Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ফের সেই মৃত্যুরহস্য

পিয়ালির অতিথি তালিকা সিবিআই নজরে

আড়াই বছর আগে রাজারহাটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে এক যুবতীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের খবর আমজনতার আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল। ওই অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে তদন্ত শেষ করে দিয়েছিল বিধাননগর পুলিশ। সেই ঘটনাটি এত দিন পরে ফের আতসকাচের তলায় ফেলেছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা।

সুনন্দ ঘোষ ও শুভাশিস ঘটক
শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২১
Share: Save:

আড়াই বছর আগে রাজারহাটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে এক যুবতীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের খবর আমজনতার আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল। ওই অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে তদন্ত শেষ করে দিয়েছিল বিধাননগর পুলিশ। সেই ঘটনাটি এত দিন পরে ফের আতসকাচের তলায় ফেলেছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। আর তাতেই উঠে এসেছে সারদা মামলায় অভিযুক্ত প্রভাবশালীদের সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য।

ওই যুবতীর নাম পিয়ালি মুখোপাধ্যায়, সারদার প্রাক্তন আইনি পরামর্শদাতা। ২০১৩ সালের ২৬ মার্চ রাজারহাটের একটি ফ্ল্যাট থেকে ২৮ বছরের পিয়ালির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এই মৃত্যু নিয়ে বিস্তর হইচই হলেও বিধাননগর পুলিশ এটিকে নিছক আত্মহত্যার ঘটনা বলেই তদন্ত শেষ করে দেয়। যদিও পিয়ালির ফ্ল্যাট থেকে কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি।

তদন্তকারীদের দাবি, পিয়ালি যে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন, সে সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গিয়েছে। বৃহস্পতিবার মদন মিত্রের জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে এই তথ্যের কিছু অংশ কলকাতা হাইকোর্টে পেশও করেছেন সিবিআইয়ের আইনজীবী।

এত দিন পরে কেন ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে শুরু করল সিবিআই? তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, ‘‘রোজ ভ্যালি ও সারদার টাকায় মদন মিত্র শহরের পাঁচতারা হোটেলে একাধিক বার রাত্রিবাস করেছেন। ওই সময়ে মদনের আশেপাশে দেখা গিয়েছে ওই যুবতীকে। এই জন্যই আমরা তাঁর সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু করি।’’ প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এবং হোটেলের নথি উদ্ধার করে পিয়ালি সম্পর্কে নানা তথ্য পান তদন্তকারীরা। জানা যায়, সারদার আইনি পরামর্শদাতার পদ পাওয়ার মতো অভিজ্ঞতা আদৌ ছিল না সদ্য আইন পাশ করা পিয়ালির। তদন্তকারীদের দাবি, মদন মিত্রের নির্দেশেই যে পিয়ালি সারদায় মাসে এক লক্ষ টাকা বেতনের চাকরিটি পেয়েছিলেন, তার অনেক তথ্যই পেয়েছেন তাঁরা। এত অভিজ্ঞ আইনজীবী থাকতে পিয়ালির মতো আনকোরাকে মোটা বেতনে নিয়োগ করার বিষয়টি স্বাভাবিক বলে মনে হয়নি তদন্তকারীদের। সিবিআই সূত্রের খবর, এর পরেই তাঁরা পিয়ালির মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখেন, মৃত্যুর আগের দশ দিনে তিনি মদন মিত্রকে মোট ৭৫ বার ফোন করেছিলেন। এই কল-লিস্ট এখন তদন্তকারীদের হাতে। কেন এত বার পিয়ালি মন্ত্রীকে ফোন করলেন? জানতে গিয়ে আরও তথ্য হাতে আসে সিবিআইয়ের। তদন্তকারীরা জানান— শুধু মদন মিত্র নন, রাজ্যের আরও কয়েক জন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গেও নিত্য ওঠাবসা ছিল পিয়ালির। তাঁদের অনেকেই তাঁর রাজারহাটের ফ্ল্যাটেও আসতেন বলে তথ্য মিলেছে।

সিবিআইয়ের দাবি, মৃত্যুর কয়েক দিন আগে শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে উঠেছিলেন পিয়ালি। চার দিন তিনি ওই হোটেলে ছিলেন। ওই সময়ে তাঁর এক বান্ধবীও সঙ্গে ছিলেন বলে জেনেছে সিবিআই। ওই বান্ধবীও অনেক তথ্য দিয়েছেন। সিবিআইয়ের এক অফিসার বলেন, ‘‘পিয়ালি যে ওই সময়ে খুন হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন, তা তিনি কয়েক জনকে বলেছিলেন। মানুষের কাছাকাছি থাকতে চাইছিলেন পিয়ালি। তাঁকে হোটেলের সুইমিং পুলের পাশেই বেশির ভাগ সময়
দেখা যাচ্ছিল।’’ তদন্তকারীরা জেনেছেন, চার দিন পরে হোটেলের বিল নিজেই মিটিয়ে দিয়েছিলেন পিয়ালি। কিন্তু তিনি কী করে মদন মিত্রের সংস্পর্শে এলেন?

তদন্তকারীরা জানান, পিয়ালি ছিলেন বর্ধমানে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেত্রী। আইন পাশ করে তিনি কাজ শুরু করেন। ওই সময়ে তিনি বিয়েও করেন। তাঁর একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। এক সময়ে বর্ধমান জেলায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষকের পদে ছিলেন মদন মিত্র। রাজনীতির সূত্র ধরেই মদন মিত্রের সঙ্গে পিয়ালির পরিচয়। পরে পিয়ালি তাঁর পরিবারকে বর্ধমানে রেখে দক্ষিণ কলকাতায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে চলে আসেন। ব্যাঙ্কশাল কোর্টে এক আইনজীবীর জুনিয়ার হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি। তার পর মদনের সুপারিশে মাসে এক লক্ষ টাকা বেতনে সারদায় চাকরি পাওয়ার পর তিনি দক্ষিণ কলকাতার ভাড়াবাড়ি ছেড়ে উঠে যান রাজারহাটে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। ওই সময়েই রাজ্যের বেশ কয়েক জন মন্ত্রীকে মাঝেমধ্যেই পিয়ালির ফ্ল্যাটে দেখা যেত বলে খবর। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সারদায় কী কাজ করতেন পিয়ালি তা জানার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে সারদার কর্মীরা কেউই বিশেষ আলোকপাত করতে পারেননি।

এ সব তথ্য সংগ্রহের পরে সিবিআইয়ের অফিসারদের ধারণা, পিয়ালির অস্বাভাবিক মৃত্যুর পিছনে অন্য রহস্য রয়েছে। এক সিবিআই কর্তা বলেন, ‘‘ঘটনার সঙ্গে যুক্ত এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সঙ্গে কথা চলছে। আরও কিছু তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছি। সব হাতে পেলে বিস্তারিত রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE