Advertisement
২২ মে ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

স্বাধীনতার শহিদদের নামেই ভোট গ্রামে

দাসপুরের এই গোবিন্দনগর গ্রাম ইতিহাসের ‘কুখ্যাত তালিকা’য় রয়ে গিয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
দাসপুর শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০৩:৪৫
Share: Save:

ভোটের উত্তাপ আর সূর্যের তাপের তখন গলাগলি করে ছুটি নেওয়ার পালা। একপাশে সংস্কার হওয়া খাল বেয়ে কংসাবতী থেকে রূপনারায়ণ পর্যন্ত ছুটে চলেছে জল, অন্য পাশে দিগন্তবিস্তৃত চাষের জমিতে সূর্য ডুবছে। সেই চাষজমি এক জায়গায় বেশ ভিড়াক্কার। স্থানীয়েরা সেটিকেই বলেন শহিদদের গ্রাম। ঘাটালের দাসপুরের এই অংশেই বসে চেঁচুয়ার হাট। তারই একমাত্র ভোট-বুথে শেষ মুহূর্তের তদারকি সারছেন হাঁটুতোলা ধুতি, সবুজ পাঞ্জাবি পরা এক বৃদ্ধ।

এখনও ভোট চলছে? গোপালচন্দ্র নন্দী নামে ওই বৃদ্ধ বললেন, ‘‘এটা শহিদদের পাড়া। এখনও এখানে ভোট হয় শহিদদের নামেই। বিনা রক্তে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট পড়ে গিয়েছে।”

ভোট-বুথ লাগোয়া স্কুলবাড়ির দালানে বসে পড়ে বৃদ্ধ বলেন, “এ গ্রাম যা রক্ত দেখেছে, ৮৯ বছরেও সেই রক্তের দাগ মেটেনি। এখনও এখানে প্রতিটা পাতা নড়ে সেই ১৯৩০ সালের কালো দিনকে হিসেবে ধরে।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

দাসপুরের এই গোবিন্দনগর গ্রাম ইতিহাসের ‘কুখ্যাত তালিকা’য় রয়ে গিয়েছে। অনেকে একে ‘বাংলার জালিয়ানওয়ালাবাগ’ও বলে থাকেন। এই গ্রামের নদীচরেই ইংরেজ পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ১৪ জনের। বৃদ্ধ বলেন, “দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো দাসপুরের এই এলাকাও তখন মহাত্মা গাঁধীর ডাকা লবণ আইন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই দাসপুরের শ্যামগঞ্জে রূপনারায়ণের তীরে লবণ সত্যাগ্রহীদের শিবির স্থাপন করা হয়েছিল। যা কোনও মতেই মেনে নিতে পারছিল না ইংরেজ শাসক।”

বৃদ্ধ বলেন, “দিনটা ছিল ১৯৩০ সালের ৩ জুন। দাসপুরের অত্যাচারী দারোগা ভোলানাথ ঘোষকে লাঠিপেটা করেন মৃগেন ভট্টাচার্য নামে একজন। পরে সেই রাগ থেকে পুলিশের অত্যাচার আরও বেড়ে যায়। গন্ডগোল বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, একদিন ভোলানাথকে মেরে লাশ গুম করে দেন গ্রামবাসীরা। তার পরেই তৎকালীন জেলাশাসকের নির্দেশে চলে অকথ্য অত্যাচার।” ৬ জুন চেঁচুয়ার হাটে এক জমায়েতে গুলি চালিয়ে ১৪ জনকে হত্যা করে ইংরেজ পুলিশ। সেই শহিদ স্মৃতিসৌধ আজও আছে। এই গ্রামে পরম দর্শনীয়। যদিও তার সংস্কার খুব জরুরি। যা হয়নি।

বৃদ্ধ বললেন, “এলাকাটা বন্যাপ্রবণ। খালটার সংস্কারের প্রয়োজন ছিল। দলগুলি এ বার স্মৃতিসৌধে নজর দেবে।” আপনি রাজনীতি করেন? আঙুলের কালো কালি দেখিয়ে জবাব, “এখানে এখনও রাজনীতি হয় শহিদের স্মৃতিতে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE