Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
general-election-2019-west-bengal

অবসাদ ছিল না অর্ণবের, বলছেন স্ত্রী

এক সহকর্মীর হাতে চাবির গোছা দিয়ে সকলের অলক্ষ্যে কৃষ্ণনগর ছেড়ে চলে যান অর্ণব। জেলাশাসক তাঁকে বকাঝকা করায় এবং দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়াতেই তিনি ভেঙে পড়েছিলেন বলে প্রশাসনের কয়েকটি সূত্রের দাবি।

অর্ণবের স্ত্রী অনীশা যশ। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

অর্ণবের স্ত্রী অনীশা যশ। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৩২
Share: Save:

আরও একটা দিন পেরিয়ে গেল। খোঁজ মিলল না নদিয়া জেলার নির্বাচনে ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট যন্ত্রের দায়িত্বে থাকা অফিসার অর্ণব রায়ের। শনিবার সংবাদমাধ্যমের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর স্ত্রী অনীশা যশ বললেন, ‘‘আমি সকলের কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করছি, আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন।’’

বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সহকর্মীর হাতে চাবির গোছা দিয়ে সকলের অলক্ষ্যে কৃষ্ণনগর ছেড়ে চলে যান অর্ণব। জেলাশাসক তাঁকে বকাঝকা করায় এবং দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়াতেই তিনি ভেঙে পড়েছিলেন বলে প্রশাসনের কয়েকটি সূত্রের দাবি। যদিও জেলাশাসক তা অস্বীকার করেছেন। অনীশার কথাতেও তার সমর্থন মেলেনি। শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক দাবি করেন, ‘ব্যক্তিগত’ কোনও কারণে অবসাদে ভুগছিলেন অর্ণব। তাঁর উধাও হওয়ার সঙ্গে নির্বাচনের কোনও যোগ নেই।

অনীশা নিজেও এক জন ডব্লিউবিসিএস অফিসার, বর্তমানে ‘প্রবেশন’-এ রয়েছেন। এ দিন তিনি বারবার জোর দিয়ে বলেন, ‘‘আমার স্বামীর কোনও রকম মানসিক অবসাদ ছিল না। কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। ওই দিনই আমার সঙ্গে ছ’বার কথা হয়েছে। কোথাও চলে যাওয়ার মতো প্রস্তুতি নিয়ে ও বাড়ি থেকে বেরোয়নি।” গত দু’দিন অনীশা সংবাদমাধ্যমকে কার্যত এড়িয়েই চলেছেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামীর মানসিক অবসাদের যে সব কথা বলা হচ্ছে, সেটা যে সম্পুর্ণ ভুল কথা তা জানানোর জন্যই আমি আজ সংবাদমাধ্যমের সামনে এসেছি।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বৃহস্পতিবার দুপুরেই শেষ বার শান্তিপুর স্টেশনের কাছে অর্ণবের মোবাইল টাওয়ার লোকেশন শনাক্ত করা গিয়েছিল। তার পর থেকেই ফোন বন্ধ। তার কিছু ক্ষণ আগেই অনীশার সঙ্গে তাঁর শেষ বার কথা হয়। ব্যস্ত আছেন জানিয়ে তিনি তড়িঘড়ি ফোন ছেড়ে দেন। অনীশা বলেন, ‘‘আমি সারা দিন অফিসে থাকি, এক সঙ্গে কাজ করি। আমার তো চোখে এমন কিছু পড়েনি, যার জন্য এমনটা হতে পারে।’’ শান্তিপুর থেকে নানা দিকে যাওয়া যায়। ভাগীরথী পেরিয়ে পূর্ব বর্ধমানের কালনাতেও চলে যাওয়া যায়। কিন্তু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে তাঁর হদিস মেলেনি।

অর্ণবের অন্তর্ধানের পিছনে জেলাশাসকের ভূমিকার কথা উঠছে কিছু মহল থেকে। অনীশা কিন্তু তেমনটা মনে করছেন না। তাঁর মতে, “কর্মক্ষেত্রে ছোটখাটো সমস্যা তো হতেই পারে। জেলাশাসক ওকে এমন কোনও কথা বলেননি যার জন্য ও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়তে পারে। তেমন কিছু বললে আমি জানতে পারতাম। আমাকে ও সব কথা বলত।” তার নিশ্চিত ধারণা, “জেলাশাসক আমার স্বামীকে খুব ভালবাসেন।” তবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অনীশা মোটেই সন্তুষ্ট নন। আদতে হুগলির আরামবাগের মেয়ে অনীশা নিজেই পুলিশের ঘরের মেয়ে। তাঁর বাবা বাবা নির্মল যশ বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডেপুটি পুলিশ সুপার (সদর)। তবু অনীশা বলছেন, “পুলিশ চেষ্টা করছে হয়তো। কিন্তু আমি চাই, আরও চেষ্টা হোক। আরও উপরমহল থেকে আমাকে সাহায্য করা হোক।”

ঘটনাচক্রে, এ দিনই তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে নদিয়ায় একাধিক জনসভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষ্ণনগরে রোড শো-ও করেছেন। কিন্তু তাঁদের কাছে তিনি অর্ণবের ব্যাপারে কোনও খোঁজখবর নেননি বলে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন। তাঁর নামে যে সব কথা উঠছে, সব ‘রাবিশ’ বলে উড়িয়ে দিয়ে নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত দাবি করেন, “আমার সঙ্গে অর্ণবের মুখোমুখি বা ফোনে কোনও কথা হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে ইভিএম নিয়ে বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু আমি কখনও কোনও আপত্তিকর কোনও শব্দ ব্যবহার করিনি।’’ নদিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “আমরা সব রকম ভাবে ওঁর খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা করছি। চেষ্টায় কোনও ফাঁক রাখা হচ্ছে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE