Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Sandeshkhali Incident

সুকান্ত-হামলা: সংসদীয় বৈঠকে তিন পুলিশকর্তার পাশাপাশি তলব মুখ্যসচিব এবং জেলাশাসককেও

বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে হেনস্থার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৈঠক ডেকেছে লোকসভার স্বাধিকার রক্ষা কমিটি (প্রিভিলেজ কমিটি)। সেই বৈঠকে তলব করা হয়েছে রাজ্যের পাঁচ প্রশাসনিক কর্তাকে।

রাজীব কুমার, সুকান্ত মজুমদার এবং বিপি গোপালিক।

রাজীব কুমার, সুকান্ত মজুমদার এবং বিপি গোপালিক। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৩৭
Share: Save:

বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে হেনস্থার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৈঠক ডেকেছে লোকসভার স্বাধিকার রক্ষা কমিটি (প্রিভিলেজ কমিটি)। সেই বৈঠকে তলব করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ডিজিপি রাজীব কুমার-সহ তিন পুলিশকর্তাকে। এর পাশাপাশি ডেকে পাঠানো হয়েছে রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিক এবং উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক শরৎকুমার দ্বিবেদীকে।

বুধবার সন্দেশখালি যাওয়ার পথে বাধা পেয়েছিলেন সুকান্তেরা। শেষে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধের মাঝে পড়ে সাংসদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তাঁকে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি। অভিযোগ, সুকান্তকে হেনস্থা করা হয়েছে। তাতে সাংসদের প্রাণ সংশয়ও হতে পারত বলে দাবি করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতেই বাংলার ডিজি রাজীব, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার হোসেন মেহেদি রহমান এবং অতিরিক্ত সুপার পার্থ ঘোষকে তলব করা হয়েছে। এই মর্মে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে লোকসভার সচিবালয় থেকে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ওই তিন পুলিশকর্তাকে আগামী সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের ২ নম্বর কমিটি রুমে হাজির থাকতে হবে। উক্ত পুলিশকর্তারা যাতে সঠিক সময় সঠিক স্থানে পৌঁছে যান, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে অমিত শাহের মন্ত্রককে।

লোকসভার একটি সূত্রে খবর, স্বাধিকার রক্ষা কমিটির সদস্যদেরও একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠিতে রাজ্যের পাঁচ প্রশাসনিককর্তাকে ডেকে তলবের বিষয়টি জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, তিন পুলিশকর্তার পাশাপাশি মুখ্যসচিব ও উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসককেও ডেকে পাঠানো হয়েছে তাঁদের বক্তব্য শোনার জন্য।

সুকান্তের সঙ্গে রাজ্য পুলিশের টানাপড়েন শুরু হয়েছিল সেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, বসিরহাটে পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ দিয়ে। সুকান্ত দুপুরে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ট্রেনে চেপে বসিরহাট এসপি অফিসের সামনে পৌঁছে যান। সঙ্গে তাঁর অনুগামীরা। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে একটা সময়ে এগিয়েও যান তাঁরা। তখন পুলিশ লাঠি চালায় এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। উল্টো দিকে বিজেপির লোকজন ইট ছোড়ে বলেও দাবি। দু’পক্ষের একাধিক লোকজন জখম হন। সুকান্তের এক রক্ষীও জখম হন। পুলিশ সেখান থেকে সুকান্তকে বার করে নিয়ে আসে। এর কয়েক ঘণ্টা পরে সুকান্ত ফের ওই অফিসের সামনে গিয়ে ধর্নায় বসেন কয়েক জন সঙ্গীকে নিয়ে। পরে এসপি অফিসের সামনে থেকে তাঁদের তুলে দেওয়া হয়। দাবি, প্রথমে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়, পরে কিছু দূরে এনে ব্যক্তিগত বন্ডে ছেড়ে দেওয়া হয়। সুকান্ত রাতে টাকির একটি হোটেলে এসে ওঠেন।

বুধবার সরস্বতী পুজো ছিল। দলীয় সূত্রে খবর, সুকান্তরা ঠিক করেন, পুজো করবেন। এর মধ্যে টাকির সেই হোটেলের সামনে পুলিশে ছয়লাপ হয়ে যায়। বিজেপি কর্মীরা সরস্বতীর দু’টি মূর্তি নিয়ে হোটেলে ঢোকেন। পরে কয়েক জন একটি মূর্তি নিয়ে সামনের দরজা দিয়ে বার হতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের বচসা শুরু হয়। অন্য দিকে, পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে সুকান্ত হোটেলের পিছনের দরজা দিয়ে অন্য মূর্তিটি নিয়ে বার হন। ইছামতীর পাড়ে পুজোও করেন। সেখানেও পুলিশ ঘিরে ছিল তাঁকে। সেখান থেকে হোটেলে ফেরার সময় ফের গোলমাল বাঁধে। হোটেলের সামনে পুলিশের গাড়ি দিয়েই পথ আটকানো ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, আচমকা সুকান্ত পুলিশের একটি গাড়ির উপরে উঠে স্লোগান দিতে শুরু করেন। এক মহিলা কনস্টেবল তাঁকে নামাতে এগিয়ে আসেন। বিজেপির লোকজন আপত্তি করেন। তখন অন্য এক পুলিশকর্মী সুকান্তকে গাড়ির বনেটে দাঁড়ানো সুকান্তকে টেনে নামানোর চেষ্টা করলে এক মহিলা বিজেপি কর্মী ওই পুলিশ কর্মীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এই সময়ে দু’দিকের টানাটানিতে বনেটের উপরে পড়ে যান সুকান্ত। টানাটানির মধ্যেই তাঁকে নীচে নামিয়ে আনা হয়।

এর পরেই লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। বিজেপির দাবি, লাঠির ঘায়ে জখম ও অসুস্থ হয়ে পড়েন সুকান্ত। তাঁর নিরাপত্তায় থাকা সিআইএসএফ জওয়ানরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ওই গাড়িতে করেই (যার বাইরের একটি কাচ বিজেপির ধাক্কায় ভেঙেছে, দাবি পুলিশের) সুকান্তকে বসিরহাট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসায় অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তরিত করানো হয়। পুরো সময়ে তাঁকে অক্সিজেন দিতে দেখা গিয়েছে।

কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে নিউরোলজি বিভাগে সুকান্তের চিকিৎসা চলছে বর্তমানে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুধবার রাতে এমআরআই করা হয়েছিল। তার আগে সিটি স্ক্যানও হয়েছিল তাঁর। চোটের কারণে মূলত কোমরে সমস্যা ধরা পড়েছে। আরও চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে সুকান্তের। চিকিৎসকেরা সব পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁকে তরল খাবার খেতে দেওয়া হচ্ছে। স্নায়ুর চিকিৎসা চলবে তাঁর। বৃহস্পতিবার সকালেও তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন সুকান্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sandeshkhali Incident Sukanta Majumdar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE