Advertisement
E-Paper

ধর্মনিরপেক্ষ দেশ চেয়ে ভোট ইমামের

ইমামকে অনুসরণ করে আসানসোলের জাহাঙ্গির মহল্লার গলি তস্য গলি ধরে হাঁটতে হাঁটতে মালুম হয় না যে, কোনও এক দিন অশান্তির রাগে পুড়েছে এই পাড়া।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ০২:০৬
আসানসোলের জাহাঙ্গির মহল্লায় ইমাম ইম্মাদুল্লাহ। নিজস্ব চিত্র

আসানসোলের জাহাঙ্গির মহল্লায় ইমাম ইম্মাদুল্লাহ। নিজস্ব চিত্র

এক বছর এক মাস আগে সবুজ দেওয়ালে ঘেরা ঘরটায় বসেই খবরটা পেয়েছিলেন তিনি। তখনও বোঝেননি তাঁর ১৬ বছরের ছেলে সিবঘাতুল্লা আর ফিরবে না। এতদিন বাদে সেই সবুজ দেওয়ালের ঘর থেকেই ভোট-বুথে যাওয়ার পথে নুরানি মসজিদের ইমাম ইম্মাদুল্লাহ বললেন, “আমি ভালবাসা মনে রেখেছি, হিংসা নয়। আমার বিশ্বাস এই ভোটে সেই ভালবাসারই জয় হবে।”

ইমামকে অনুসরণ করে আসানসোলের জাহাঙ্গির মহল্লার গলি তস্য গলি ধরে হাঁটতে হাঁটতে মালুম হয় না যে, কোনও এক দিন অশান্তির রাগে পুড়েছে এই পাড়া। সিবঘাতুল্লার দেহ নিয়ে ক্রোধে ফেটে পড়া জনতাকে শান্ত করতে এই ইমামই বলেছিলেন, “আমার সন্তানের যতটুকু জীবন প্রাপ্য ছিল সে ততটুকুই পেয়েছে। আপনারা অশান্তি না থামালে আমায় এ শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে।” শহর ছেড়ে যেতে হয়নি ইমামকে। বরং গোটা দেশের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সম্প্রীতির মুখ। ভোটকেন্দ্রের লাইনে দাঁড়িয়ে সেই ইমাম সোমবার বলেন, “এত মানুষ কেন ভোট দিতে এসেছেন জানেন? কারণ এঁরা হিন্দু হোন মুসলিম হোন, দেশটাকে ভালবাসেন। আর এই দেশ বাঁচবে তার দীর্ঘদিনের সম্প্রীতির উপর। ভারত হিন্দু বা মুসলিম রাষ্ট্র হয়ে গেলে এর মৃত্যু অবধারিত।”

এ দিন চতুর্থ দফা নির্বাচন চলছে আসানসোলে। প্রায় সব রাজনৈতিক দলই প্রচার চালিয়েছে জাহাঙ্গির মহল্লায়। তবু সব পাওয়া না পাওয়ার মধ্যেও কোথাও বুদ্বুদের মতো উঠে আসে সিবঘাতুল্লা প্রসঙ্গ। ইমাম জানান, সেদিন একটা মিছিল বার হয়েছিল। ওঁরা ধর্মের নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এক দু’কথায় খবর রটে যায় মিছিলের লোক স্থানীয় দুই মহিলাকে মারধর করেছেন। পাল্টা জাহাঙ্গির মহল্লার কয়েকজন মিছিলের দুই যুবককে আটকে রাখে। ইমাম বলেন, “এর মধ্যেই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না সিবঘাতুল্লার। আমি আটকে রাখা যুবকদের দ্রুত ছেড়ে দিতে বলি। আমার কথা শুনে ওরা ছেড়েও দিয়েছিল। কিন্তু সিবঘাতুল্লা আর ফেরেনি।” তবু পুত্রহারা এক পিতা পুরনো সেসব কথা মনে রাখতে চান না। তবে স্ত্রী খাদিজাতুলকুব্রাকে এখনও বুঝিয়ে উঠতে পারেননি ইমাম ইম্মাদুল্লাহ। সাত সন্তানের মধ্যে চতুর্থ সিবঘাতুল্লার কথা ভেবে এখনও চোখের জল পড়ে খাদিজাতুলকুব্রার।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

স্ত্রীয়ের প্রসঙ্গ থেকেই ইমাম মুহূর্তে ফিরে যান সেই রাজনীতিতে। ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধাসেনা কর্মীর সঙ্গে কথাবার্তার মধ্যেই ইমাম বলেন, “বন্যার সময়ে যেমন জলের ওপর আবর্জনা ভাসতে থাকে, জাতপাতের রাজনীতি হচ্ছে সেই আবর্জনা। ভারতে না তালিবান চলবে, না আরএসএস চলবে। ভারত চলবে ধর্মনিরপেক্ষতায়।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধেও এদিন প্রশ্ন তোলেন ইমাম। বলেন, “হানাহানি করে ভোটে জেতার দরকার নেই। তিনি বলেছিলেন ১৫ লাখ টাকা করে দেবেন। তার থেকে যদি প্রতি ভারতীয়কে ১৫ হাজার টাকা করেও তিনি দিতেন তাহলে তাঁর দলকে এ ভাবে মারামারি করতে হত না। এমনিই জিততেন।” তাঁর আরও প্রশ্ন, “আসানসোলে অতবড় অশান্তি হল, প্রধানমন্ত্রী কিছুই বললেন না! শান্তি বজায় রাখার পক্ষে আমাদের চেষ্টা নিয়ে তাঁর মুখে কিছুই শোনা যায় না। অথচ, কিছু প্রশ্ন করলে রাষ্ট্রবিরোধী বলে দেন। রাষ্ট্রপ্রেম মানে প্রশ্ন করা বন্ধ করে দেওয়া নয়।”

শেষ এপ্রিলের ভোট-উত্তাপ তখন খনিজ শহরের উত্তাপকে টেক্কা দিচ্ছে। বুথ-মুখী লাইন এগিয়ে চলে, ইমাম ফের বলেন, “দেখবেন, এ ভোটে ভালবাসার রংই জিতবে।”

Election 2019 Phase 4 Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy