Advertisement
E-Paper

‘আমিও পারি’ বোঝাতে বাড়তি ঝক্কি দুই নায়িকার

মিমি চক্রবর্তী শোনাচ্ছিলেন, ধুম জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে একটি সর্বভারতীয় ব্র্যান্ডের প্রচারে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৪০
মিমি এবং নুসরত। —ফাইল চিত্র।

মিমি এবং নুসরত। —ফাইল চিত্র।

নিজের মেকআপ নিজেকেই করতে হচ্ছে। বিদেশের আউটডোরে খরচ বাঁচাতে ছাতা ধরারও কেউ নেই। তাইল্যান্ডের সৈকতে পুড়ে ঝামা হয়ে শুটিংয়ের কথা বলছিলেন নুসরত জাহান।

আর মিমি চক্রবর্তী শোনাচ্ছিলেন, ধুম জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে একটি সর্বভারতীয় ব্র্যান্ডের প্রচারে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা। রাত দু’টোয় শেষ শটটা ‘ওকে’ হওয়া পর্যন্ত হাসিটা ম্লান হতে দেননি। অথচ তখন গা পুড়ে যাচ্ছে, আর দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই।

নায়িকার জীবন মানেই গ্ল্যামারে মোড়া ‘নাজ়ুক’ পুতুল হয়ে থাকা নয়— এটা দু’জনেই বারবার বলতে কসুর করছেন না। সুন্দরবন-ঘেঁষা যোগেশগঞ্জ বাজারে চড়া রোদে সভা ছাড়াও আদিবাসী নাচে কোমর দুলিয়েছেন নুসরত। রাস্তা আটকে থাকা ভক্তদের আবদারে এর পরেও ফোর্ড গাড়ির হুডটা খুলে দাঁড়াতে হল। খানিক দূর এগোনোর পরে দেখা গেল, গাড়ির এসি-তে বসে মুখের ঘাম মোছার মলমল বা ওয়েট টিস্যুর বাক্সটা বেপাত্তা। নুসরত হাসলেন, ‘‘এখানে তো দলের সবাই ভালবেসে খেয়াল রাখছেন। সিনেমার শুটিং ঢের কঠিন পরিস্থিতিতে হয়।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মাসখানেকের প্রচারের ধকলে টকটকে মুখ মিমির। রক্তচাপ ৮৫/৪৯-এ নেমে গিয়েছে। দু’টি পোষ্য ‘কুকুর-সন্তান’-কে কত দিন ঘোরাতে পারেন না বলে কষ্টে আছে ‘মাতৃহৃদয়’! তবু প্রচারের মাঠে তেমনই মরিয়া। ভাঙড়ের সভায় হঠাৎ মাইক হাতে স্টেজ থেকে নেমে এলেন। ‘‘কী ভাবছেন, হিরোইন মানুষ মাটিতে নামতে ভয় পায়? জানেন কি, ৪০ ডিগ্রি গরমে সোয়েটার পরে আমাদের কাজ করতে হয়, আবার কনকনে ঠান্ডাতেও সোয়েটার পরার সুযোগ পাই না!’’ ভোটের সময়ে ‘আমি তোমাদের লোক’ কথাটা সব প্রার্থীকেই বলতে হয়। কিন্তু নায়িকার মহা জ্বালা, পদে-পদে ‘আমিও পারি’ বোঝানোর দায় বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

যতই পরিশ্রম হোক, নুসরতের ঘুম আসে না রাত তিনটের আগে! নিজের কেন্দ্র ছেড়ে মাথাভাঙা বা ধুবুরিতে প্রচারের পরের দিনেও ঠিক সময়ে কলকাতা থেকে বসিরহাটমুখী হচ্ছেন। রমজ়ান পড়লে ভোটের আগের শেষ দু’সপ্তাহ বসিরহাটে থাকার বাড়িও তিনি খুঁজে নিয়েছেন। জলপাইগুড়ির মেয়ে মিমি অবশ্য কসবার বাসিন্দা। গোটা যাদবপুর কেন্দ্রটাই যে তাঁর বাড়ির গা-ঘেঁষা— বক্তৃতায় ভোটারদের বুদ্ধি করে ঠিক শুনিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু এত শোনাতেই বা হবে কেন? নায়িকাদের নিয়ে লোকের এত অবিশ্বাস কেন? উকিল-ডাক্তার-কর্পোরেট সেক্টরের কেউ ভোটে লড়লে তো এমন হয় না? প্রশ্নটা তুলে মিমি-নুসরতই বোঝাচ্ছেন, নায়িকার তকমাটা আসলে দুর্বলতা নয়, বরং রোদে-ঝড়ে-জলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুটিং করার অভিজ্ঞতাকে ভোটপ্রার্থীর বাড়তি ‘অ্যাডভান্টেজ’ই বলা যায়।

‘অ্যাডভান্টেজ’টা কোথায়, তা বিলক্ষণ বুঝেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের জন্য তারকা বাছাই থেকে কাকে কোন কেন্দ্রে পাঠানো হবে— সব কিছুতেই ‘দিদি’র পাকা মাথার অঙ্ক দেখছে রাজনৈতিক মহল। গত লোকসভা ভোটেও একদা ‘সিপিএমের গড়’ ঘাটালে দেব কিংবা বাঁকুড়ায় বাসুদেব আচারিয়ার মতো বাঘা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মুনমুন সেনকে নিয়ে আসাটা তৃণমূল নেত্রীর মোক্ষম চাল ছিল। এ বার ঠিক তেমনই, তাঁর প্রার্থী-তালিকার সব থেকে বড় চমক, মিমি আর নুসরত।

‘‘মাস ছয়েক আগে দিদি শুধু বলেছিলেন, তোমার কাছে একটা জিনিস আমি পরে চেয়ে নেব! তখন কিছুই বুঝিনি!’’— গাড়িতে হাসনাবাদের দিকে যেতে যেতে বলছিলেন নুসরত। বসিরহাটের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামীণ-এলাকায় দলের যে কোনও নেতার থেকে বাণিজ্যিক ছবির নায়িকা নুসরতের উপরেই তিনি আস্থা রেখেছেন। ‘‘নরেন্দ্র মোদী কিন্তু আরও বড় অভিনেতা’’—সভায়-সভায় সরস ভঙ্গিতে বিঁধছেন নায়িকা।

আর একদা বাম-প্রভাবিত, রাজনীতিমনস্ক কেন্দ্র বলে পরিচিত শহর-গ্রামের মিশেল যাদবপুরে মমতার টেক্কা, মাল্টিপ্লেক্স ফিল্মেও সাবলীল অভিনেত্রী মিমি। তিনিও মেধাবী ছাত্রীর মতো খেলাটা ধরে নিয়েছেন। ‘‘ট্রোলিং করে কেউ বড় হয় না! আমি অভিনয়টা পারি বলেই দিদি ভোটে লড়ার সুযোগ দিয়েছেন!’’—টালিগঞ্জ-পাটুলির সোশ্যাল মিডিয়াদুরস্ত জনতাকে হঠাৎ বোঝাতে শুরু করলেন মিমি। ছকে-বাঁধা রাজনৈতিক লব্জের তত ধার ধারছেন না। পরে বলেন, ‘‘শট দেওয়ার সময়েও হুটহাট ইমপ্রোভাইস করা আমার স্বভাব। ঋতুদার (ঋতুপর্ণ ঘোষ) সিরিয়ালেও তা-ই করতাম।’’

কচুয়ার লোকনাথ মন্দির বা বসিরহাটের চড়কের মেলায় নুসরতও ইচ্ছেমতো ঘুরছেন, রোল-ফুচকা খাচ্ছেন। জনগণের ভালবাসার আপ্যায়নে টের পাচ্ছেন, ওজনও বাড়ছে। লম্বাহাতা ব্লাউজ় ও সুতি কিংবা তসরের শাড়ির সঙ্গে হিলবিহীন জুতোয় স্বচ্ছন্দ তিনি। ‘‘ভোটে না-দাঁড়ালে কত ভাল-ভাল শাড়ি পরাই হত না!’’— বলতে বলতে হাসনাবাদ বা সন্দেশখালিতে সরু পাটাতন বেয়ে তরতরিয়ে নৌকায় উঠছেন নুসরত। মিমিকে আবার পাড়ার খুদেদের সঙ্গে ফুটবল বা ক্যারম খেলতে দেখা গিয়েছে। তবে শাড়িতে পা জড়িয়ে হোঁচট খেতে তিনি রাজি নন। মিটিংয়ে খোলাখুলি ভোটারদের সেটা বলে দিয়েছেন। ‘মেন্টর’ অরূপ বিশ্বাস আঁতকে উঠলেও বাঘাযতীনে ঘরোয়া জিন্‌স-টিশার্টে ভোটারদের মাঝখানে ঘুরেছেন মিমি।

পুজো রিলিজ়ের কোনও চরিত্র করবেন কি না, দুই নায়িকাই তা ভোটের পরে ঠিক করবেন। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ও জীবনের নানা ঝড়ঝাপ্টা দু’জনেই কম দেখেননি। তবে রাজনীতির জীবনটাও কি খুব সহজ ? তা হলে এক দিন হাতে ওষুধ লাগানোর জেরে মিমির গ্লাভস পরে করমর্দনের ছবি কে বা কারা ভাইরাল করল? মিমি নিশ্চিত, তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলয়েরই কারও হাত রয়েছে। নুসরতের কথায়, ‘‘কিছু পজ়িটিভ (ইতিবাচক) দিক আছে বলেই এত বেশি চর্চা আমাদের নিয়ে!’’

নতুন মাঠে ঠেকে শিখেই লড়ছেন দু’জনে।

Lok Sabha Election 2019 Mimi Chakraborty Nusrat Jahan লোকসভা ভোট ২০১৯
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy