Advertisement
E-Paper

গনির পথ ধরেই মিছিলে

কয়েক হাজার দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ে এ দিনের মনোনয়নের মিছিল হল চুড়ান্ত বিশৃঙ্খল ভাবে। মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি সেলফি ফোবিয়াতে ভুগলেন অনেক দলীয় কর্মীই।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৪৩
একসঙ্গে: বুধবার মালদহে মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছেন মৌসম নুর ও মোয়াজ্জেম হোসেন। নিজস্ব চিত্র

একসঙ্গে: বুধবার মালদহে মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছেন মৌসম নুর ও মোয়াজ্জেম হোসেন। নিজস্ব চিত্র

কারও মুখে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোশ। অনেক মহিলারা পড়েছেন তৃণমূলের প্রতীক ঘাসফুলের চিহ্ন আঁকা শাড়িও। প্রতীক আঁকা ছাতা ও টুপিও অনেকের মাথায়। আবার অনেকের হাতে দলের তেরঙা বেলুন থেকে শুরু করে দলনেত্রী, দলের মালদহ জেলার পর্যবেক্ষক তথা পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ও দুই প্রার্থীর ফ্লেক্সও। সঙ্গে ব্যান্ডের বাজনা ও ধামসা-মাদলের বোলে আদিবাসী নাচ। আর হুডখোলা গাড়িতে চেপে দলীয় দুই প্রার্থী মৌসম নুর ও মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও শুভেন্দুও। এমনই বর্ণময় ভাবে বুধবার দুপুরে পুরাতন মালদহের সাহাপুর থেকে শুরু করে ইংরেজবাজার শহর জুড়ে মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিলেন মালদহের দু’টি লোকসভা আসনের দুই তৃণমূল প্রার্থী।

তবে কয়েক হাজার দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ে এ দিনের মনোনয়নের মিছিল হল চুড়ান্ত বিশৃঙ্খল ভাবে। মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি সেলফি ফোবিয়াতে ভুগলেন অনেক দলীয় কর্মীই। আর বিশৃঙ্খল মিছিলের জেরে মালদহ টাউন হলের সামনে আটকে পড়ল অ্যাম্বুল্যান্সও। পাশাপাশি বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত যানজটে জেরবার হল ইংরেজবাজার শহরের একাংশ। যদিও মনোনয়ন দিয়ে বেরিয়ে দুই প্রার্থী মৌসম ও মোয়াজ্জেমের দাবি, মনোনয়নের এই জনজোয়ার বলে দেয় জয়ের ব্যাপারে তৃণমূল কতটা প্রত্যয়ী।

বড় মামা গনি খানেরই মত। পীরের দরগায় শ্রদ্ধা ও দোয়া এবং মন্দিরে পুজো দিয়েই সারলেন মনোনয়ন। শ্রদ্ধা জানাতে ভুললেন না বড় মামা গণি খান ও বাবা-মাকেও। তাঁদেরও সমাধিতে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে দোয়া করলেন। তিনি মালদহের কোতোয়ালি পরিবারের মৌসম নুর। বুধবার উত্তর মালদহ কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মালদহের রূপকার বলে পরিচিত বরকত আতাউর গনি খান চৌধুরীর ভাগনি মৌসম নুর। ২০০৯ সালে মা রুবি নুরের মৃত্যুর পর একপ্রকার আচমকাই তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ। ওই বছরই তাঁর মায়ের সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রে উপ নির্বাচনে জয়ী হয়ে কংগ্রেসের বিধায়ক হন তিনি। কিন্তু বিধায়ক হওয়ার মাত্র তিন মাস পরই দল তাকে উত্তর মালদহ লোকসভা আসনে টিকিট দেয় এবং তিনি নির্বাচিত হয়ে সাংসদ হন। এই একই কেন্দ্র থেকে ২০১৪ সালেও তিনি জয়লাভ করে দ্বিতীয় বারের জন্য সাংসদ হন। সে বছর তিনি দলের জেলা সভানেত্রীর পদেও বসেন। কিন্তু গত ২৮ জানুয়ারি নবান্নে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে মৌসম তৃণমূলে যোগ দেন। সেই যোগদান পর্বেই মমতা তাঁকে উত্তর মালদহের দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। পরে অন্যান্য দলীয় প্রার্থী ঘোষণার দিনও ফের মৌসমের নাম ঘোষণা করা হয়। এ দিন ছিল তাঁর মনোনয়ন।

মৌসম দল বদল করলেও কোতোয়ালি পরিবারের ছায়া কিন্তু রয়েই গিয়েছে। আর তাই নিজের ব্যক্তিগত কার্যালয় নুর ম্যানসনে নিজের বসার আসনের উপরের দেওয়ালে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ের ছবির পাশেই রেখেছেন মামা গনি খান ও মা রুবি নুরের ছবি। আর গনি খানের মনোনয়নের পরম্পরাও তিনি বদলাননি।

গত ২৮ মার্চ থেকে মালদহ জেলার উত্তর ও দক্ষিণ মালদহ দু’টি লোকসভা আসনে মনোনয়ন শুরু হয়েছে। এ দিন মনোনয়ন জমা দিলেন তৃণমূল প্রার্থীরা। এ দিন সকালে একাধিক পিরের দরগায় শ্রদ্ধা ও দোয়া এবং মন্দিরে পুজো দিয়ে মনোনয়ন জমা দেন উত্তর মালদহের দলীয় প্রার্থী মৌসম। মোয়াজ্জেম নিজের বাড়িতেই নামাজ পড়ে মনোনয়নে চলে আসেন। মনোনয়ন পর্বকে জমজমাট করতে এদিন দু’টি আসনের ব্লকগুলি থেকেই বাস, ছোট গাড়ি করে কয়েক হাজার কর্মীরা জড়ো হন। উত্তর মালদহের কর্মীরা জড়ো হন পুরাতন মালদহের সাহাপুরে একটি বেসরকারি ভবনের সামনে। দক্ষিণ মালদহের কর্মীরা জড়ো হন ইংরেজবাজার শহরের বৃন্দাবনী মাঠে।

প্রথমে সাহাপুর থেকে উত্তর মালদহের কর্মীরাই প্রার্থী মৌসমকে নিয়ে মিছিল করে বৃন্দাবনী মাঠে আসেন এবং তারপর দু’টি কেন্দ্রের কর্মীরা মিলেমিশে মিছিল করেন ইংরেজবাজার শহর জুড়ে। সেই মিছিলে হুডখোলা গাড়িতে দুই প্রার্থী মৌসম ও মোয়াজ্জেমের সঙ্গে ছিলেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। মিছিলটি এমজি রোড ধরে গৌড় রোড, কেজে স্যান্যাল রোড, রাজমহল রোড় হয়ে জেলাশাসকের বাংলোর পাশ দিয়ে এসে বন্দাবনী মাঠে শেষ হয়। সেখান থেকে প্রার্থীরা হেঁটে মনোনয়ন দিতে জেলা প্রশাসনিক ভবনে ঢোকেন।

এ দিকে, মিছিল চলাকালীন রাস্তায় চরম বিশৃঙ্খলা বাধে। সারিবদ্ধভাবে লাইন করে কর্মী-সমর্থকরা না হাঁটায় পরিস্থিতি বিগড়ে যায়। এমনকী ওই পরিস্থিতিতে টাউন হলের সামনে মিছিলের মাঝে আটকে পড়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্সও।

পরে ট্রাফিক পুলিশ কোনওরকমে অ্যাম্বুল্যান্সটিকে ছাড়ার ব্যবস্থা করে। মিছিলের জেরে বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত ইংরেজবাজার শহরের বিজি রোড, কেজে স্যান্যাল রোড, রাজমহল রোড, নেতাজি সুভাষ রোড ও বিএসরোডেও ব্যাপক যানজট বাধে। তা সামাল দিতে ট্রাফিক পুলিশকে রীতিমতো নাকানি-চোবানি খেতে হয়। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি দুলাল সরকার বলেন, ‘‘মিছিলে কিছু ক্ষণের জন্য শহরের কয়েকটি রাস্তায় কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে অ্যাম্বুল্যান্স আটকে গিয়েছিল এমন খবর নেই।”

Lok Sabha Election 2019 Md Moazzem Hossain Mausam Noor TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy