গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
মাঝে আর মাত্র ৮ দিন। তারপরই সারা দেশে শুরু লোকসভার ভোটগ্রহণ। প্রথম দফায় রাজ্যের উত্তরবঙ্গের দুই কেন্দ্র আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারেও ওই দিন ভোট। বাংলায় এই দুই আসনের ভোটগ্রহণ ঘিরে প্রচারের পারদ উচ্চগ্রামে উঠছে আগামিকাল, বুধবার। কারণ, নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর দুই শিবিরের শীর্ষ নেতা-নেত্রী কাল থেকে প্রচার শুরু করছেন এ রাজ্যে। এক দিকে শিলিগুড়ি ও ব্রিগেডে পরপর নরেন্দ্র মোদীর দুই সভা, অন্য দিকে কোচবিহারের দিনহাটায় প্রচারে নামছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদী এবং মমতার এই নির্বাচনী জনসভা ঘিরে রাজনৈতিক শিবিরে কৌতূহল তুঙ্গে। বিজেপি এবং তৃণমূলের প্রচার আগামী দেড় মাস কোন পথে এগোবে, তার অনেকটাই নির্ভর করছে মোদী-মমতার এই সভার উপর। আর এই নিয়ে তৎপরতা নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন এবং দুই রাজনৈতিক দলেও।
২০১৪ সালে রাজ্যে দু’টি আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি। আসানসোলের সাংসদ হয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। আর দার্জিলিং কেন্দ্রে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার (বিমল গুরুং) সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে জিতেছিলেন সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। কিন্তু গত পাঁচ বছরে পরিস্থিতি অনেক পাল্টেছে। অন্য রাজ্যগুলিতে বিজেপি বিরোধী হাওয়া কিছুটা জোরদার হলেও পশ্চিমবঙ্গে এ বার ভাল ফলের আশায় ঝাঁপাচ্ছে বিজেপি। রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোট হয়নি। ফলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছে বিজেপি। তার মধ্যেও আবার উত্তরবঙ্গে আরও ভাল ফলের সম্ভাবনা দেখছেন ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের কর্মকর্তারা। সেই প্রেক্ষিতেই উত্তরবঙ্গ দিয়েই এ রাজ্যে প্রচার শুরু করছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
কী বার্তা দিতে পারেন মোদী? রাজনৈতিক শিবিরের পর্যবেক্ষণ, রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে আলাদা আলাদা ইস্যুতে তোপ দাগতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। সারা দেশে বিজেপি বিরোধী জোটের অন্যতম সংগঠক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’দিন আগেই চন্দ্রবাবুর ডাকে বিশাখাপত্তনমে সভা করে এসেছেন মমতা। কিন্তু সেই জোটে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী কে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন মোদী। চন্দ্রবাবু, ফারুক আবদুল্লা, দেবগৌড়া, মায়াবতী, অখিলেশরা প্রত্যেকেই যে নিজের নিজের স্বার্থে একজোট হয়েছেন, সেই প্রশ্ন তুলে জোটে ভাঙন ধরানোর প্রচেষ্টা থাকতে পারে মোদীর বক্তৃতায়। ভোটে বিজেপির অন্যতম হাতিয়ার পাকিস্তানে বালাকোটে বায়ুসেনার অভিযান। কিন্তু সেই অভিযানে কত জন জঙ্গি মারা গিয়েছে, এই প্রশ্ন তোলার ক্ষেত্রে অগ্রদূত ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের যে ভাবে বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনী জনসভায় আক্রমণ করছেন মোদী, সেই তালিকায় যোগ হতে পারে মমতা তৃণমূল নেত্রীর নামও।
আরও পডু়ন: ২২ লক্ষ শূন্যপদে চাকরি, গরিবদের অ্যাকাউন্টে বছরে ৭২ হাজার, ইস্তাহার প্রকাশ কংগ্রেসের
রাজ্যের ক্ষেত্রেও একাধিক ইস্যু হাতে রয়েছে মোদীর। সারদা-নারদ কেলেঙ্কারি কিছুটা পিছনের সারিতে চলে গেলেও ভোটের মুখে সেই ইস্যু ফের চাগিয়ে তুলতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। কিছুদিন আগেই অমিত শাহের হেলিকপ্টার মালদহে নামার অনুমতি মেলেনি। ব্যক্তিগত একটি হেলিপ্যাড ভাড়া করে সেখানে নেমে সভা করেন অমিত। অন্য দিকে পুরুলিয়ায় যোগী আদিত্যনাথের চপারও নামার অনুমতি দেয়নি রাজ্য সরকার। যোগী ঝাড়খণ্ডে নেমে পুরুলিয়ায় সভা করে গিয়েছেন। এই সব প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল নেত্রীকে কাঠগড়ায় তোলার সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
উত্তরবঙ্গের মালদহ, রায়গঞ্জে কংগ্রেসের ভাল ফলের সম্ভাবনা রয়েছে। কয়েক দিন আগেই মালদহে সভা করে গিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। গোটা দেশেই প্রচারে রাহুলকে আক্রমণ করছেন মোদী। উত্তরবঙ্গে মোদীর নিশানায় যে কংগ্রেস তথা রাহুল গাঁধীও থাকবেন, তা আগে থেকেই আঁচ করছেন রাজনীতির কারবারীরা। তার সঙ্গে মমতাকে এক পংক্তিতে বসিয়েও আক্রমণ করতে পারেন ‘চৌকিদার’ নরেন্দ্র মোদী।
আরও পডু়ন: ‘জনস্বার্থে’বসানো হয়েছিল ২৬০০ কোটি টাকার মূর্তি! সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিলেন মায়াবতী
তবে মমতাও কি সহজে ছেড়ে দেবেন? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মোদী যেখানে শেষ করবেন, কার্যত সেখান থেকেই শুরু করবেন মমতা। মোদীর ব্রিগেডের সভা শেষ হওয়ার পরেই দিনহাটার সভামঞ্চে উঠবেন তৃণমূল নেত্রী। তৃণমূল সূত্রে খবর, মোদী যে পথে আক্রমণ করবেন, তার প্রত্যেকটির জবাব দেবেন মমতা। সঙ্গে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে নোটবন্দি, জিএসটি, সিবিআই-আরবিআই-এর মতো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা, দেশের টাকা নিয়ে নীরব মোদী-বিজয় মাল্যদের পালিয়ে যাওয়া, সেনাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের মতো ইস্যুতে তোপ দাগতেও তৈরি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ‘২০১৯-এ বিজেপি ফিনিশ’, ‘বিয়াল্লিশে ৪২’-এর মতো স্লোগান তৃণমূলের হাতে আছেই। মোদীর এ রাজ্যে পদার্পণের পর সেই স্লোগান আরও জোরদার হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
যুযুধান দুই শিবিরের দুই কাণ্ডারীর এই সভা ঘিরে রাজনৈতিক শিবিরে যেমন নানা জল্পনা রয়েছে, তেমনই কড়া নজর থাকবে নির্বাচন কমিশনেরও। আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের মতো বক্তব্য কেউ পেশ করলেন কি না, তার উপর নজর রাখবেন কমিশনের কর্মী-অফিসাররা। কমিশন সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের দুই সভায় বিজেপি এবং তৃণমূলের কর্মীদের যাওয়া-আসার পথে কোথাও কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, তার জন্য কমিশনের নির্দেশে আগাম ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে রেখেছে পুলিশ প্রশাসন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
গত বছরের জুলাই মাসে মেদিনীপুরে মোদীর সভায় একটি অস্থায়ী ছাউনির একাংশ ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এ বার ব্রিগেডের সভাতেও তৈরি হয়েছে একাধিক মঞ্চ। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গোড়া থেকেই তৎপর বিজেপি নেতারা। প্রস্তুতি পর্বের শুরু থেকেই পালা করে প্রায় প্রতিদিন তদারকি করছেন দলের নেতারা। মঙ্গলবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একাধিক নেতা ব্রিগেডে গিয়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি পর্ব খতিয়ে দেখেছেন। শিলিগুড়ির সভাস্থলও পর্যবেক্ষণ করেছেন দলের নেতারা। অন্য দিকে মমতার সভাস্থলেও এখন সাজসাজ রব।এর পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে লোক এনে সভাস্থল ভর্তি করার প্রচেষ্টাও জারি রয়েছে দু’দলের তরফেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy