Advertisement
E-Paper

অর্ণবের খবর আসতেই ফুরফুরে গোটা প্রশাসন

বৃহস্পতিবার বারবেলা পড়ার আগেই অবশ্য ছবিটা পাল্টে গেল। তত ক্ষণে চেয়ারের মালিকের খোঁজ মেলার খবর এসেছে।

সুস্মিত হালদার  

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২৭
স্ত্রীর সঙ্গে অর্ণব রায়। ছবি: সংগৃহীত

স্ত্রীর সঙ্গে অর্ণব রায়। ছবি: সংগৃহীত

রিভলভিং চেয়ারের উপরে অগোছালো ভাবে পাতা সাদা তোয়ালে। উপরের দিকে হালকা তেলচিটে দাগ। টেবিলে বেশ কিছু ফাইল, টুকিটাকি কাগজপত্র। দেখেই বোঝা যায়, সপ্তাহখানেক এ সবে হাত পড়েনি। ঘরটারও যেন মনখারাপ।

বৃহস্পতিবার বারবেলা পড়ার আগেই অবশ্য ছবিটা পাল্টে গেল। তত ক্ষণে চেয়ারের মালিকের খোঁজ মেলার খবর এসেছে। এত দিন তিনি কোথায় ছিলেন, কী ভাবে ছিলেন, তা পরিষ্কার নয়। কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন, মোটামুটি সুস্থও আছেন। এবং সেই খবর জানাজানি হওয়া মাত্র স্বস্তির হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছে গোটা জেলা প্রশাসনিক ভবনে।

গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দুপুরেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন নদিয়ায় একশো দিনের কাজের নোডাল অফিসার অর্ণব রায়। সেই থেকে তাঁর ঘরে বিশেষ কেউ ঢোকেনি। মাঝে-মধ্যে স্ত্রী তথা সহকর্মী অনীশা যশ ঢুকতেন। কিছু ক্ষণ ফাঁকা চেয়ারটার দিকে চেয়ে চোখের জল ফেলে ফিরে যেতেন। সেই ঘরে এত দিন পরে যেন আবার নতুন করে আলো ঝলমল করছে। শুধু ওই ঘরে নয়, গোটা জেলা প্রশাসনিক ভবনেই।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ঘরের দেওয়ালে পাখার সুইচ টিপে এক গাল হাসলেন দফতরের এক কর্মী। টেবিলের সামনে একটা চেয়ার টেনে বসতে-বসতেই বললেন, “কত দিন পরে একটু প্রাণ খুলে হাসছি। একটা দমবন্ধ অবস্থা চলছিল। কেবলই মনে হচ্ছিল, স্যারের খারাপ কিছু হয়ে যায়নি তো?” মিশুকে, চনমনে, কর্মনিষ্ঠ অর্ণব তাঁদের বেশির ভাগেরই পছন্দের মানুষ। লোকসভা নির্বাচনে জেলায় আসা ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট যন্ত্র সামলানোর মতো গুরুদায়িত্বও তাঁকেই দিয়েছিলেন জেলাশাসক।

সকালের খবরটা তাই এক ঝটকায় উড়িয়ে দিয়েছে এত দিনের আশঙ্কার মেঘ। এত দিন যে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মুখোমুখি হয়ে গেলে পাছে অর্ণবের প্রসঙ্গ ওঠে সেই আশঙ্কায় কার্যত পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করতেন, তিনিই একগাল হেসে বলেন, “শুনেছেন? অর্ণবকে পাওয়া গিয়েছে!” তার পরেই গলা নামিয়ে যোগ করেন, “আসলে, একটা ভয় তো কাজ করে। কোথা থেকে যে কী হয়ে যাচ্ছে, তা তো বোঝা যাচ্ছে না। তাই চুপ থাকতাম।”

সকালে প্রথম খবরটা পান অনীশাই। কলকাতা থেকে অর্ণবই তাঁকে ফোন করেছিলেন। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের খবর দিয়ে কলকাতার দিকে রওনা হয়ে যান অনীশা। যাওয়ার আগে বলে যান, “আমি শুধু চাইছিলাম, মানুষটা সুস্থ ভাবে ফিরে আসুক। সেটাই হয়েছে। আমি আগে ওর সঙ্গে কথা বলব।” সন্ধ্যায় তিনিই অর্ণবকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা থেকে কৃষ্ণনগরের দিকে রওনা দেন। জেলাশাসকের আপ্ত সহায়ক সত্যরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ক’দিন ধরে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে ছিল। এখন বেশ হালকা লাগছে।”

সকালেই জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত জানিয়েছিলেন, অর্ণব ফিরে এসেছেন। আছেন হাওড়ায় শ্বশুরবাড়িতে। ফোনের ও প্রান্তে তার গলার স্বরে অনেক দিন পরে চাপমু্ক্ত শুনিয়েছে। তিনি বকাঝকা করাতেই অর্ণব কর্মস্থল ছেড়ে চলে গিয়েছেন—নানা মহল থেকে এই অভিযোগ উঠছিল। তিনি যতই তা উড়িয়ে দিন, চাপটা ধরা পড়ছিল তাঁর গলাতেই। রাতে জেলাশাসক বলেন, ‘‘কে কী বলছে, কিছু আসে-যায় না। অর্ণব ভাল আছে, আমাকে ফোন করেছে, আমার সঙ্গে দেখা করতে আসছে, এটাই বড় কথা।’’

Missing Officer Case Lok Sabha Election 2019 Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy