Advertisement
E-Paper

প্রতিবন্ধীরা ভোটকর্মী, নাম কাটাতে হয়রানি

অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতিবন্ধীদের ভোটের কাজে পাঠানো যায় না। তা সত্ত্বেও ভোটের কাজে যাওয়ার নির্দেশ সংবলিত চিঠি এসেছে।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৪০
বুলু ঘোষ (বাঁ-দিকে) এবং অজয় দাস। নিজস্ব চিত্র

বুলু ঘোষ (বাঁ-দিকে) এবং অজয় দাস। নিজস্ব চিত্র

পঁচাত্তর শতাংশ দৃষ্টিহীন। তবু ভোটের ডিউটি থেকে রেহাই মেলেনি পাথরপ্রতিমার স্কুলের শিক্ষক দেবব্রত সামন্তের। হাওড়ার উলুবেড়িয়ার আনন্দভবন ডেফ অ্যান্ড ব্লাইন্ড স্কুলের শিক্ষক অজয় দাসের ডান হাত এবং বাঁ পা পোলিয়োয় আক্রান্ত। তাঁকে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এ বারের লোকসভা ভোটে! একই অভিজ্ঞতা দুর্ঘটনায় ডান পা বাদ পড়া বেলঘরিয়ার বাসিন্দা বুলু ঘোষের। তিনিও ওই স্কুলে পড়ান।

ওই তিন শিক্ষকের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতিবন্ধীদের ভোটের কাজে পাঠানো যায় না। তা সত্ত্বেও ভোটের কাজে যাওয়ার নির্দেশ সংবলিত চিঠি এসেছে। এটা হয়রানিরই নামান্তর বলে অভিযোগ ওই শিক্ষকদের।

হাওড়া জেলার শ্যামপুরের বাসিন্দা দেবব্রতবাবু এখন কাজের সুবিধার জন্য পাথরপ্রতিমায় থাকেন। সীতারামপুর জি প্লট মিলন বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলে ইতিহাসের ওই শিক্ষক জানান, ২০০৯ সাল থেকে তাঁকে ভোটের ডিউটি দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বার আলিপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে ডিউটি বাতিল করাতে হয়। এ বার ইতিমধ্যে তিন বার তাঁকে আলিপুর যেতে হয়েছে। দেবব্রতবাবু বলেন, ‘‘সীতারামপুর থেকে নৌকায় রামগঙ্গা যেতে হয়। তার পরে বাসে লক্ষ্মীকান্তপুর। সেখান থেকে ট্রেনে বালিগঞ্জ পৌঁছে অটোয় আলিপুর। সকাল ৫টায় বেরোলে আলিপুর পৌঁছতে দুপুর হয়ে যায়।’’ আলিপুরে গেলে তিনি যে প্রতিবন্ধী, প্রতি বারেই হাসপাতাল থেকে তার প্রমাণ-সহ শংসাপত্র আনতে বলা হয়! গত মার্চে জেলা নির্বাচনী অফিসারের সই করা চিঠি পেয়ে তিনি জানতে পারেন, তাঁকে এ বারের ভোটে প্রিসাইডিং অফিসারের ভূমিকা পালন করতে হবে। ‘‘ডান চোখে আদৌ দেখতে পাই না। বাঁ চোখে কোনও মতে রাস্তা দেখতে পাই। তবু আমি নাকি প্রিসাইডিং অফিসার হব! ৭ এপ্রিল প্রশিক্ষণে যাইনি বলে কারণ দর্শানোর চিঠিও পেয়েছি,’’ বলেন দেবব্রতবাবু।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

উলুবেড়িয়ায় দৃষ্টিহীনদের স্কুলের শিক্ষক অজয়বাবু এ বারেই প্রথম প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালনের চিঠি পেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয়ের দোতলায় প্রশিক্ষণ শিবির ছিল। পোলিয়োর দরুন হুইলচেয়ারে চলাফেরা করি। দোতলায় উঠব কী ভাবে! মুশকিল হল, জেলাশাসকের যে-কার্যালয়ে ডিউটি খারিজের আর্জি জানাব, সেটাও তেতলায়!’’ ভোটের কাজ থেকে অব্যাহতির আর্জি জানাতে অজয়বাবু নিজে যেতে পারেননি।

তিনি বলেন, ‘‘স্কুল থেকে যখন ভোটের কাজের তালিকা পাঠানো হয়, তাতে প্রতিবন্ধী কি না, নির্দিষ্ট ভাবে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তার পরেও চিঠি আসে কী করে?’’ এই প্রশ্ন তুলেছেন অজয়বাবুর স্কুলের শিক্ষক বুলুবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘২০ মার্চ চিঠি পেয়েছি। দু’দিন পরে জেলাশাসকের কার্যালয়ে গেলে প্রথমে আবেদন নিতে অস্বীকার করা হয়। অনেক কষ্টে তা জমা দিই। বলা হয়েছিল, মেসেজ আসবে। সেই মেসেজ এখনও আসেনি।’’

এই পরিস্থিতিতে দেবব্রতবাবুর প্রশ্ন, ‘‘২০৩৭ সাল পর্যন্ত চাকরি রয়েছে। প্রতি ভোটের সময় কি ৭৫ শতাংশ দৃষ্টিহীন এক জন প্রতিবন্ধীকে দৌড়ঝাঁপ করতে হবে!’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী অফিসার ওয়াই ভি রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘স্কুল থেকে নাম না-পাঠালে ডিউটি পাওয়ার কথা নয়। আবেদনকারীদের দরখাস্ত পেলে ডিউটি বাতিল করা হবে।’’ হাওড়ার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা মাত্র তিনি ফোন ধরে বলেন, ‘‘মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি।’’

Election Commission Lok Sabha Election 2019 Teacher
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy