দেওয়াল লিখছেন বিজেপির কর্মীরা। ভগবানপুরে। নিজস্ব চিত্র
খাতায় কলমে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। এক সময় স্থানীয় নেতা নান্টু প্রধানের ‘দাপটে’ তেমন দাঁত ফোটাতে পারত না বিরোধীরা। সেই ভগবানপুর-১ ব্লকেই লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নাকি বিজেপি’র থেকে পিছিয়ে পড়ছে তৃণমূল। শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের দাবি, গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে প্রচারের পিছিয়ে পড়ছেন তাঁরা। বিজেপি’র দখলে চলে যাচ্ছে অধিকাংশ এলাকার দেওয়াল।
গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে ভেড়ি-কাণ্ডে খুন হন দাপুটে তৃণমূল নেতা নান্টু। স্থানীয় সূত্রের খবর, এর পরেই কিছুটা হলেও এলাকায় দুর্বল হয় তৃণমূলের সংগঠন। নান্টুর মৃত্যুর পরে ভগবানপুরে পঞ্চায়েত ভোটে তার বাবা চাঁদহরি প্রধানকে দল সাংগঠনিক দায়িত্ব দেয়। ভোটে তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সংখ্যা কমে। তবে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতই ছিল তাদের দখলে। সেখানে বিজেপি শূন্য থেকে শুরু করে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৫ জন প্রার্থীকে জিতিয়ে আনে। উল্লেখ্য, ভগবানপুর-১ ব্লকের গত পঞ্চায়েত ভোটে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে সবকটি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি।
তৃণমূলের একটি সূ্ত্রের খবর, ভোট পরবর্তী সময়ে দলীয় কোন্দল জোরদার হয়। ভগবানপুরে তৃণমূলের সাংগঠনিক বৃদ্ধিতে এক সময় যাঁদের অবদান ছিল, নান্টুর আমলে তাঁরা সেভাবে মর্যাদা পাননি বলে অভিযোগ। দাবি, নান্টুর মৃত্যুর পরেও তাঁদের অনেকেই পূর্ণ মর্যাদা পাননি। এতেই ‘বিভাজন’ আরও বেড়েছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর নেতৃত্ব বলেন, ‘‘দলের অনেকের নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত। তার প্রতিবাদ করে বেশ কিছু নেতা দলের বিরাগভাজন হয়েছেন। দলে কোণঠাসা হয়েছেন। তাই নির্বাচনী প্রচারে দলের একটা বড় অংশ মাঠে নামে প্রচার করতে চাইছেন না। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বিজেপি।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিজেপি’র দাবি, তারা এখনও পর্যন্ত ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৩০০টি’র বেশি দেওয়াল লিখে ফেলেছে। বাকি গ্রাম পঞ্চায়েতের দেওয়াল লিখনের কাজও জোর কদমে চলছে। সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে গোয়ালাপুকুর, ভগবানপুর বাজারে মতো জনবহুল এলাকায় বিজেপি’র দেওয়াল লিখনের কাজ শেষ হয়েছে। আর তা তুলনায় তৃণমূলের থেকে বেশি।
এ বিষয়ে বিজেপির ভগবানপুর-১ ব্লকের মণ্ডল সভাপতি দেবব্রত কর বলেন, ‘‘মানুষের কাছে তৃণমূলের গ্রহণযোগ্যতা এবং সাংগঠনিক ক্ষমতা এই এলাকায় তলানিতে পৌঁছেছে। রাজ্য জুড়ে উন্নয়নের লক্ষ্যে ভগবানপুরে মানুষ বিজেপিকে স্বেচ্ছায় দেওয়াল লেখার অনুমতি দিচ্ছেন।’’
গোষ্ঠী কোন্দল যে রয়েছে, সে কথা স্বীকার করেছেন ভগবানপুর-১ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি মদনমোহন পাত্র। তবে তাঁর দাবি, ‘‘দলে গোষ্ঠী কোন্দল থাকলেও ভোটে সেই প্রভাব পড়বে না। তবে প্রথম দিকে দলীয় সমস্যার কারণে ভোট প্রচারের ময়দানে নামতে দেরি হয়েছে। বিজেপি কিছুটা সেই সুযোগ নিয়েছে।’’
তা হলে কি বিজেপি’র প্রচারে তৃণমূলের দেওয়াল ‘সঙ্কট’ হয়েছে? জাবাবে মদনমোহনের বক্তব্য, ‘‘দেওয়াল লিখনের জন্য তৃণমূল যে জায়গা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে, তা বিজেপির মিথ্যাচার। তৃণমূলেরই কিছু লোক বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া করে ওই কাজ করছে। আমাদের বেশ কিছু দেওয়ালও বিজেপি দখল করেছে। তবে এখন ব্লক জুড়ে পুরোদমে তৃণমূলের দেওয়াল লিখন চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy