Advertisement
E-Paper

মানসের মেজাজ গরম, দিলীপের ঠান্ডা ‘হুমকি’

এ দিন সকাল ৭টায় খড়্গপুর রেল পার্কের বাংলো থেকে দিলীপ বেরিয়ে পড়লেও সবংয়ে নিজের ভোট দিয়ে সাড়ে ৮টা নাগাদ বেরোন মানস।

ঘোলপান: গোপীবল্লভপুরে মায়ের কাছে দিলীপ ঘোষ। ছবি: সুমন বল্লভ

ঘোলপান: গোপীবল্লভপুরে মায়ের কাছে দিলীপ ঘোষ। ছবি: সুমন বল্লভ

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০৪:০৬
Share
Save

সাধারণত ভোটের দিন তিনি বাইরে বড় একটা ঘোরেন না। ভোট দিয়ে এসে দলীয় কার্যালয়ে বসে পড়েন। টেবিলে ছড়ানো চারটি মোবাইলেই খোঁজ নেন পরিস্থিতির। এটাই তাঁর পরিচিত ছবি। কিন্তু রবিবার সারা দিন তৃণমূলের মানস ভুঁইয়া ছুটে বেড়ালেন গ্রাম থেকে শহর। মাঝেমধ্যেই মেজাজ হারিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই বলেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে বিজেপিকে জেতাতে।

আরেক জন, তিনিও ঘুরলেন। যেখানে বাধা পেলেন, সেখানে দাঁড়িয়ে পাল্টা ‘হুমকি’ দিলেন। এবং ভোট শেষ হওয়ার পরে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ দাবি করলেন, ‘‘বুথের ভিতর কোনও গোলমাল হয়নি। যা হয়েছে তা বাইরে। ভোট নিয়ে আমার কোনও অভিযোগ নেই। তবে মেদিনীপুরের কিছু জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকায় তৃণমূল গোলমাল করেছে।’’

একনজরে এটাই ছিল এ দিন মেদিনীপুর লোকসভার ভোটের চিত্র। এমনিতেই মানস বনাম দিলীপের লড়াইতে অনেক আগে থেকেই সরগরম ছিল মেদিনীপুর।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এ দিন সকাল ৭টায় খড়্গপুর রেল পার্কের বাংলো থেকে দিলীপ বেরিয়ে পড়লেও সবংয়ে নিজের ভোট দিয়ে সাড়ে ৮টা নাগাদ বেরোন মানস।

তৃণমূলপ্রার্থী এ দিন প্রথমেই চলে যান দাঁতনের দিকে। বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর পেয়ে সেখানে কিছুক্ষণ ঘুরপাক খেয়ে ফের গ্রামের রাস্তায় ছোটে তাঁর গাড়ি। তাঁর কাছে খবর আসে, নারায়ণগড়ের পাতলিতে চার তৃণমূল কর্মীকে মারধর করেছে বিজেপি-র কর্মীরা। এরপরেই তিনি বেলদায় ব্লক তৃণমূল কার্যালয়ে চলে আসেন। ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ ও ব্লকের নেতা অভিজিৎ বেরাকে নিজের গাড়িতে চাপিয়ে সোজা পাতলির উদ্দেশে রওনা দেন।

কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের সঙ্গে করমর্দন মানস ভুঁইয়ার। রবিবার নারায়ণগড়ে। ছবি: কিংশুক আইচ

ততক্ষণে কেশিয়াড়ির রজনীকান্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছে গিয়েছেন দিলীপ। তিনিও অভিযোগ পেয়েছেন, বুথ থেকে বিজেপি এজেন্টকে মারধর করে বের করে দিয়েছে তৃণমূল। দিলীপের সামনেই শঙ্কর বারিক নামের তৃণমূল কর্মীকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন বিজেপি কর্মীরা। অভিযোগ তিনিই বিজেপি এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন এমনকী বোমা মারার হুমকি দিয়েছেন।

নারায়ণগড়ের বরদাইতে তখন তৃণমূলের পোড়া পার্টি অফিস দেখতে গেছেন মানস। সেখানেই খবর এল দলীয় কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। তা শুনে কেশিয়াড়ি পৌঁছলেও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে ফের মেজাজ হারান মানস। বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আর কোনও কথা হবে না। আমি সব দেখে নেব।" মোহনপুরের রামপুরাতে তখন বুথে ঢোকা নিয়ে দিলীপের সঙ্গে প্রায় খন্ড যুদ্ধ বেধেছে তৃণমূল কর্মীদের।

তৃণমূল কর্মীরা দিলীপকে আটকালে তিনিও পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘তেল বেড়েছে, তেল গলিয়ে দেব। জমা করে দেব।’’ দিলীপের অভিযোগ রাস্তা আটকে তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীর গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যদিও মানসের পাল্টা দাবি, ‘‘পাগলের মতো ওই প্রার্থী নিজেই বুথে ঢুকে মারধর করছিলেন। তাই মানুষ আটকেছেন।’’

এ দিন খড়্গপুর ও মেদিনীপুরের বেশ কয়েকটি বুথে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় দিলীপকে। চৌকিদার চোর, দিলীপ গো ব্যাক বলে তৃণমূল কর্মীরা যখন চেঁচাচ্ছেন একই সঙ্গে তখন তখন বিজেপি কর্মীরা জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিচ্ছেন। আর সব কিছু কাটিয়ে বেরনোর সময় দিলীপ বলেছেন, “কয়েকটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না বলেই বাইরে কিছুটা সমস্যা হয়েছে।"

দাঁতনের উচুডিহা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথেও গিয়ে তৃণমূল-বিজেপি ‘সংঘর্ষ’। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে বুথে ঢুকে দিলীপ তৃণমূলের এজেন্টকে বলেন, ‘‘মারামারি করছিস কেন? কাল তো আবার গ্রামে পাশাপাশিই থাকবি।’’

মানস অবশ্য ততক্ষণে খড়্গপুরে এসে খাওয়া দাওয়া সেরে বেরিয়েছেন ওই শহর-সহ অন্যান্য বুথ দেখতে। কেননা, সেখানেও বিক্ষিপ্তভাবে খবর আসছিল ‘বিজেপির সন্ত্রাসে’র। দাঁতন দু’নম্বর ব্লকের সুলেমানপুরে বিজেপি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে ভোট করাচ্ছেন বলেও অভিযোগ তোলেন মানস।

এই রকম চাপানউতোরের মধ্যেই দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সারা দিন ভোট ‘করালেন’। উত্তেজনা যতই থাক কেশপুরের কাছে কার্যত ‘হেরে’ গেল মেদিনীপুর।

Lok Sabha Election 2019 Manas Bhunia Dilip Ghosh লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}