Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

আধাসেনার রাশ টানুন, চিঠি রাজ্যের

প্রথম থেকে ষষ্ঠ পর্বের ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লাঠি ও গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ০৩:৪৪
Share: Save:

রাজ্যে সাত দফার ভোটে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার দাবির পাশাপাশি রাজনৈতিক মহল থেকে তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসছিল। এ বার প্রায় এক সুরে বাহিনীর আচরণ নিয়ে লিখিত ভাবে প্রশ্ন তুলল রাজ্য সরকারও। সোমবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) আরিজ আফতাবের কাছে দফাওয়াড়ি বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ দিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য।

স্বরাষ্ট্রসচিব একই সঙ্গে সিইও-কে কার্যত স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ভোট পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য প্রশাসনের উভয়ের হাতেই ন্যস্ত। তাই বাহিনী পরিচালনা, বিশেষ করে কুইক রিঅ্যাকশন টিম (কিউআরটি) পরিচালনায় রাজ্যের পুলিশ অফিসারদের বাদ রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হোক।

প্রথম থেকে ষষ্ঠ পর্বের ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লাঠি ও গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, ভাষাগত বোঝাপড়ার অভাব, এলাকা এবং সাধারণ ভোটারদের প্রয়োজন সম্পর্কে বাইরের রাজ্য থেকে আসা বাহিনীর জওয়ানদের সম্যক ধারণা নেই বলেই লাঠি বা গুলি চালানোর মতো ঘটনা ঘটেছে প্রায় প্রতিটি দফায়। ১৯ মে সপ্তম ও শেষ দফার ভোটের আগে তাই মুখ্য নির্বাচনী অফিসারকে চিঠি দিতে বাধ্য হল রাজ্য সরকার।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সিইও-র কাছে পাঠানো চিঠিতে স্বরাষ্ট্রসচিব লিখেছেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করতে দেখা গিয়েছে, যা কখনও কখনও ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের কাছে আসা রিপোর্ট অনুযায়ী চতুর্থ দফার ভোটে বীরভূমের পাড়ুই এবং দুবরাজপুরে গুলি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। ভোটকেন্দ্র থেকে ২০০ মিটার দূরে থাকা সত্ত্বেও নদিয়ার কয়েকটি জায়গায় সাধারণ মানুষের উপরে লাঠি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী।

চিঠিতে স্বরাষ্ট্রসচিবের অভিযোগ, পঞ্চম দফার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী হাওড়ার বর্তমান সাংসদের উপরে বলপ্রয়োগ করেছিল। অস্ত্র নিয়ে জওয়ানদের ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঢুকে পড়ার প্রমাণ রয়েছে রাজ্য প্রশাসনের হাতে। বাহিনীর সেই আচরণ আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধির সঙ্গে মানানসই নয়। এই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জওয়ানদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে অনুরোধ করা হয়েছিল, তাঁরা যেন ভোটের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে বুঝিয়ে দেন।

১২ মে, ষষ্ঠ দফার ভোটের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রসচিব চিঠিতে জানিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় লাঠি ও গুলি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ওই দিন গোপীবল্লভপুর, বিষ্ণুপুর, ময়না, ভগবানপুর এবং সবংয়ে গুলি চালানোর রিপোর্ট পেয়েছে প্রশাসন।

স্থানীয় পুলিশ অফিসারেরা যে কিউআরটি-কে পরিচালনা করেননি, স্বরাষ্ট্রসচিব তা জানিয়ে সিইও-কে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, এই পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশনের স্থির করে দেওয়া পরিকল্পনার পরিপন্থী। স্থানীয় পুলিশ অফিসারদের সাহায্য ছাড়া বাইরের রাজ্য থেকে আসা বাহিনীর পক্ষে ভোটের দায়িত্ব পালন করা কঠিন। স্থানীয় পুলিশ অফিসারেরা স্থানীয় ভাষা, এলাকার চরিত্র, সেখানকার কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত। কয়েকটি ক্ষেত্রে ফোন পাওয়ার পরেও আধ ঘণ্টার বেশি দেরিতে পৌঁছেছে কিউআরটি। কারণ, এলাকা সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণাই নেই।

সিইও-কে স্বরাষ্ট্রসচিব মনে করিয়ে দিয়েছেন, অতিরিক্ত বাহিনী এবং প্রশাসনের শক্তি বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়। কারণ, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচনের দায়িত্ব রয়েছে রাজ্য প্রশাসনেরও। সেই জন্য স্থানীয় পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে রাখা জরুরি। যাতে ভোটারদের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত থাকে। তাই কিউআরটি-তে স্থানীয় পুলিশ অফিসারকে না-রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। তাঁর অনুরোধ, ভোটারদের চাহিদা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অফিসার এবং জওয়ানেরা আরও সংবেদনশীল হলে বলপ্রয়োগের সম্ভাবনাও কমবে।

‘‘ওই চিঠি আমাকে দেওয়া হয়নি। তাই আমার কিছু বলার নেই,’’ বলেন বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় ভি নায়েক। সিইও অবশ্য জানান, নিজেদের মধ্যে আলোচনার পরে চিঠিটি নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে প্রশাসনিক সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্রসচিবের চিঠিটি নির্বাচন সদনে পাঠিয়ে দিয়েছে সিইও-র দফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE