Advertisement
E-Paper

বেহালার জন্য আলাদা কর্মী সম্মেলনে তৃণমূল, নেই শোভন

দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে কেউই শোভনকে এই সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাননি বলে শোভন ঘনিষ্ঠদের দাবি।

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯ ১৪:৫৭
বেহালার জন্য আলাদা কর্মী সম্মেলনেও যাচ্ছেন না শোভন চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র

বেহালার জন্য আলাদা কর্মী সম্মেলনেও যাচ্ছেন না শোভন চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র

বেনজির ভাবে বেহালা অঞ্চলের জন্য আলাদা কর্মী সম্মেলন করল তৃণমূল। লোকসভা নির্বাচনের জন্য এ ভাবে শুধু বেহালা আঞ্চলিক কর্মী সম্মেলন তৃণমূল আগে করেনি। কিন্তু বেহালার সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এতটাই উদ্বিগ্ন যে, এবার সেই পথেই হাঁটতে হল।

আজ সোমবার শরৎ সদনে এই কর্মী সম্মেলন ডাকেন বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজে। কিন্তু বেহালা পূর্বের বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায় সেখানে যাননি। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে কেউই শোভনকে এই সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাননি বলে শোভন ঘনিষ্ঠদের দাবি।

মন্ত্রিত্ব এবং মেয়র পদে ইস্তফা দেওয়ার পর থেকে কোনও দলীয় কর্মসূচিতেই যোগ দিচ্ছেন না শোভন। গত ফেব্রুয়ারিতে নজরুল মঞ্চে দলের কোর কমিটির বৈঠকে দেখা যায়নি শোভনকে। তার পরে গত ১৭ মার্চ নজরুল মঞ্চে আয়োজিত হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতা সংসদীয় এলাকার কর্মী সম্মেলন। প্রার্থী হিসেবে মালা রায়ের নাম ঘোষিত হওয়ার পরেই ওই সম্মেলন ডাকা হয়েছিল। শোভনের ঘনিষ্ঠ বৃত্ত সূত্রে জানা গিয়েছিল, ফিরহাদ হাকিম ফোন করে সেই সভায় উপস্থিত হতে অনুরোধ করেছিলেন শোভনকে। কিন্তু শোভন জানিয়ে দেন, ওই দিন তিনি কলকাতায় থাকবেন না। কলকাতায় কিন্তু সে দিন ছিলেন শোভন। কিন্তু বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বের নজরুল মঞ্চে হাজির হননি। তৃণমূল সূত্রে খবর, দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় নিজে ফোন করেছিলেন শোভনকে। তিনি ফোন ধরেননি। ফোন করেছিলেন মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারও। সে ফোনও বেজে বেজে কেটে যায় বলে খবর।

এ বার আর দক্ষিণ কলকাতার জন্য নয়, শুধুমাত্র বেহালা এলাকার জন্য আলাদা কর্মী সম্মেলন করল তৃণমূল। এই কর্মসূচিতে শোভন হাজির হচ্ছেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা ছিল রাজনৈতিক শিবিরে। কিন্তু শরৎ সদনের কর্মীসভাতেও দেখা যায়নি শোভন চট্টোপাধ্যায়কে।

বেহালা অঞ্চলের জনা চারেক কাউন্সিলর নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন শোভনের সঙ্গে। শোভনকে দলের কাজে ফেরাতেই বেশ কিছু দিন ধরে সচেষ্ট তাঁরা। কিন্তু শোভন কোনও রকম ইতিবাচক আশ্বাস তাঁদের দেননি। শরৎ সদনের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার অনুরোধ নিয়েও ওই কাউন্সিলররা শোভনকে ফোন করেছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু শোভন অনড়ই ছিলেন।

আরও পড়ুন: ভোটে না দাঁড়াতে বার্তা পাঠানো হয়েছিল মাত্র! মোদী-শাহের উপেক্ষায় ক্ষুব্ধ আডবাণী

আরও পডু়ন: নিজের গড়ে লক্ষ্যভেদ হবে ? প্রশ্ন অর্জুনকে ঘিরে

কেন এই অনড় অবস্থান শোভনের? তাঁর অনুগামীরা বলছেন, বেহালা এলাকায় সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখভালের জন্য সম্প্রতি একটি কমিটি গড়ে দিয়েছে দল। কিন্তু সে কমিটিতে শোভন কোথাও নেই, কমিটি গঠনের বিষয়ে শোভনের সঙ্গে কোনও আলোচনাও করা হয়নি। এ ছাড়া দলের তরফে তারকা প্রচারকদের যে তালিকা এ বার তৈরি হয়েছে, তাতেও শোভনের নাম নেই। এ সবে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বেজায় ক্ষুব্ধ বলে জানা যাচ্ছে। শোভন প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি ঠিকই। কিন্তু নিজের গতিবিধিতেই অসন্তোষ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। বেহালা পূর্বের বিধায়কের অসন্তোষের আর একটি কারণ হল, রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সক্রিয়তা। রত্নার সঙ্গে শোভনের বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। কিন্তু শোভন নিষ্ক্রিয় হতেই রত্না বেহালা এলাকায় অবাধে নিজের রাজনৈতিক সক্রিয়তা বাড়িয়েছেন। শোভন অনুগামীরা এতে খুব একটা সন্তুষ্ট নন বলেই খবর। এক দিকে শোভনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন নেতৃত্ব, অন্য দিকে শোভনের নিষ্ক্রিয়তার অবকাশে এলাকায় প্রভাব বাড়ানোর যে চেষ্টা রত্না চালাচ্ছেন, তাতে দলের তরফ থেকে কোনও বাধা এখনও দেওয়া হয়নি। এতেই স্পষ্ট যে, দল শোভনকে নিয়ে ঠিক কী ভাবছে— দাবি তাঁর অনুগামীদের। এই পরিস্থিতিতে শোভন চট্টোপাধ্যায় কিছুতেই বেহালামুখো হবেন না বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন। সোমবার বিকেল চারটেয় শরৎ সদনে তৃণমূলের কর্মীসভা। সেখানে হাজির না হয়েই শোভন নিজের অবস্থানটা স্পষ্ট করে দেবেন বলে তাঁদের দাবি।

তৃণমূলের অন্দরের খবর, এই শোভন ফ্যাক্টর তো রয়েছেই, তার সঙ্গে বিগত দুই বিধানসভা ভোটের ফলাফল, গেরুয়া শিবিরের উত্থান, পুলওয়ামা পরবর্তী জাতীয়বাদের ঢেউ—এগুলি মাথায় রেখে ভোটের রণকৌশল ঠিক করতে গিয়েই দুশ্চিন্তা বাড়ছে নেতৃত্বের।

কেন? বিগত দুই বিধানসভা নির্বাচনে বেহালার দুই কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে চোখ বোলালেই দেখা যাবে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক ক্ষয়িষ্ণু। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে ৪৮ হাজারের কিছু বেশি ভোটে জিতেছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। আর বেহালা পশ্চিমে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জয়ের ব্যবধান ছিল ৫৯ হাজারের কিছু বেশি। কিন্তু ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে শোভনের জয়ের ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ২৪ হাজারের কিছু বেশি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেতেন ৯ হাজারের কিছু কম ভোটে।পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জয়ের ব্যবধান প্রায় ৫০ হাজার কমে যায়। আর জয়ের ব্যবধানের নীরিখে শোভন নেমে আসেন অর্ধেকে, ২৪ হাজারের কিছু বেশি ভোটে। অর্থাৎ ২০১৬ সালে দুই কেন্দ্র মিলিয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে প্রায় ৩১ হাজার বেশি ভোট পায় তৃণমূল। আগের বার বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট করে ভোট লড়েছিল। আর দুই কেন্দ্র মিলিয়ে বিজেপি পেয়েছিল ৪১ হাজার ভোট। সেই সময় বিজেপি এই ৪১ হাজার ভোট না কাটলে এই দুই কেন্দ্রের ফল অন্য রকম হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা।

আরও পড়ুন: সনিয়াকে বিধায়কের কটূক্তি ঘিরে অস্বস্তি বাড়ছে বিজেপির, মুখ খুললেন স্বপ্না

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অন্য রকম পরিস্থিতি অবশ্য এ বারের লোকসভা ভোটেও রয়েছে। এ বার বাম-কংগ্রেস জোট হয়নি, আলাদা লড়ছে। তেমনই বিগত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বিজেপিও গোটা রাজ্যেই শক্তি বাড়িয়েছে। বিভিন্ন উপনির্বাচনের ফল এবং সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে মূল প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। বেহালা পূর্ব এবং পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রও তার ব্যতিক্রম নয়। বিজেপির এই বাড়বাড়ন্তের সঙ্গে পুলওয়ামা পরবর্তী পরিস্থিতিতে জাতীয়তাবাদের হাওয়ায় পদ্ম শিবির আরও চাঙ্গা। ওই সময় বেহালায় মধ্যরাতে মিছিল পর্যন্ত বেরিয়েছে বিজেপির। তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকেও উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে। ফলে বাম-কংগ্রেস পিছনের সারিতে চলে গেলেও তৃণমূলকে বেগ দিতে প্রস্তুত হচ্ছে পদ্ম শিবির। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের একাংশ মনে করছেন, এমন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মুহূর্তে শোভনের নিষ্ক্রিয়তা দলের পক্ষে আরও বড় অশনিসঙ্কেত হতে পারে।

এই একাধিক সমীকরণ, সঙ্কটের ইঙ্গিত এবং শোভনের অনুপস্থতিতে কর্মীদের আলাদা করে বার্তা দিতেই বেহালা পূর্ব এবং পশ্চিম কেন্দ্রের জন্য আলাদা করে কর্মী সম্মেলন করল তৃণমূল— এমনটাই ব্যাখ্যা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। যদিও শোভনের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, এমন পরিস্থিতিতেও ‘অসম্মান’ ভুলে কর্মী সম্মেলনে বেহালা পূর্ব ও পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র এবং গোটা দক্ষিণ কলকাতা লোকসভার নির্বাচনে দলের এক সময়ের কাণ্ডারি শোভন চট্টোপাধ্যায় তাতে যোগ দিলেন না। আর এতেই স্পষ্ট, এ বার লোকসভা ভোটের সাংগঠনিক কাজকর্ম বা প্রচার—কোনও ক্ষেত্রেই তৃণমূলের হয়ে থাকবেন না শোভন।

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ Sovan Chatterjee TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy