আয়মান ও আইমিরা। ছবি: ফেসবুক
পেল্লাই ‘টাওয়ার লাইট’ থেকে ঠিকরে আসা আলোর নীচে একেবারে ঝুম মেরে আছে বাড়িটা!
বাড়ি? নাহ্! গোটা বাংলা তো একে কোতুয়ালির প্রাসাদ বলেই চিনত। যাঁর জন্য চিনত, তাঁর প্রিয় মার্সিডিজটা লড়ঝড়ে হয়ে এখনও পড়ে গ্যারাজে। তাঁর রঙিন রাজনৈতিক জীবনের নানা মুহূর্তের ছবি দোতলার বৈঠকখানায় তালাবন্দি। তাঁর পার্থিব শরীর একটু দূরের মাজারে নিরিবিলিতে শায়িত। টিমটিমে আলো সেখানে, ভোটের মরসুম বলে মাজারে নতুন চাদর চড়েছে। দিয়ে যাওয়া ফুলও এখন কয়েক দিনের বাসি। আর তাঁর ‘মিথ’ নামক তুরুপের তাস পকেটে নিয়ে যে যাঁর মতো প্রচারে বেরিয়ে গিয়েছেন তিন তিন জন প্রার্থী!
আবু বরকত আতাউর গনিখান চৌধুরীর প্রাসাদ এখন ভগ্নপ্রায় অতীতের ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে। মূল ফটকের বাইরে কর্তব্যরত পুলিশকর্মী নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জানিয়ে দিলেন, কেউ নেই। ভিতরে ঢুকে দেখা যাচ্ছে, শরিকি ভাগে ভেঙে গিয়েছে গনিখানের বাড়ি। বাঁ দিকে থাকেন ঈশা খান চৌধুরী। উত্তর মালদহের কংগ্রেস প্রার্থী আপাতত ভোটের কাজে বাইরে। ডান দিকে দক্ষিণ মালদহের কংগ্রেস প্রার্থী আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরীর অংশ তালাবন্ধ। বরকতের আর এক ভাই ও প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আবু নাসের (লেবু) খান চৌধুরীর ঘরে যাওয়ার রাস্তা এখন আর বাড়ির ভিতর দিয়ে নেই। আর একটু সামনে উত্তর মালদহের তৃণমূল প্রার্থী মৌসম বেনজির নূরের ঘরটাও এ বার দেখছি নতুন পাঁচিল দিয়ে ঘেরা! অন্ধকার উঠোনে জনপ্রাণী নেই, শুধু ভাগাভাগির চিহ্ন স্পষ্ট। মনে পড়ছে, ভোটের সময়ে এক কালে খোলা হাট ছিল এই কোতুয়ালি!
সামনে বন্ধ দরজাগুলোর একটারই ভিতর থেকে মিউজিক প্লেয়ারের শব্দ আসছে। ডাকাডাকির আওয়াজ তাই হয়তো ভিতরে পৌঁছচ্ছে না। ধাক্কা দেওয়ার পরে অবশ্য খুলে গেল দরজা। ভিতরে হোম থিয়েটারে চলছে ‘বাহুবলী’। সামনের শোফার কুশনে প্রায় তলিয়ে গিয়েছে দুই একরত্তি দর্শক আয়মান ও আইমিরা!
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সাংসদ মৌসমের দুই ছেলেমেয়ে কলকাতায় স্কুলের হস্টেলে থাকে। ছুটি পেলে মালদহ। মৌসম যখন চাঁচলে ভোটের জন্য ভাড়া নেওয়া বাড়িতে, এরা কোতুয়ালিতে করছে কী? অন্ধকার থেকে বাইরে এনে বারান্দার আলো জ্বেলে বসলেন লিজু। ঈশার স্ত্রী এবং মৌসমের দিদি। হেসে বলছেন, ‘‘ওরা তো আমার কাছেই থাকে। যবে থেকে মসু রাজনীতিতে, ওর সময় কোথায়?’’ দুই খুদের মধ্যে কে বেশি দুরন্ত, বলা মুশকিল বলেও জানাচ্ছেন। কিন্তু এখন মসুর বিরুদ্ধে তো প্রার্থী আপনার স্বামী? প্রতিদ্বন্দ্বীর বাচ্চাদের তবু আগলে রাখছেন যে? লিজুর জবাব, ‘‘এটা আপনাদের মনে হতে পারে। আমার হচ্ছে না।’’
শোনা যায়, কংগ্রেস সাংসদ তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে যখন ঈশার নাম কংগ্রেসের নতুন প্রার্থী হিসেবে উঠে আসে, মৌসম গিয়ে তাঁর ডালুমামাকে বলেছিলেন, দাদাকে সরিয়ে নাও। পরিবারটা ভেঙে যাবে। ডালু তাঁকে বলে দেন, এটা আর তাঁর হাতে নেই। তা ছাড়া, দল বদলের ‘ভুল’ মসুই করেছেন। ঈশা-মৌসম আপাতত পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রচারে। বাড়িতে আয়মান-আইমিরা রয়ে গিয়েছে চেনা অভিভাবকের হেফাজতেই।
আপনি বেরোলে তবে কার হয়ে প্রচার করবেন? আবার হেসে লিজুর জবাব, ‘‘নাহ্! প্রচারে আমি যাই না।এ বার তো আরও যাব না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy