়ে নীতি আয়োগ গঠন করা হয়েছে। এ নিয়ে মমতার তোপ, ‘নীতি আয়োগের কোনও নীতিই নেই’।

দলের নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন: মহাকাশে মহাশক্তি ভারত, মোদীর ঘোষণার পরই কৃতিত্ব নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা

১৯৯৮ সালে তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই লোকসভা ভোটের আগে ইস্তাহার প্রকাশ করছে তৃণমূল। কিন্তু জাতীয় প্রেক্ষিতে এ ভাবে ইস্তাহার প্রকাশ আগে হয়নি বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। সেই লক্ষ্য মাথায় রেখেই কেন্দ্রের সরকারে তৃণমূল অংশ নিলে অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি তৈরির কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সূত্রেই মমতার আশ্বাস, ১০০ দিনের কাজকে বাড়িয়ে ২০০ দিনে নিয়ে যাওয়া হবে। মজুরিও দ্বিগুণ করা হবে। পুনর্বিবেচনা করা হবে জিএসটি। নীতি আয়োগ নিয়ে মমতার আশ্বাস, ফিরিয়ে আনা হবে যোজনা কমিশন।

বুধবারই উপগ্রহ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বা অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইলের সফল পরীক্ষা করেছে ভারত। সেই ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ তুলে মমতার আক্রমণ, ‘‘২০১০ সালেই এই ক্ষমতা ছিল ভারতের। তাহলে উনি নতুন কী করলেন? কী অবদান আছে ওঁর? এর পুরো কৃতিত্বই আমাদের বিজ্ঞানীদের এবং এর জন্য আমরা গর্বিত।’’ ভোটের মুখে এই ঘোষণা করে মোদী নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করেছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী।

ইস্তাহার প্রকাশ কর্মসূচিতে দলনের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন: একটু সময় দিন, মেধা তালিকায় নাম থাকা কাউকে বঞ্চিত করতে চাই না, অনশনস্থলে বললেন মমতা

লোকসভা নির্বাচনের জন্য রাজ্যে আসা বাহিনীর বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ নিয়ে গোড়া থেকেই সরব সরব তৃণমূল। কমিশনেও এ নিয়ে নালিশ ঠুকেছে মমতার দল। তার উপর সম্প্রতি এ রাজ্য এবং ঝাড়খণ্ডের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিএসএফ কর্তা কে কে শর্মাকে পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন। ইস্তাহার প্রকাশের অনুষ্ঠানে এ নিয়েও সরব হন মমতা। তাঁর অভিযোগ, এই পর্যবেক্ষক আরএসএস ঘনিষ্ঠ। একটি ছবি দেখিয়ে তৃণমূল নেত্রীর দাবি, কে কে শর্মা উর্দি পরে আরএসএস-এর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। কমিশনকে নিশানা করে মমতা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কেন কে কে শর্মাকে নিয়োগ করা হল? এর নাম গণতন্ত্র?’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এ বার লোকসভা ভোটে বিজেপির নীতি, ৭৫ বছরের বেশি বয়সের কাউকে প্রার্থী করবে না দল। সেই সূত্রেই টিকিট পাননি লালকৃষ্ণ আডবাণী, মরলী মনোহর জোশীরা। এই প্রসঙ্গ টেনে মমতা এ দিন বলেন, প্রবীণদের মধ্যেও প্রবীণতম লালকৃষ্ণ আডবাণী। অথচ তাঁকেই টিকিট দেয়নি বিজেপি। ওঁরা প্রবীণদের সম্মান দিতে জানে না। দু’জনের নির্দেশে গোটা দল চলছে।’’ যদিও এটা যে বিজেপির অভ্যন্তরীণ বিষয়, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE