Advertisement
E-Paper

রোজ ভ্যালি, আইকোরের সঙ্গেও হৃদ্যতা ছিল মদনের

তাঁর ‘বিশেষ ঘনিষ্ঠ’ এক যুবতীকে সারদায় আইনি পরামর্শদাতার পদে বসিয়েছিলেন নিজের প্রভাব খাটিয়ে। রোজ ভ্যালির কর্ণধারের সঙ্গে পাঁচতারা হোটেলে থেকেছেন তিনি। পরিবহণমন্ত্রী হিসেবে তাঁরই বদান্যতায় অনুমোদন পেয়েছিল রোজ ভ্যালির সমস্ত গাড়ি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২০

তাঁর ‘বিশেষ ঘনিষ্ঠ’ এক যুবতীকে সারদায় আইনি পরামর্শদাতার পদে বসিয়েছিলেন নিজের প্রভাব খাটিয়ে।

রোজ ভ্যালির কর্ণধারের সঙ্গে পাঁচতারা হোটেলে থেকেছেন তিনি। পরিবহণমন্ত্রী হিসেবে তাঁরই বদান্যতায় অনুমোদন পেয়েছিল রোজ ভ্যালির সমস্ত গাড়ি।

আইকোরের অন্যতম ডিরেক্টর পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন তাঁর ছেলে স্বরূপ।

সারদা কাণ্ডে ধৃত বন্দির জামিনের শুনানি। সেখানে অন্য লগ্নি সংস্থার নাম শুনে প্রথমে আপত্তিই তুলেছিলেন হাইকোর্টের দুই বিচারপতি। আপত্তি তুলেছিলেন অভিযুক্তের আইনজীবী কপিল সিব্বলও। যার উত্তরে সিবিআইয়ের আইনজীবী কনবুরি রাঘবচারুলু বললেন, মদন মিত্রের প্রভাব বোঝানোর জন্যই এই সমস্ত তথ্য আদালতকে জানানো হচ্ছে। তথ্যগুলি খতিয়ে দেখলে মদনের ‘চরিত্র’ বোঝা যাবে।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, মদনের বিরুদ্ধে উপরের প্রত্যেকটি অভিযোগের প্রমাণ তাদের কাছে আছে। যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, সারদার পাশাপাশি বেআইনি ভাবে টাকা তোলা বেশ কয়েকটি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে সরাসরি ওঠাবসা ছিল রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রীর। ছিল ‘লেনদেন’ও। এই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যপ্রমাণ বৃহস্পতিবার তারা আদালতে জমা দিয়েছে।

দিল্লি থেকে উড়ে আসা দুঁদে আইনজীবী সিব্বল অবশ্য সহজে ছাড়তে চাননি। অন্যান্য লগ্নি সংস্থার নাম তোলা নিয়ে তিনি আপত্তি জানালে রাঘবচারুলু সিব্বলকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি তো দিল্লিতে থাকেন। সেখানেই আপনার বাড়ি। আপনি কি দিল্লিতে কখনও হোটেলে গিয়ে থেকেছেন? তা হলে ভেবে দেখুন, কলকাতায় বাড়ি থাকা সত্ত্বেও কেন মন্ত্রী মদন মিত্র মাঝেমধ্যে কলকাতারই হোটেলে গিয়ে থেকেছেন?’’

আদালতে জমা দেওয়া তথ্যে সিবিআই জানিয়েছে, শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েক বার রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে রাত্রিবাস করেছেন মদন (দু’জনেই অবশ্য এখন জেল হেফাজতে)। এর মধ্যে দু’এক বার মদনের তৎকালীন আপ্ত সহায়ক রেজাউল ওরফে বাপি করিমও ওই হোটেলে তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। বস্তুত, মদনের সঙ্গে সারদা, রোজ ভ্যালি কিংবা আইকোরের মতো সংস্থার ঠিক কী রকম সম্পর্ক ছিল, বাপিকে জেরা করেই তা বিশদে জানা গিয়েছে বলে দাবি সিবিআইয়ের।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার নথি বলছে, একটি পাঁচতারা হোটেলে বৈঠকের পরে রোজ ভ্যালির সঙ্গে পরিবহণমন্ত্রীর কয়েক কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। পরে সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র জেরার মুখে গৌতম নিজেই সেই লেনদেনের কথা স্বীকার করেছেন। এবং সেই সূত্রেই জানা গিয়েছে, নিজেদের সমস্ত গাড়ির অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে মদনের সাহায্য পেয়েছিল রোজ ভ্যালি।

সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, বাইপাসের ধারের একটি বিলাসবহুল হোটেল ছাড়াও মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার আরও কয়েকটি পাঁচতারা হোটেলে এ ভাবে বেশ কয়েক বার থেকেছেন মদন। এক-এক রাতে লক্ষাধিক টাকার বিদেশি পানীয় সেবন করেছেন। সিবিআইয়ের দাবি, প্রতি বারেই সেই থাকা-খাওয়ার বিশাল অঙ্কের বিল মিটিয়েছে সারদা-রোজ ভ্যালির মতো সংস্থা।

সারদায় মোটা বেতনের ‘আইনি পরামর্শদাতা’ পদে মদনের ঘনিষ্ঠ যে যুবতীকে বসানো হয়েছিল, তিনি পরে রাজারহাটের একটি ফ্ল্যাটে অস্বাভাবিক ভাবে মারা যান। ওই যুবতীর মাধ্যমেই সারদার টাকা সরানো হয়েছে বলে সিবিআই এ দিন আদালতে নথি পেশ করেছে। একই সঙ্গে মদনের ছেলে স্বরূপ যে আইকোরের অন্যতম ডিরেক্টর পদে বসেছিলেন, সেই তথ্যও আদালতকে জানিয়েছেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। স্বরূপ অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

সিবিআইয়ের আইনজীবী রাঘবচারুলু বলেন, ‘‘এই সব তথ্য থেকেই বোঝা যায়, সেই সময়ে রাজ্যে যতগুলি অর্থলগ্নি সংস্থা বেআইনি ভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলছিল, তাদের বেশ কয়েকটির সঙ্গে মদন মিত্রের সরাসরি ওঠাবসা ছিল। এর মধ্যে সারদা সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ আগেই আদালতে পেশ করা হয়েছে, এ বার রোজ ভ্যালি ও আইকোর সংক্রান্ত কিছু তথ্যও পেশ করা হল।’’

Madan Mitra Rose Valley Icore chit fund kunal ghosh kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy